ভারতের কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীকে বৃহস্পতিবার দুই বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন সুরাটের একটি আদালত।
ভারতীয় গণমাধ্যম এএনআইয়ের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৯ সালে এক নির্বাচনী সমাবেশে দেশটির বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নাম নিয়ে 'অবমাননাকর' মন্তব্যের জন্য দায়ের করা মানহানির মামলায় তাকে এই কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।
তবে, আদালত জামিনে রাহুল গান্ধীর জামিন মঞ্জুর করেছেন এবং তাকে উচ্চ আদালতে আপিল করার অনুমতি দিয়ে ৩০ দিনের জন্য সাজা স্থগিত করেছেন।
রায়ের পরে বিজেপি নেতারা রাহুল গান্ধীকে আক্রমণ করে বলেন, তিনি (রাহুল) যাই বলুন না কেন তা কংগ্রেস দল এবং দেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
অন্যদিকে, কংগ্রেস নেতারা বলছেন যে বিজেপি সরকার রাহুল গান্ধীর কণ্ঠস্বরকে দমন করার চেষ্টা করছে এবং তিনি রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাবেন।
কংগ্রেস নেতারা আরও অভিযোগ করেন, বিচার বিভাগ চাপের মধ্যে রয়েছে।
দলের প্রধান মল্লিকার্জুন খাড়গে সহ কয়েকজন কংগ্রেস নেতা এই মামলায় বিচারক পরিবর্তনের কথা উল্লেখ করেছেন।
আরও পড়ুন: রাহুল গান্ধীকে আটকের পর ছেড়ে দিল দিল্লি পুলিশ
অন্যদিকে, রায়ের কয়েক ঘন্টা পরেই ভিনীত জিন্দাল নামক সুপ্রিম কোর্টের একজন আইনজীবী, লোকসভার স্পিকারের কাছে কারাদণ্ডের জন্য রাহুল গান্ধীকে হাউস থেকে অযোগ্য ঘোষণা করার অভিযোগ করেন।
রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে ফৌজদারি মানহানির মামলা করেছেন সুরাট পশ্চিমের বিজেপি বিধায়ক পূর্ণেশ মোদি।
২০১৯ সালের এপ্রিল মাসে কর্ণাটকের কোলারে একটি লোকসভা নির্বাচনী সমাবেশে রাহুল গান্ধী বলেন, ‘সব মোদিরা কেন চোর হয়?’
গত সপ্তাহে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এইচ এইচ ভার্মার আদালত উভয় পক্ষের চূড়ান্ত যুক্তি শুনানি শেষ করেন এবং চার বছরের পুরনো এই মানহানির মামলায় রায় ঘোষণার জন্য ২৩ মার্চ দিন ধার্য করেন।
রায় ঘোষণার সময় ওয়ানাডের সাংসদ রাহুল গান্ধী অন্যান্য কংগ্রেস নেতাদের সঙ্গে আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
গুজরাটের প্রাক্তন মন্ত্রী পূর্ণেশ মোদি আদালতের রায়কে স্বাগত জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, আমি আদালতের রায়কে স্বাগত জানাই।
আরও পড়ুন: অর্থ পাচারের অভিযোগে রাহুল গান্ধীকে তলব
পূর্ণেশ মোদীর আইনজীবী কেতন রেশমওয়ালা বলেছেন, রাহুল গান্ধীকে আইপিসির ৪৯৯ এবং ৫০০ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে।
রাহুল গান্ধী গত বছরের জুনে ন্যাশনাল হেরাল্ড মামলায় দুর্নীতির অভিযোগে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হয়েছিলেন।
এই মামলায় দলের প্রাক্তন প্রধান সোনিয়া গান্ধীকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।
২০১৫ সালের ডিসেম্বরে দিল্লির একটি আদালত মামলায় এই দুই নেতাকে জামিন দিয়েছিলেন।
রাহুল গান্ধীর প্রপিতামহী ইন্দিরা গান্ধীও আদালতের প্রতিকূল রায়ের মুখোমুখি হয়েছিলেন এবং ১৯৭৫ সালের জুন মাসে এলাহাবাদ হাইকোর্টে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর ছয় বছরের জন্য কোনো নির্বাচিত পদে থাকা থেকে বিরত ছিলেন।
এই রায়ের ফলে জরুরি অবস্থা জারি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ইন্দিরা গান্ধীকে নির্বাচনী অসদাচরণের জন্য দোষী সাব্যস্ত করার সময়, বিচারপতি জগমোহনলাল সিনহা তাকে সংসদ থেকে অযোগ্য ঘোষণা করেন এবং তার ওপর যে কোনও নির্বাচিত পদে থাকার ব্যাপারে ছয় বছরের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন।
আরও পড়ুন: প্রিয়াঙ্কার অবৈধ গ্রেপ্তার যোগী সরকারের ক্রমবর্ধমান নিরাপত্তাহীনতার প্রকাশ: রাহুল গান্ধী