শিক্ষার্থীদের সাম্প্রতিক গণআন্দোলনে ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে সর্বস্তরের জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
হুইল চেয়ার বিতরণ অনুষ্ঠানে ভার্চুয়াল বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, বিএনপি যদি জনসমর্থন নিয়ে সরকার গঠন করতে পারে তবে শহীদদের নামে সারা দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনার নামকরণ করা হবে।
তিনি বলেন, 'আন্দোলনে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সামর্থ্য অনুযায়ী সহায়তায় এগিয়ে আসার জন্য আমি সমাজের প্রতিটি মানুষের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি ‘
সোমবার (১৮ নভেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবে শেখ হাসিনার স্বৈরাচারবিরোধী শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে পঙ্গু ১০ ব্যক্তির মাঝে হুইল চেয়ার বিতরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে আমরা বিএনপি পরিবার।
তারেক বলেন, জনগণের হারানো অধিকার ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য দীর্ঘ ১৭ বছরের সংগ্রামে বিপুলসংখ্যক মানুষ বিভিন্ন পর্যায়ে নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘দেশ এখন স্বৈরাচার মুক্ত হয়েছে। এটি অর্জন করতে দলমত নির্বিশেষে বাংলাদেশ জুড়ে বহু মানুষ নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’
আরও পড়ুন: দেশ পরিচালনায় সরকারের অযোগ্যতাকে বরদাশত করবে না জনগণ: তারেক
বিএনপির এই নেতা বলেন, দেশকে ফ্যাসিবাদমুক্ত করার সংগ্রামে যারা শহীদ হয়েছেন তাদের পরিবারের পাশাপাশি যারা আহত বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদের পাশে দাঁড়ানো সবার দায়িত্ব।
তারেক বলেন, ‘তারা দেশের জন্য এই ত্যাগ স্বীকার করেছেন, যাতে আমরা যারা বেঁচে আছি, তারা যেন স্বাধীনভাবে বাঁচতে পারি। দলমত নির্বিশেষে আমাদের কর্তব্য হচ্ছে সাধ্যমতো তাদের এবং তাদের পরিবারের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া।’
তিনি আরও বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় গেলে আহত ও পঙ্গু ব্যক্তিদের উন্নত চিকিৎসা নিশ্চিত করা, পুনর্বাসন এবং শহীদদের পরিবারকে সহায়তা করার জন্য প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেবে।
তিনি বলেন, ‘বিএনপি সরকার গঠন করলে স্বৈরাচার অবসানে জীবন উৎসর্গকারী শহীদদের নামে সারা দেশে প্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের নামকরণ করার প্রস্তাব করবে। এর ফলে এই নায়কদের নাম কখনও মুছে যাবে না।’
তিনি বলেন, বিএনপি সারা দেশে আন্দোলনের ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিসহ সকল পঙ্গু ব্যক্তিকে তাদের পরিবারের বোঝা না করে স্বাবলম্বী করার লক্ষ্যে সহায়তা দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
বিএনপি নেতা বলেন, ‘আন্দোলনের বাইরেও সমাজে এমন অনেক মানুষ আছেন যারা জন্মগতভাবে বা অন্য কোনো কারণে প্রতিবন্ধী হয়ে গেছেন। দেশের অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে কেউ প্রতিবন্ধী হলে তা পরিবারের ওপর ভারী বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। ব্যক্তিগতভাবে আমার ইচ্ছা এসব মানুষের স্বাস্থ্য স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরানোর উপায় খুঁজে বের করা।’
তিনি আরও বলেন, বিএনপি যখন ভবিষ্যতে সরকার গঠন করবে, তখন সারা দেশে এ ধরনের পরিবারগুলোকে সহায়তা করার সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য থাকবে। তারা আর্থিকভাবে সচ্ছল হোক বা না হোক। ‘আমরা রাষ্ট্র থেকে সহায়তা প্রদানের লক্ষ্য রাখব, যাতে এই পঙ্গু ব্যক্তিরা যতটা সম্ভব স্বাবলম্বী হতে পারে।’
আরও পড়ুন: বিএনপি ফিরলে ক্ষমতার অপব্যবহার ও স্বৈরাচার দমনের অঙ্গীকার তারেকের
এসব পরিবারের সহায়তায় দেশের আর্থিকভাবে সচ্ছল ব্যক্তিদের সহযোগিতার আহ্বানও জানান তারেক।
তিনি বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, আমরা সবাই সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিলে আমরা আমাদের স্বপ্নের নতুন বাংলাদেশ গড়ার কাজ শুরু করতে পারব।’
সভায় বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, বিএনপি ও যারা শেখ হাসিনার সরকারকে হটানোর আন্দোলন করেছে তাদের সমর্থনে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছে। ‘আমরা এখনও এই সরকারকে সমর্থন করছি।’
তবে সংস্কারের জন্য সরকারের চার বছরের মেয়াদ নিয়ে একটি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য উদ্বেগের বিষয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বিএনপির এই নেতা বলেন, রাজনীতিবিদরা যুগ যুগ ধরে রাষ্ট্রীয় সংস্কারের নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং প্রয়োজনীয় সংস্কার করবেন, বর্তমান সরকার কিছু পরামর্শ দিতে পারে।
তিনি বলেন, কিছু জটিলতা বা কোনো অশুভ পরিকল্পনার কারণে সরকার সংস্কারের নামে ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার চেষ্টা করতে পারে। ‘এটা আমাদের জন্য উদ্বেগের বিষয়। দেশের মানুষ জানতে চায় সংস্কার ও নির্বাচনের জন্য কেন চার বছর সময় লাগবে।’