বিশেষভাবে উত্তরাঞ্চলের প্রদেশ রোরাইমা, অ্যাকরি, রোন্ডোনিয়া ও আমাজোনাসের পাশাপাশি মাতো গ্রসো দো সোল সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
তো আসলে কী হচ্ছে এবং আগুনের পরিস্থিতি কতটা খারাপ?
চলতি বছরে অনেকগুলো অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। ব্রাজিলের আমাজন বনাঞ্চলে ২০১৯ সালে রেকর্ড সংখ্যক আগুন লেগেছে বলে দেশটির মহাকাশ গবেষণা সংস্থার তথ্য বলছে।
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্পেস রিসার্চ (ইনপে) জানায়, তাদের স্যাটেলাইটের তথ্যে দেখা যাচ্ছে যে ২০১৮ সালের একই সময়ের তুলনায় আগুন লাগার হার ৮৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
সরকারি হিসেবে, চলতি বছরের প্রথম আট মাসে ব্রাজিলে বনাঞ্চলে ৭৫ হাজারের অধিক আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। ২০১৩ সালের পর এটিই সর্বোচ্চ সংখ্যা। সেই তুলনায় ২০১৮ সালে পুরো বছরে আগুন লেগেছিল ৩৯ হাজার ৭৫৯টি।
জুলাই থেকে অক্টোবরের শুষ্ক মৌসুমে আমাজনে দাবানল সৃষ্টি হওয়া সাধারণ ঘটনা। এগুলো বজ্রপাতের মতো প্রাকৃতিক কারণে যেমন ঘটে তেমনি কৃষি ও পশুচারণ ভূমি তৈরির জন্য কৃষক ও কাঠুরেরা ভূমি পরিষ্কার করতে আগুন দেয়।
এদিকে, ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জেইর বোলসোনারো দীর্ঘদিন ধরে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে আসছেন। তিনি অভিযোগ করেছেন যে তার সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে এনজিওগুলো নিজেরা বনে আগুন দিয়েছে।
পরে তিনি জানান, দাবানল নিয়ন্ত্রণে তার সরকারের উপকরণে ঘাটতি রয়েছে।
সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ব্রাজিলের উত্তরাঞ্চল
সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা উত্তরাঞ্চল। গত চার বছর (২০১৫-২০১৮) জুড়ে গড়ের তুলনায় রোরাইমা, অ্যাকরি, রোন্ডোনিয়া ও আমাজোনাসে দাবানলের ঘটনা সবচেয়ে বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে।
আগুনের ঘটনা রোরাইমাতে ১৪১ শতাংশ, অ্যাকরিতে ১৩৮ শতাংশ, রোন্ডোনিয়াতে ১১৫ শতাংশ ও আমাজোনাসে ৮১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। আর দক্ষিণ দিকের মাতো গ্রসো দো সোলে বৃদ্ধির হার ছিল ১১৪ শতাংশ।
ব্রাজিলের সর্ববৃহৎ প্রদেশ আমাজোনাসে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে।
আগুনের কারণে বিপুল পরিমাণ ধোঁয়া ও কার্বন নির্গত হচ্ছে। ধোঁয়া পুরো আমাজন অঞ্চল ও আশপাশে ছড়িয়ে গেছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের কোপার্নিকাস অ্যাটমোস্ফিয়ার মনিটরিং সার্ভিস (ক্যামস) জানায়, ধোঁয়া আটলান্টিক উপকূল পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। এমনকি তিন হাজার ২০০ কিলোমিটারের অধিক দূরের সাও পাওলোর আকাশও অন্ধকার হয়ে গেছে।
দাবানল থেকে বিপুল পরিমাণ কার্বন ডাই অক্সাইড নিঃসরণ হচ্ছে। চলতি বছরে যার পরিমাণ এখন পর্যন্ত ২২৮ মেগাটনের মতো, যা ২০১০ সালের পর সর্বোচ্চ বলে জানিয়েছে ক্যামস।
সেই সাথে কার্বন মনো অক্সাইডও নির্গত হচ্ছে। কাঠ পুড়লে এবং অক্সিজেনের যথেষ্ট উপস্থিতি না থাকলে এ গ্যাসের সৃষ্টি হয়।
ক্যামসের মানচিত্রে দেখা যায়, উচ্চ মাত্রার বিষাক্ত কার্বন মনো অক্সাইড দক্ষিণ আমেরিকার উপকূল ছাড়িয়ে গেছে।
আমাজন অববাহিকা প্রায় ৩০ লাখ প্রজাতির উদ্ভিদ ও প্রাণী এবং ১০ লাখ আদিবাসীর আবাসস্থল। এখানকার বনাঞ্চল প্রতিবছর লাখ লাখ টন নিঃসরণ হওয়া কার্বন শোষণ করে বৈশ্বিক তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। কিন্তু যখন গাছ কাটা বা পুড়িয়ে ফেলা হয় তখন তাতে জমা থাকা কার্বন বায়ুমণ্ডলে মুক্ত হয়ে যায়। সেই সাথে নিঃসরণ হওয়া কার্বন শোষণে বনাঞ্চলের সক্ষমতা হ্রাস পায়।
আগুনে অন্যান্য দেশও আক্রান্ত
৭৪ লাখ বর্গকিলোমিটার আয়তনের আমাজন অববাহিকার আরও অনেক দেশে চলতি বছরে আগুন লাগার ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। ভেনেজুয়েলায় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৬ হাজারের অধিক অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। তৃতীয় স্থানে থাকা বলিভিয়ায় এ সংখ্যা ছিল ১৭ হাজারের বেশি।