গাজায় ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে প্রায় ৯ মাস ধরে চলা যুদ্ধে ফিলিস্তিনি নিহতের সংখ্যা ৩৮ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) এই তথ্য জানিয়েছে গাজার হামাস নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ৫৮ জনের লাশ হাসপাতালে আনায় মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৮ হাজার ১১ জনে।
চলমান এই যুদ্ধে আরও ৮৭ হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়েছে বলে জানিয়েছে তারা।
হতাহতদের মধ্যে কতজন সামরিক ও বেসামরিক তা স্পষ্ট করে জানাতে পারেনি মন্ত্রণালয়। তবে নিহতদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু বলে জানা গেছে।
এদিকে গাজায় পর্যায়ক্রমে যুদ্ধবিরতির জন্য মার্কিন সমর্থিত প্রস্তাবের সর্বশেষ প্রতিক্রিয়া নিয়ে বৃহস্পতিবার ইসরায়েলের মন্ত্রিসভা বৈঠক করার কথা ছিল। কারণ, ৯ মাসের যুদ্ধ অবসানের লক্ষ্যে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা এক সপ্তাহের বিরতির পর আবারও শুরু হয়েছে।
আরও পড়ুন: গাজায় ইসরায়েলের ‘যুদ্ধ-পরবর্তী পরিকল্পনা’ হামাসের প্রত্যাখ্যান
অন্যদিকে, ইসরায়েল ও লেবাননের হিজবুল্লাহর মধ্যে যুদ্ধ আরও বেড়েছে। সশস্ত্র গোষ্ঠীটি বলেছে তারা আগের দিন ইসরায়েলি বিমান হামলায় একজন সিনিয়র কমান্ডার হত্যার প্রতিশোধ নিতে উত্তর ইসরায়েলে ২০০টিরও বেশি রকেট ও ড্রোন হামলা চালিয়েছে।
তুলনামূলকভাবে সংঘাত কম হলেও সীমান্তে উত্তেজনা বাড়িয়েছে। যা মধ্যপ্রাচ্যকে আরও ভয়ংকর যুদ্ধের দিকে ঠেলে দিয়েছে। ইরান সমর্থিত হিজবুল্লাহ বলেছে, মিত্র হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি হলে তারা হামলা বন্ধ করবে।
দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধবিরতি ও গাজা থেকে ইসরায়েলি বাহিনী প্রত্যাহারের বিনিময়ে হামাসের হাতে আটক জিম্মিদের সবাইকে মুক্তি দেওয়ার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বিশ্বের সমর্থন পেয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো পক্ষই তা পুরোপুরি মেনে নেয়নি।
হামাস গত মাসে যুদ্ধবিরতির শর্ত ‘সংশোধনের’ প্রস্তাব করেছিল। তবে যুক্তরাষ্ট্র সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ না করে কয়েকটি বিষয়কে অকার্যকর বলেছে। মূল প্রস্তাবটি ইসরায়েলের ছিল বলে নিশ্চিত করেছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তবে এটি যুদ্ধ সমাপ্ত করবে কি না তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছে। যা হামাসের দাবিগুলোর মধ্যে একটি প্রধান দাবি।
আলোচনায় মধ্যস্থতাকারী মিশর ও কাতারকে আরেকটি বার্তা পাঠিয়েছে বলে বুধবার নিশ্চিত করেছে হামাস। যুক্তরাষ্ট্রের এক কর্মকর্তা বলেছেন, বাইডেন প্রশাসন প্রতিক্রিয়াটি পরীক্ষা করে দেখছে, এটিকে গঠনমূলক বলে অভিহিত করেছে তবে আরও কাজ করা দরকার বলে জানিয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা এ কথা বলেন।
আরও পড়ুন: দক্ষিণ গাজায় রাতভর ইসরায়েলি হামলায় ৯ ফিলিস্তিনি নিহত
ইসরায়েলের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, আলোচনাকে ঘিরে সর্বশেষ অগ্রগতি নিয়ে আলোচনার জন্য নেতানিয়াহু বৃহস্পতিবার মন্ত্রিসভার বৈঠক আহ্বান করবেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই কর্মকর্তা এ কথা বলেন। সংশোধিত প্রস্তাবের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে ইসরায়েল সম্ভবত আরও পরামর্শ করবে।
হামাসের রাজনৈতিক কর্মকর্তা বাসেম নাঈম বলেছেন, তারা আমেরিকার প্রস্তাব গ্রহণ বা প্রত্যাখ্যান করেনি এবং দু'পক্ষের মধ্যকার ব্যবধান কমানোর জন্য কিছু ধারণা দিয়ে সাড়া দিয়েছে। হামাসের শীর্ষ রাজনৈতিক নেতা ইসমাইল হানিয়া মিশরীয়, কাতার ও তুর্কি কর্মকর্তাদের সঙ্গে পরামর্শ বিনিময় করেছেন বলে বুধবার রাতে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে মধ্যস্থতাকারী গ্রুপটি।
গত ৭ অক্টোবর হামাস যোদ্ধারা ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলের একাধিক সেনা ঘাঁটি ও কৃষক সম্প্রদায়ের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। এতে প্রায় ১ হাজার ২০০ মানুষ নিহত হন। এসময় আরও ২৫০ জনকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যায় হামাস। যাদের মধ্যে ১০০ জনেরও বেশি ইসরায়েলিকে নভেম্বরে সপ্তাহব্যাপী যুদ্ধবিরতির সময় মুক্তি দেওয়া হয়েছে। হামাসের হাতে এখনও প্রায় ৮০ জন জিম্মি এবং ৪০ জনের লাশ রয়েছে।
গাজার স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের মতে, ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া হামলায় ৩৭ হাজর ৯০০ এরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এই যুদ্ধের ফলে গোটা অঞ্চল জুড়ে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে ইসরায়েল। ফলে গাজার ২৩ লাখ জনসংখ্যার বেশিরভাগই বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। বাসিন্দারা ব্যাপক ক্ষুধা ও সংকটের মধ্যে পড়েছেন। যা চরম দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা বাড়িয়ে তুলেছে।