গত সপ্তাহের তুলনায় দেশের বাজারে শাক-সবজি, ডিম, ব্রয়লার মুরগি ও চালের দাম কিছুটা কমেছে। তবে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম এখনো অনেক বেশি বলে ক্রেতাদের অসন্তোষ কমেনি।

তারা জানান, কয়েক সপ্তাহে প্রতি ডজন ডিমের দাম ৭০ টাকা থেকে বেড়ে ক্রমান্বয়ে ১৬৫ টাকা হয়েছে। তবে এখন ডিমের দাম কিছুটা কমে প্রতি ডজন ১৫০ টাকায় স্থিতিশীল রয়েছে।

পেঁয়াজ, রসুন, আদা, জিরা, কাঁচা মরিচ ও অন্যান্য মসলার দামেরও একই অবস্থা।

শুক্রবার (১৮ আগস্ট) রাজধানীর কারওয়ান বাজারে আলাউদ্দিন দেওয়ান নামে এক সরকারি কর্মচারী ইউএনবিকে বলেন, দাম বেশি হওয়ায় তিনি নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র অর্ধেক কিনছেন।

স্বল্প বেতন পাওয়া মানুষকে পরিবারের খরচ মেটাতে লড়াই করতে হচ্ছে। তাই তাকে ডিম, মাছ, মাংস ও অন্য বেশি দামের জিনিস কেনা কমাতে হচ্ছে।

শুক্রবার বাজার করতে গিয়ে একই রকম অভিজ্ঞতা হয়েছে বেসরকারি কোম্পানির নির্বাহী আলমগীর হোসেনের।

তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘আমার দুই সন্তানের লেখাপড়ার খরচ, বাবা-মায়ের ওষুধের খরচ, বাড়ি ভাড়া ও ইউটিলিটি বিল আগের থেকে বেড়ে যাওয়ায় নিয়মিত খরচের তালিকা থেকে অনেক আইটেম বাদ দিতে হয়েছে। কারণ আমার আয় একই আছে।’

দেখা যায়, কারওয়ান বাজারে শুক্রবার সবজির দাম কিছুটা কমেছে। যদিও সবজি ও মাছের দাম বাজারের গুণগত মান ও এলাকাভেদে ভিন্ন।

কারওয়ান বাজারে শুক্রবার প্রতি কেজি বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৮০ টাকা, ঢেঁড়স ৪০ থেকে ৫০ টাকা, পটল ৪০ থেকে ৫০ টাকা, করলা ৮০ থেকে ১০০ টাকা, শিম ২০০ থেকে ২২০ টাকা, কাঁকরোল ৭০ থেকে ৮০ টাকা, কচুর লতি ৮০ থেকে ৯০ টাকা, টমেটো ১৪০ থেকে ১৮০ টাকা, গাজর ১২০ থেকে ১৫০ টাকা, আলু ৪০ টাকা এবং কাঁচা মরিচ ১৮০ থেকে ২০০ টাকা কেজি দরে।

আরও পড়ুন: ডিমের দাম বৃদ্ধির পেছনে বাজার অব্যবস্থাপনা

কারওয়ান বাজারে মাছের মধ্যে ৭০০ গ্রাম থেকে ৭৫০ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৮০০ টাকায়।

অন্যান্য মাছের মধ্যে পুটিমাছ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৩০০ টাকা, পুটি (জীবন্ত) ৪০০ টাকা, চাষের কই ২০০ থেকে ২২০ টাকা কেজি, কই (নদীর) ৭০০ টাকা, রূপচাদা ১২০০ টাকা কেজি, চান্দা ছোট ৬০০ টাকা কেজি, শোল মাছ ৫০০ টাকা কেজি, বাইম ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা কেজি, মেনি ৫০০ টাকা কেজি, বোয়াল ৫৫০ থেকে ৭০০ টাকা কেজি, কাইট্টা মাছ ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা কেজি, বাইলা ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা কেজি, কোরাল মাছ ৫৫০ টাকা কেজি, নদীর পাঙ্গাস ৫০০ টাকা কেজি, চাষ করা পাঙ্গাস ১৮০ থেকে ২২০ টাকা কেজি, রাজপুটি ৩০০ টাকা কেজি, তেলাপিয়া ২০০ থেকে ২২০ টাকা কেজি, রুই ৩২০ থেকে ৪০০ টাকা কেজি, মাঝারি আকারের কাতল ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা কেজি, শিং ৪০০-৫০০ টাকা কেজি, গলদা চিংড়ি ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা কেজি এবং বাগদা চিংড়ি (নদীর) ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা কেজি।

এ ছাড়া দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯৫ থেকে ১০০ টাকা কেজি, আমদানি করা পেঁয়াজ ৭০ থেকে ৭৫ টাকা কেজি, আমদানি করা রসুন বিক্রি হচ্ছে ২৪০ থেকে ২৬০ টাকা কেজি এবং দেশি রসুন ২২০ টাকা কেজি দরে, আমদানি করা আদা বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১৮০ থেকে ২৪০ টাকায়, দেশি আদা মানের ভিত্তিতে ৩০০ টাকা কেজি পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।

গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৮০ থেকে ৮০০ টাকা কেজি, মাটন ১১৫০ থেকে ১১৮০ টাকায়। মাঝারি আকারের দেশি মোরগ বিক্রি হচ্ছে ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা এবং মুরগি ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা। ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি ১৭০ থেকে ১৯০ টাকা, ডিম (ফার্ম) প্রতি হালি (৪ পিস) ৫০ টাকা, ডিম (দেশি) ৭০ টাকা এবং ডিম (হাঁস) ৭০ থেকে ৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া প্রতি জোড়া কবুতর বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকায়।

লাল মসুর ডাল ১৩০ টাকা কেজি এবং আমদানি করা মসুর ডাল (মোটা জাতের) ১১৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

রূপচাঁদা ব্র্যান্ডের পাঁচ লিটার সয়াবিন তেলের বোতল ৮৬০ টাকা, লুজ সুপার পাম অয়েল ১৬০ টাকা, চিনি ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা কেজি, গুঁড় ১৭০ থেকে ২০০ টাকা এবং চিড়া ১২০ থেকে ১৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

টিসিবি জানায়, খুচরা বাজারে মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৪ টাকা কেজি, পাইজাম ৫৮ টাকা কেজি, নাজিরশাইল চাল ৮০ টাকা কেজি, মিনিকেট ৬৫ থেকে ৭০ টাকা কেজি, কাটারি ভোগ ৯৫ টাকা, বাদশা ভোগ ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা কেজি এবং কালিজিরা ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা কেজি।

মোটা আটা (খোলা) বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৫৫ টাকা, প্যাকেটের আটা (ময়দা) ৭০ টাকায় আর আটা (প্যাকেট) বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়।

আরও পড়ুন: দেশের বাজারে কমেছে কাঁচা মরিচের দাম

বাজারে মসলার দামের ঊর্ধ্বগতি, ঈদুল আজহার আগে বিপাকে ক্রেতারা