প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের বিরুদ্ধে অপশক্তি যতই ষড়যন্ত্র করুক না কেন, জাতি এগিয়ে যাবে, আমরা জাতির পিতার স্বপ্ন পূরণ করব।
তিনি বলেন, ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়া ভোট কারচুপির মাধ্যমে নিজেকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ঘোষণা করেন। ‘কিন্তু বাংলাদেশের জনগণ কখনোই কোনো ভোট কারচুপিকে মেনে নেয়নি। এদেশের মানুষ সেটা (নির্বাচন) মেনে নেয়নি। সে সময় গণঅভ্যুত্থান ও আন্দোলন হয়। ১৯৯৬ সালের ৩০ মার্চ খালেদা জিয়াকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়।’
শনিবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় কাউন্সিলে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, সরকার নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) ক্ষমতায়ন করেছে এবং তারা সরাসরি বাজেট থেকে তাদের অর্থ পেয়েছে; যাতে তারা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে।
নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করার বিভিন্ন উদ্যোগের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দিয়ে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের যদি ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার মতো নির্বাচন করার অসৎ উদ্দেশ্য থাকত, তাহলে তারা আজিজের মতো নির্বাচন কমিশন গঠন করতে পারত (এমএ আজিজ কমিশন)।
তিনি বলেন, ‘কিন্তু আমরা তা করিনি। জনগণের ওপর আমাদের আস্থা আছে। আমরা সেই বিশ্বাস এবং আস্থার ওপর ভিত্তি করে কাজ করি।’
আরও পড়ুন: ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতে আ.লীগ নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে: প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করেছে, যা একজন নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকারও।
তিনি বলেন, ‘আমরা নির্বাচন কমিশন নিয়োগের জন্য আইন প্রণয়ন করেছি। আমরা পুরো প্রক্রিয়াটিকে স্বচ্ছ করেছি।’
ইভিএম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই পদ্ধতিতে ভোটে কারচুপির কোনো সুযোগ নেই।
পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির অভিযোগ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, রাজনীতিতে এসেছেন দেশের সেবা করতে, জনগণকে কিছু দিতে, কিছু নিতে নয়।
তিনি স্পষ্টভাবে বলেছেন যে তিনি বেঁচে থাকতে দেশের স্বার্থ ক্ষুন্ন হতে দেবেন না বা দেশের স্বার্থের সামান্য অংশও কারও হাতে তুলে দেবেন না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সকল আক্রমণ ও ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে বাংলাদেশকে একটি উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করতে আওয়ামী লীগ এগিয়ে যাবে এবং কেউ দেশকে পিছিয়ে নিয়ে যেতে পারবে না।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ইতিহাস সংগ্রামের ইতিহাস এবং একমাত্র আওয়ামী লীগই পারে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে।
জাতির পিতার ভাষণের উল্লেখ করে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের সংগ্রাম সেদিনই শেষ হবে যেদিন সাধারণ মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে পারবে।
আরও পড়ুন: বিজয়ের মাসে ১০০ মহাসড়ক জাতির জন্য উপহার: প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৮ সালের সাধারণ নির্বাচনের পর তার দল ধারাবাহিকভাবে রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকায় স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী বছরে বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ২০৪১ সালে বাংলাদেশকে একটি উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে, ই-ডিভাইস ব্যবহারের উপযোগী দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলা হচ্ছে।
শেখ হাসিনা বলেন, সরকার তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবস্থা ব্যবহারের মাধ্যমে ই-ইকোনমি, ই-এডুকেশন এবং ই-হেলথ কেয়ারের মতো অনলাইন সেবা ব্যবস্থা চালু করার পদক্ষেপ নিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এই উদ্দেশ্যে আইটি ভিত্তিক দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে এবং তাদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য দেশে আইটি পার্ক এবং আইটি ইনকিউবেশন সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে।
ই-ডিভাইস ব্যবহারের উপযোগী নতুন প্রজন্মের বিকাশের পদক্ষেপের বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, তারা খুব দ্রুত নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারে।
তিনি গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির ব্যবহারে মিতব্যয়ীতা বজায় রাখার জন্য তার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করার পাশাপাশি ভবিষ্যতের সংকট মোকাবিলায় খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।
আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় কাউন্সিলে সাংগঠনিক প্রতিবেদন উপস্থাপনকালে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আগামী নির্বাচনের জন্য আওয়ামী লীগ প্রস্তুত রয়েছে।
এই প্রসঙ্গে তিনি তার সাম্প্রতিক সিগনেচার শব্দ ‘খেলা হবে’ উল্লেখ করেন।
সড়ক, পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, অগ্নিসংযোগ, ভোট কারচুপি, দুর্নীতি ও হাওয়া ভবনের বিরুদ্ধে শিগগিরই খেলা শুরু হবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশকে বাঁচাতে হলে আওয়ামী লীগকে টিকে থাকতে হবে।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শেখ হাসিনা সমস্যা সমাধানকারী এবং তার বিকল্প নেই।
তিনি উল্লেখ করেন, প্রধানমন্ত্রী গত ৪৭ বছরে সবচেয়ে জনপ্রিয়, সাহসী ও দক্ষ প্রশাসক ও কূটনীতিক।
আরও পড়ুন: সীমান্ত এলাকায় বসবাসরত জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন: বিজিবির প্রতি প্রধানমন্ত্রী