বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, তার দলের এমপিরা বর্তমান সংসদ থেকে পদত্যাগ করতে প্রস্তুত। কেননা তাদের মূল লক্ষ্য আওয়ামী লীগ সরকারকে হটিয়ে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করা। বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের জন্য সরকারকে ক্ষমতা ছাড়তে হবে।
তিনি বলেন, ‘আমরা সরাসরি বলতে চাই, শেখ হাসিনার অধীনে এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া দেশে কোনো নির্বাচন হবে না। আমাদের একমাত্র দাবি এই সরকারের পদত্যাগ।’
শনিবার রংপুরে সরকারবিরোধী এক বিশাল সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
আরও পড়ুন: রাজধানীর জলাবদ্ধতা সরকারের অপরিকল্পিত মেগা প্রকল্পের ফল: ফখরুল
এসময় বিএনপির জ্যেষ্ঠ এই নেতা বলেন, সরকারকে সংসদ ভেঙে দিতে হবে। ‘আমাদের সংসদ সদস্য হারুন, রুমিন ও জাহিদ দলের নির্দেশে (সংসদ থেকে) পদত্যাগ করতে প্রস্তুত। সরকারকে অবশ্যই একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে যা একটি নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করবে এবং এর অধীনে একটি নতুন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।’
তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের দ্বারা ধ্বংস হওয়া রাষ্ট্র, অর্থনীতি ও রাজনীতি মেরামতের জন্য বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের পর একটি জাতীয় সরকার গঠন করা হবে।
বিভাগীয় পর্যায়ে দলের পরিকল্পিত সমাবেশের অংশ হিসেবে রংপুর কালেক্টর ঈদগাহ মাঠে এ কর্মসূচির আয়োজন করে রংপুর মহানগর বিএনপি।
পরিবহন ধর্মঘট উপেক্ষা করে সমাবেশে যোগ দেন বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের হাজার হাজার নেতাকর্মী।
যে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সমাবেশস্থলের আশপাশে এবং শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ ও অন্যান্য নিরাপত্তা কর্মকর্তা মোতায়েন করা হয়েছে।
আয়োজকরা জানান, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ও জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির নিন্দা, ভোলা, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ ও যশোরে পূর্বে পুলিশের অভিযানে পাঁচ দলের নেতাকর্মীর মৃত্যু এবং বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি নিশ্চিত করতে এই সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে।
৩৬ ঘণ্টার পরিবহন ধর্মঘটের কারণে প্রতিবন্ধকতার মুখে তিন দিন অক্লান্ত কষ্ট সহ্য করে এবং কঠোর পরিশ্রম করে সমাবেশ সফল করায় শনিবার ফখরুল রংপুরবাসীকে অভিনন্দন জানান।
তিনি প্রশ্ন তোলেন, বিএনপিকে ভয় না পেলে সরকার কেন বিএনপির জনসভায় বাধা দেয়ার চেষ্টা করে এবং বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ওপর গুলি করে হামলা চালায়?
আরও পড়ুন: পায়রা সমুদ্রবন্দরে রিজার্ভের টাকা কীভাবে খরচ হয়েছে ব্যাখ্যা করুন: সরকারের উদ্দেশে ফখরুল
ফখরুল বলেন, ‘একটি দল এবং একজন ব্যক্তি (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) গত ১৫ বছর ধরে গোটা দেশকে ধ্বংস করেছে এবং আমাদের দমন-পীড়ন করেছে… তারা অর্থনীতিকে চিবিয়ে খেয়ে ধ্বংস করেছে। তারা এখন পুরো বাংলাদেশকে খেয়ে ফেলতে চাইছে।’
তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের পদত্যাগই তাদের একমাত্র দাবি, কারণ এটি দেশের সব অর্জনকে ধ্বংস করেছে। ‘আপনারা যেদিকেই তাকাবেন, তাদের চুরি দেখতে পাবেন। তারা রাস্তা ও সেতু নির্মাণের কাজ থেকে, এমনকি আমাদের দরিদ্র মানুষের জন্য ঘর তৈরির কাজ থেকেও চুরি করছে। তারা সবকিছু খেয়ে ফেলছে, কিছুই ছাড়ছে না।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এ জেড এম জাহিদ হোসেন, যুগ্ম মহাসচিব হারুনুর রশীদ, সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলু প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
বিএনপি দীর্ঘদিন ধরে দাবি করে আসছিল যে আগামী সাধারণ নির্বাচন কোনো রাজনৈতিক সরকারের অধীনে নয়, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই হোক; সংবিধান অনুযায়ী তা করা সম্ভব নয় বলে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ তা তীব্রভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে।
শুক্রবার বিকাল থেকে বিএনপি নেতাকর্মীরা সমাবেশস্থলে জড়ো হতে থাকে এবং তাদের অনেকেই সেখানে রাত কাটান।
শনিবারের সমাবেশটি বিভাগীয় পর্যায়ে বিএনপির চতুর্থ সমাবেশ। এর আগে প্রথমটি চট্টগ্রামে, দ্বিতীয়টি ময়মনসিংহে এবং তৃতীয়টি খুলনায় অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশকে সফল করতে লালমনিরহাট, গাইবান্ধা, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, দিনাজপুরসহ বিভিন্ন জেলা থেকে বিএনপির নেতাকর্মীরা ট্রেন, মোটরবাইক, অটোরিকশা, হিউম্যান হলারসহ বিভিন্নভাবে রংপুরে আসেন। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা এ অঞ্চলে ধর্মঘট পালন করছে।
তবে রংপুরের ক্ষমতাসীন দল পরিবহন ধর্মঘটের সঙ্গে সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করেছে।
মহাসড়কে থ্রি-হুইলারসহ অবৈধ যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ এবং প্রশাসনিক হয়রানি বন্ধের দাবিতে শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে শনিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত পরিবহন ধর্মঘট পালন করেছে রংপুর জেলা মোটর মালিক সমিতি।
আরও পড়ুন: সরকার বৈদেশিক রিজার্ভ গিলে ফেলেছে: ফখরুল