রবিবার আলোচিত এ মামলার অন্যতম সাক্ষী তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনার সফরসঙ্গী কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক নেতা জুবাইদুল হক রাসেল, রমনা থানা যুব মহিলা লীগের সাবেক নেত্রী ফাতেমা জামান সাথি, শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত ফটো সাংবাদিক শহিদুল ইসলাম জীবন, সৈনিক লীগের কেন্দ্রীয় নেতা সরদার মুজিব এবং সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম-সম্পাদক সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সভাপতি অধ্যক্ষ আবু আহমেদ আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন।
সাতক্ষীরা চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হুমায়ুন কবিরের আদালতে রবিবার দুপুরে তাদের জবানবন্দি রেকর্ড করে। এ নিয়ে এই মামলায় ৩০ জন সাক্ষীর মধ্যে ১৫ জনের সাক্ষ্য রেকর্ড করেছে আদালত। তবে সুপ্রিম কোর্টের অ্যাপিলেট ডিভিশনের চেম্বার জজ আদালতে লিভ টু আপিল শুনানির জন্য দিন ধার্য্য হওয়ায় সাক্ষী জেরা করেননি আসামি পক্ষের আইনজীবীরা।
সাতক্ষীরা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট আব্দুল লতিফ জানান, ২০০২ সালের ৩০ আগস্ট সাতক্ষীরার কলারোয়ায় তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলা মামলায় ইতোপূর্বে ১০ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। আজ রবিবার আলোচিত এই মামলায় আরও ৫ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য রেকর্ড করেছে আদালত।
তবে আসামি পক্ষের আইনজীবীরা জেরা করতে অস্বীকৃতি জানানোয় আগামী ৩০ নভেম্বর এই মামলার পরবর্তী দিন ধার্য্য করা হয়েছে, বলেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, আসামিরা এই মামলার বিচার কার্যক্রম বিলম্বিত করতে অপকৌশলের আশ্রয় নিয়েছে। তারা হাইকোর্টের অ্যাপিলেট ডিভিশনের চেম্বার জজ আদালতে লিভ টু আপিল শুনানির অজুহাত দেখিয়ে সাক্ষীর জেরা না করে কালক্ষেপণ করছে। কিন্তু উচ্চ আদালতের নির্দেশ ৯০ দিনের মধ্যে নিম্ন আদালতে এই মামলার বিচার কার্যক্রম শেষ করতে হবে। আসামি পক্ষ যতোই কালক্ষেপণ করার চেষ্টা করুক না কেন নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই বিচার কার্যক্রম শেষ হবে।
এদিকে, আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আব্দুল মজিদ বলেন, ‘মামলাটি সুপ্রীম কোর্টের অ্যাপিলেট ডিভিশনের চেম্বার জজ আদালতে লিভ টু আপিল শুনানির জন্য দিন ধার্য্য হওয়ায় আমরা সাক্ষী জেরা করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছি। আজ (২২ নভেম্বর) হাইকোর্টের ফুলবেঞ্চে এ মামলাটি শুনানি হয়েছে। দুই-এক দিনের মধ্যেই আদালতের সিদ্ধান্ত জানা যাবে। হাইকোর্টে লিভ টু আপিল শুনানির সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত আমরা আদালতের কাছে সময় চেয়েছি। লিভ টু আপিল শুনানি শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমরা সাক্ষীর জেরা করার জন্য প্রস্তুত নই বলে জানিয়েছি। আদালত আমাদের কথা শুনেছে এবং আগামী ৩০ নভেম্বর পরবর্তী দিন ধার্য্য করেছে।
প্রসঙ্গত, ২০০২ সালের ৩০ আগস্ট তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ধর্ষণের শিকার এক নারীকে দেখতে আসেন। ঢাকায় ফেরার পথে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কলারোয়া বিএনপি কার্যালয়ের সামনে তার গাড়ি বহরে হামলার অভিযোগ উঠে তৎকালীন সাতক্ষীরা-১ আসনের সংসদ সদস্য হাবিবুল ইসলাম হাবিবসহ নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে।
ওই ঘটনায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোসলেম উদ্দীন বাদী হয়ে উপজেলা যুবদলের সভাপতি আশরাফ হোসেনসহ ২৭ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ৭০/৭৫ জনের নামে থানায় ব্যর্থ হয়ে আদালতে মামলা দায়ের করেন।
পরে আদালতের নির্দেশে এক যুগ পর ২০১৪ সালের ১৫ অক্টোবর কলারোয়া থানায় মামলাটি রেকর্ড করা হয়। এরপর ২০১৫ সালের ১৭ মে জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাতক্ষীরা-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য হাবিবুল ইসলাম হাবিবসহ ৫০ জনের নামোল্লেখ করে ৩০ জনকে সাক্ষী করে সম্পূরক অভিযোগপত্র জমা দেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শেখ সফিকুর ইসলাম।
সাতক্ষীরা চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ৯ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণের পর ২০১৭ সালের ২১ সেপ্টেম্বর আসামিপক্ষের আপিল আবেদনে মামলার কার্যক্রম স্থগিতের আদেশ দেন উচ্চতর আদালত। এরপর রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের আবেদনের প্রেক্ষিতে উচ্চতর আদালত চলতি বছরের ২২ অক্টোবর মামলাটির স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে নথি পাওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে মামলাটি নিষ্পত্তি করতে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতকে নির্দেশ দেন।