রাজধানীর গোলাপবাগ মাঠে দলীয় মহাসমাবেশ করতে রাজি না হওয়ায়, দলটির বৃহস্পতিবারের কর্মসূচি পিছিয়ে শুক্রবার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি।
বুধবার (২৬ জুলাই) রাতে বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যদের বৈঠক শেষে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ ঘোষণা দেন।
তিনি বলেন, সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় শুক্রবার দুপুর ২টায় দলের নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।
ফখরুল বলেন, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাসী বিএনপি গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের চলমান আন্দোলনকে শান্তিপূর্ণভাবে এগিয়ে নিতে বৃহস্পতিবারের পরিবর্তে শুক্রবার (২৮ জুলাই) সাপ্তাহিক ছুটির দিন দুপুর ২টায় নয়াপল্টনে পূর্বঘোষিত মহাসমাবেশের ঘোষণা দিচ্ছি।
তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, সরকার বা তার কোনো প্রতিষ্ঠান তাদের চলমান শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক আন্দোলনের একটি অংশ এই মহাসমাবেশ আয়োজনে কোনো বাধা সৃষ্টি করবে না।
এর আগে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক বলেন, পুলিশ বিএনপিকে নয়াপল্টন বা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের অনুমতি দেয়নি। ‘বৃহস্পতিবার কর্মদিবস হওয়ায় আমরা তাদের গোলাপবাগ মাঠ বা অন্য কোনো মাঠে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছি।’
আরও পড়ুন: নতুন সমাবেশস্থল নিয়ে এখনো সিদ্ধান্ত নেয়নি বিএনপি: রিজভী
ডিএমপি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের তিনটি শাখা- যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগকে তাদের নির্ধারিত সমাবেশ বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের দক্ষিণ গেটে না করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) বা মহানগর নাট্যমঞ্চে করার পরামর্শ দিয়েছে।
ডিএমপির সিদ্ধান্তের পর বিকাল ৪টায় নয়াপল্টনে তাদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সমাবেশস্থলের উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনায় বৈঠকে বসেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যরা।
বৈঠক শেষে সমাবেশস্থল নিয়ে দলীয় সিদ্ধান্তের কথা গণমাধ্যমকে জানানোর কথা ছিল ফখরুলের।
তবে ফখরুল স্থায়ী কমিটির অন্য সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা না বলে বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে গুলশানের উদ্দেশে নয়াপল্টন ত্যাগ করেন। সেখানে তারা আবার বৈঠকে বসেন।
বৈঠক শেষে রাত ৯টা ৫ মিনিটে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ফখরুল।
নয়াপল্টন এলাকায় দাঙ্গা-গাড়ি ও জলকামানসহ বিপুল সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।
বিকাল ৫টার দিকে বিএনপির কয়েকশ’ নেতাকর্মী দলীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হলেও পরে দলের সিনিয়র নেতাদের নির্দেশে তারা এলাকা ছেড়ে চলে যান।
সোমবার ঢাকার নয়াপল্টন বা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করার আগ্রহ জানিয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশকে (ডিএমপি) চিঠি দেয় বিএনপি।
আরও পড়ুন: আন্দোলনে জননিরাপত্তা বিঘ্নিত হলে দায় বিএনপিকেই নিতে হবে: কাদের
এর আগে, ডিএমপি প্রধান রাজনৈতিক দলগুলিকে জনদুর্ভোগের কারণ সৃষ্টি না করে তাদের কর্মসূচি পালনের আহ্বান জানিয়েছিলেন।
তিনি বলেন, তারা জনগণের দুর্ভোগের কারণ হয়ে উঠলে ভবিষ্যতে তারা রাজনৈতিক সমাবেশ নিষিদ্ধ করতে বাধ্য হতে পারে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ও বিএনপিসহ মোট ৯টি রাজনৈতিক দল ২৭শে জুলাই রাজধানীতে সমাবেশ করার অনুমতি চেয়ে ডিএমপিকে চিঠি দিয়েছে, তবে মাত্র কয়েকটিকে অনুমতি দেওয়া হবে।
তাজিয়া মিছিলে পবিত্র আশুরা উপলক্ষে সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, রাজনৈতিক সমাবেশ করা রাজনৈতিক দলগুলোর গণতান্ত্রিক অধিকার, তবে জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ডিএমপির দায়িত্ব।
শনিবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের পথ প্রশস্ত করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবিতে তাদের এক দফা দাবিতে এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
তাদের যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে দুপুর ২টায় রাজধানীতে জনসভা অনুষ্ঠিত হবে বলে জানান তিনি।
গত ১২ জুলাই মির্জা ফখরুল আনুষ্ঠানিকভাবে ‘একদফা’ আন্দোলনের ঘোষণা দেন। এক দফা দাবি আদায়ের প্রথম কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিএনপিসহ অন্যান্য বিরোধী দল ও জোটগুলো ১৮ ও ১৯ জুলাই দেশব্যাপী দুই দিনব্যাপী পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করে।
বিরোধী দলের এক দফা দাবির মধ্যে রয়েছে- বর্তমান ‘ফ্যাসিবাদী, স্বৈরাচারী, জনগণের ভোট লুটেরা ও অবৈধ’ আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ, বিদ্যমান সংসদ ভেঙে দেওয়া, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন; একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের ব্যবস্থা করার জন্য নির্বাচন কমিশনের পুনর্গঠন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ সকল রাজনৈতিক রাজবন্দীর মুক্তি, তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত সকল পতন ও ভূতের মামলা প্রত্যাহার এবং সকল মিথ্যা সাজা বাতিল।
আরও পড়ুন: বিএনপিকে গোলাপবাগ মাঠে সমাবেশ করার পরামর্শ ডিএমপির