ইসলাম শান্তির ধর্ম উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আমরা শান্তি চাই। আমরা চাই, নির্বাচনের মধ্য দিয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হোক। আমরা চাই, এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে একটা নতুন বাংলাদেশ গড়ে উঠুক, যেখানে আমার ভবিষ্যৎ বংশের জন্য একটা সুন্দর ভবিষ্যৎ রচনা করতে পারব। এটাই হচ্ছে আমাদের একমাত্র লক্ষ্য।
রবিবার (২৮ ডিসেম্বর) দুপুরে নিজের নির্বাচনি এলাকা ঠাকুরগাঁও শহরের মানব কল্যাণ পরিষদ চত্বরে আলেম-ওলামাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ। এ দেশে কোরআন ও সুন্নাহর বাইরে কোনো আইন আমরা করতে দেব না। এটা আমাদের কমিটমেন্ট। এই কমিটমেন্ট আমরা সবসময় করে এসেছি।
‘আমি যখন চরমোনাই পীর সাহেবের সঙ্গে বসেছিলাম, আমরা ১০টা বিষয়ের মধ্যে একমত হয়েছিলাম। তার মধ্যে এটা একটা। অনেকেই আপনাদের বিভ্রান্ত করার জন্য বলে, আমরা নাকি কুরআন ও সুন্নাহর আইন চাই না। নাউজুবিল্লাহ! আমরা সবসময় কোরআন-সুন্নাহর মধ্যে থাকতে চাই। আমাদের বংশ সেটা, আমাদের রক্তের মধ্যে সেটা। আমি গর্বিত যে আমি একজন মুসলমান।’
তিনি বলেন, ‘ইসলাম শান্তির ধর্ম, আমরা শান্তি চাই। আমরা চাই, নির্বাচনের মধ্য দিয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হোক। আমরা চাই, এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে একটা নতুন বাংলাদেশ গড়ে উঠুক, যেখানে আমি আমার ইবাদত শান্তিতে করতে পারব, আমার ধর্মচর্চা শান্তিতে করতে পারব, আমার ভবিষ্যৎ বংশের জন্য একটা সুন্দর ভবিষ্যৎ রচনা করতে পারব। এটাই হচ্ছে আমাদের একমাত্র লক্ষ্য।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আপনারা দেখেছেন আমাদের নেতা তারেক রহমান সাহেব নির্বাসিত অবস্থা থেকে দেশে আসার পরে কীভাবে স্বতঃস্ফুর্তভাবে জনগণ ঢাকার রাজপথে ছড়িয়ে পড়েছে। সেখানে তিনি যে বক্তব্য রেখেছেন, আমি বিশ্বাস করি, আমাদের আলেম-ওলামারা সবাই সেটাকে পছন্দ করেছেন। তিনি সেখানে বারবার ইসলামের কথা বলেছেন, আল্লাহর কথা বলেছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের সম্পর্কে অনেকেই অনেক কথা বলে ভুল বোঝানোর চেষ্টা করে, কিন্তু আমরা এদেশের ৯৫ ভাগ মানুষ মুসলমান। আমাদের ধর্ম, কৃষ্টি ও সংস্কৃতি রক্ষা করার জন্য আমরা সবচেয়ে বেশি ভূমিকা পালন করেছি।’
দেশের বর্তমান পরিস্থিতি প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, দেশ এখন একটি ক্রান্তিকালের মধ্যে পার হচ্ছে। বিভিন্ন রকম কথাবার্তা উঠছে। বিভ্রান্তি সৃষ্টি হচ্ছে, আন্দোলন হচ্ছে। দেশকে অস্থির করার জন্য পেছন থেকে কিছু লোক কাজ করছে।
আবার যেন অন্ধকারের দিকে চলে না যেতে হয়, সেজন্য আমাদের এই সময়ে একটু সাবধান থাকতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা নিজেরা যেন বিভেদ ও চক্রান্তকারীদের হাতে না পড়ি। নাহলে দেশ আমাদের আরও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। নির্বাচনকে ভাঙার চেষ্টা করা হচ্ছে। সেটা যেন করতে না পারে, সেদিকে আপনাদের খেয়াল রাখতে হবে।’
নির্বাচনে জয়ী হয়ে বিএনপি সরকার গঠন করলে ঠাকুরগাঁওয়ের উন্নয়ন পরিকল্পনাও এসময় তুলে ধরেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ‘আমরা যদি সরকারে যেতে পারি, তাহলে অবশ্যই ঠাকুরগাঁওয়ে পুনরায় বিমানবন্দর চালু করা হবে। আপনারা মেডিকেল কলেজের কথা বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা বলেছেন, সবগুলোই প্রতিষ্ঠা করা হবে। আমরা আপনাদের সঙ্গে আছি। এই ঠাকুরগাঁওয়ে যতগুলো স্কুল-কলেজ, মাদরাসা রয়েছে, আমি বিশ্বাস করি, তার ৯০ শতাংশে আমাদের অবদান রয়েছে।
‘আপনারা জানেন, বিএনপি একটা পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে। খতিব, ইমাম ও মুয়াজ্জিনদের সামাজিক মর্যাদা ও জীবনমান উন্নয়নে মাসিক সম্মানী-ভাতা দেওয়া হবে। বিএনপি ক্ষমতায় এলে ধর্মীয় উৎসবে বিশেষ ভাতা প্রদান করা হবে। দক্ষতার উন্নয়নমূলক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা হবে।’
সবশেষে প্রবীণ এই রাজনীতিক বলেন, ‘এই নির্বাচন আমার শেষ নির্বাচন। বয়স হয়ে গেছে। এরপরে আমার পক্ষে নির্বাচন করা সম্ভব হবে কিনা জানি না। আমি আপনাদের কাছে এইটুকু অনুরোধ করতে চাই, আপনারা যদি মনে করেন যে আমি অতীতে আপনাদের পাশে দাঁড়াতে পেরেছি, কাজ করতে পেরেছি, তাহলে দয়া করে আমাকে (নির্বাচনে) সহযোগিতা করবেন এবং আমার জন্য দোয়া করবেন।’
এ সময় জেলা বিএনপির সভাপতি মির্জা ফয়সল আমিন, সাধারণ সম্পাদক পয়গাম আলী, সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল হামিদ, পৌর বিএনপির সভাপতি শরিফুল ইসলাম শরীফসহ জেলা বিএনপির নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।