তিনি বলেন, ‘আবরারের ঘটনার সাথে যারা জড়িত তাদের বিচার কী হবে তা আদালত বলতে পারবে। তবে আমার মতে তাদের মৃত্যুদণ্ড হওয়া উচিত।’
আবরারের জীবন ঝরে যাওয়ার পাশাপাশি খুনে জড়িত কয়েকজন মেধাবী শিক্ষার্থীর জীবনও নষ্ট হয়ে যাওয়ায় আক্ষেপ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘অপরাধীদের মধ্যে ভ্যানচালকের সন্তানও আছে। এটা তো দেশের জন্য ক্ষতিকর।’
মঙ্গলবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাদের আরও বলেন, ‘আবরার হত্যাকাণ্ড নিয়ে বিএনপির উদ্বেগ নেই। এটাকে তারা আন্দোলনের বিষয় বানাতে চাইছে। তারা নানা কারণে আন্দোলনে ব্যর্থ হয়েছে। এখন আন্দোলনের বিষয় খোঁজাই তাদের লক্ষ্য।’
আবরারের ঘটনায় দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘এ ঘটনায় শুধু নিন্দা নয়, তড়িৎ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। আগে কখনো এত তড়িৎ ব্যবস্থা কেউ নেয়নি। প্রধানমন্ত্রী ঘটনার পর আইজিপিকে ডেকে নিয়ে সব অপরাধীকে গ্রেপ্তার করতে বলেছেন। ঘটনার সাথে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। আবরারের পরিবার প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করেছে। সেখানে প্রধানমন্ত্রী তাদের বলেছেন, যত দ্রুত সম্ভব অপরাধীদের বিচার হবে। তিনি আইনমন্ত্রীকেও বলেছেন যে যত দ্রুত সম্ভব অপরাধীদের বিচার করতে হবে।’
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলে কাদের বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের সব দাবি মেনে নেয়া হয়েছে। তাহলে এখনো আন্দোলন কেন? যেহেতু সরকার তড়িৎ ব্যবস্থা নিয়েছে ও সব দাবি মেনে নেয়া হয়েছে তাই অহেতুক আন্দোলন না করে তাদের পড়াশোনায় মনোনিবেশ করা উচিত।’
আবরার হত্যাকাণ্ড সরকার ও দলের জন্য বিব্রতকর উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ক্ষমতাসীন দলের ব্যানারে এটি ঘটেছে। তবে এখানে যারা ঘটনা ঘটিয়েছেন তারাই দায়ী। এ জন্য কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগকে দায়ী করা ঠিক নয়। যারা অপরাধী তাদের সেভাবেই বিচার হবে। গুটিকয়েকের দায়ভার গোটা দল নেবে না। তবে সরকার ক্ষমতায় আছে, তাই দায় নিতে হবে। এর মাধ্যমে সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে। সরকারিভাবে এ ঘটনায় দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।’
বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য দলটির কঠোর আন্দোলনে (হার্ডলাইন) যাওয়া প্রসঙ্গে কাদের বলেন, তারাও হার্ডলাইনের পক্ষে। তবে তারা চান না কোনো সংঘাত তৈরি হোক। বিএনপি খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য নিয়ে যতটা না উদ্বিগ্ন, তার চেয়ে বিষয়টি থেকে রাজনৈতিক ইস্যু খুঁজে বের করতে বেশি আগ্রহী বলে সমালোচনা করেন তিনি।
ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের কয়েকজন ওয়ার্ড কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, ‘দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগে বিতর্কিতরা সিটি করপোরেশনের আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন পাবেন না। একজন ওয়ার্ড কাউন্সিলর ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার হয়েছেন। আরেকজনের বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগ এসেছে। যার বিরুদ্ধেই অভিযোগ পাওয়া যাবে কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না।’
দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান চলমান থাকবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘অভিযান ততক্ষণ থামবে না যতক্ষণ না আমরা অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করতে পারব, লক্ষ্য পূরণ করতে পারব। মাদক, সন্ত্রাস, ক্যাসিনো ও টেন্ডারবাজির বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী যে অভিযান শুরু করেছেন তা অপরাধ দমনের আগে শেষ হবে না। অপরাধীদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। অপরাধীদের মাথার ওপর যারা ছাতা হিসেবে ছিলেন তাদেরও খোঁজ নেয়া হচ্ছে। যার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া যাবে, দুদক তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবে।’
‘আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিলকে সামনে রেখে আমাদের লক্ষ্য হলো তৃণমূল থেকে কেন্দ্রীয় কমিটি পর্যন্ত যারা বিতর্কিত তাদের বাদ দিয়ে কমিটি করা। প্রধানমন্ত্রীও বলেছেন কোনো বিতর্কিত ব্যক্তি যাতে দলে বা কোনো পদে আসতে না পারেন,’ যোগ করেন কাদের।
মন্ত্রী জানান, ঢাকার মতো চট্টগ্রামেও মেট্রোরেল নির্মাণ করবে সরকার। এ জন্য সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ‘তার নির্দেশনা অনুযায়ী খুব শিগগিরই সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করার জন্য নির্দেশ দিয়েছি।’