তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে এখন পর্যন্ত ভারতে ১৭০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে আবার ঘন ঘন বিদ্যুৎ বিভ্রাট অবস্থা আরও শোচনীয় করে তুলেছে।
দেশটির সবচেয়ে জনবহুল দু’টি রাজ্যের হাসপাতালগুলো তীব্র তাপপ্রবাহে অসুস্থ রোগীতে পূর্ণ। এমনকি একটি মর্গ ধারণক্ষমতায় পৌঁছেছে।
স্থানীয় সংবাদ প্রতিবেদন এবং স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের তথ্যমতে, উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্য উত্তর প্রদেশে গত কয়েক দিনে তাপজনিত অসুস্থতায় ১১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং পার্শ্ববর্তী রাজ্য বিহারে ৪৭ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
উত্তরপ্রদেশের বালিয়া জেলা থেকে ১১০ কিলোমিটার দূরে দেওরিয়া শহরের একটি লাশবাহী গাড়িরচালক জিতেন্দ্র কুমার যাদব অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে (এপি) বলেন, ‘গরমে এত মানুষ মারা যাচ্ছে যে আমরা বিশ্রামের জন্য এক মিনিটও সময় পাচ্ছি না। রবিবার আমি ২৬টি লাশ বহন করেছি।’
আরও পড়ুন: তীব্র ঘূর্ণিঝড় ‘বিপর্যয়’: মোকাবিলায় প্রস্তুতি নিচ্ছে ভারত ও পাকিস্তান
ওই এলাকার অন্য বাসিন্দারা জানিয়েছেন যে তারা মধ্যসকালের পরে বাইরে যেতে ভয় পাচ্ছেন।
উত্তর প্রদেশের বালিয়া জেলার বৃহত্তম হাসপাতালটি নতুন আরও কোনো রোগীকে জায়গা দিতে পারছে না।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তাপপ্রবাহে বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যায় আক্রান্ত ৫৪ জন বৃদ্ধের মৃত্যুর পর মর্গটি পূর্ণ হয়ে যায়। কিছু পরিবারকে তাদের স্বজনদের লাশ বাড়িতে নিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
রবিবার রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ব্রজেশ পাঠক বলেন, দুই সদস্যের একটি কমিটি কেন এত সংখ্যক মৃত্যু হয়েছে তার কারণ খতিয়ে দেখবে এবং এর মধ্যে সরাসরি তাপপ্রবাহের কারণে এই মৃত্যুগুলো হয়েছে কি-না তাও তদন্ত করবে।
ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যানুসারে, গ্রীষ্মের সময় দেশটির উত্তরাঞ্চলে প্রচণ্ড গরম পড়ে। তবে তাপমাত্রা এবার স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি, মোটামুটি ৪৩ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছেছে। যদি তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে কমপক্ষে ৪ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি হয় বা তাপমাত্রা ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি হয় তবে তা তাপপ্রবাহ হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
আরও পড়ুন: জি-২০ উন্নয়ন মন্ত্রীদের বৈঠকে যোগ দিতে ভারত সফরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী
ক্রমাগত তাপপ্রবাহের কারণে ওই অঞ্চলজুড়ে দেখা দিয়েছে বিদ্যুৎ বিভ্রাট ও পানির সংকট। ফলে এলাকাবাসীকে অধিকাংশ সময় ফ্যান বা এয়ার কন্ডিশনার ছাড়াই থাকতে হচ্ছে।
উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ বলেছেন, সরকার নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য ব্যবস্থা নিচ্ছে। তিনি নাগরিকদের সহযোগিতা করার এবং পরিমিত বিদ্যুৎ ব্যবহারের আহ্বান জানান।
জরুরি বিভাগের একজন মেডিকেল অফিসার ডা. আদিত্য সিং বলেন, ‘আমাদের সমস্ত কর্মীরা এখানে টানা তিনদিন ধরে রয়েছেন এবং সবাই অতিরিক্ত কাজ করে যাচ্ছেন।’
তিনি আরও বলেন, হাসপাতালের ওয়ার্ডগুলোতে কোনো কার্যকর এয়ার কন্ডিশনার নেই এবং যেসব কুলিং ইউনিট রয়েছে সেগুলো বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে সঠিকভাবে কাজ করছে না। ফলে কর্মচারীরা বই দিয়ে রোগীদের বাতাস করছেন।
আরও পড়ুন: সিগন্যালিং সিস্টেমের ত্রুটির কারণে প্রাণঘাতী এই ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটেছে: ভারতের রেলমন্ত্রী