বিএনপি জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছে মন্তব্য করে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, শনিবার তারা এক ব্যক্তিকে ধরে এনে জো বাইডেনের উপদেষ্টা পরিচয় দিয়ে তাকে দিয়ে সেখানে সংবাদ সম্মেলন করিয়েছে।
তিনি বলেন, বিভিন্ন সূত্র বলছে সেই ব্যক্তি ইসরায়েলের একজন এজেন্ট।
রবিবার (২৯ অক্টোবর) সচিবালয়ে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
আরও পড়ুন: গ্লোবাল গেটওয়ে ফোরামে আমন্ত্রণ প্রমাণ করে বিশ্বনেতারা শেখ হাসিনার পাশে আছেন: তথ্যমন্ত্রী
শনিবার মহাসমাবেশকে ঘিরে পুলিশ ও বিএনপি নেতা-কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের পর হঠাৎ নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন দলটির নেতা ইশরাক হোসেনসহ কয়েকজন। সেখানে একজন বিদেশি নাগরিকও বক্তব্য রাখেন। মিয়ান আরাফি নামে ওই ব্যক্তি নিজেকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের নির্বাচনী উপদেষ্টা হিসেবে পরিচয় দেন।
এ বিষয়ে সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে প্রশ্ন করা হলে তথ্যমন্ত্রী বলেন, শনিবার তারা একজন ব্যক্তিকে ধরে এনে জো বাইডেনের উপদেষ্টা পরিচয় দিয়ে তাকে দিয়ে সেখানে সংবাদ সম্মেলন করিয়েছে। গণমাধ্যমের সামনে কথা বলতে দিয়েছে, কথা বলেছেন। পাশে আবার তাদের বড় বড় নেতারা বসেছিলেন। মার্কিন দূতাবাস বিবৃতি দিয়ে বলেছে তিনি সরকারের কেউ নন এবং মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও বলেছেন এ ব্যাপারে তিনি কিছু জানেন না। কিন্তু এখানে স্পষ্টতো বিএনপি একটি জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছে।
মন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন সূত্র বলছে- আমাদের কাছে যে খবর আছে সেই ব্যক্তি হচ্ছেন ইসরাইলের একজন এজেন্ট। এটি বিভিন্ন সূত্র বলছে। ইসরায়েলের বর্বরতার বিরুদ্ধে বিএনপি-জামায়াত কিছু বলেনি।
তিনি আরও বলেন, এজন্য ইসরায়েল বিএনপির ওপর সন্তুষ্ট। তো অনেকে বলছে একজন ইসরায়েলি এজেন্টকে তারা পাঠিয়েছে, যাকে নিয়ে কালকে তারা সভা করেছে, এটি বিভিন্ন সূত্র বলছে।
গতকালের ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস থেকে একটি বিবৃতি দিয়ে নিন্দা জানিয়েছে। পাশাপাশি ভিসানীতিটি আবার স্মরণ করিয়ে দিয়েছে এবং এ ধরনের ঘটনা ঘটলে আবার ভিসানীতি আরোপ হতে পারে- এ বিষয়ে মতামত জানতে চাইলে তথ্যমন্ত্রী বলেন, সহিংসতার নিন্দা তো সবাই জানাতে পারে।
তিনি বলেন, আমরাও নিন্দা জানাচ্ছি। আমরা আশা করব যারা পুলিশ মেরেছে, পুলিশের ওপর হামলা চালিয়েছে, জাজেস কমপ্লেক্সে হামলা করেছে, হাসপাতালে হামলা চালিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে ভিসানীতি প্রয়োগ হবে, আমরা সেটা বিশ্বাস করি।
একটি দল সরাসরি গণমাধ্যমকর্মীদের ওপর হামলা চালাচ্ছে, বিষয়টি আপনারা কীভাবে দেখছেন- এমন প্রশ্নেন জবাবে তিনি বলেন, শনিবার বিএনপি-জামায়াত গণমাধ্যমকর্মীদের ওপর যে হামলা চালিয়েছে সেটার তীব্র নিন্দা জানাই। কোনো দলের পক্ষ হয়ে গণমাধ্যমকর্মীরা সেখানে যাননি। তারা সেখানে সংবাদ সংগ্রহে গেছেন।
মন্ত্রী বলেন, তাদের ওপর কেন হামলা হলো? যাদের ওপর হামলা হয়েছে তারা বিএনপি বিটের সাংবাদিক, তাদের ওপর হামলা পরিচালনা করা হয়েছে। তার মানে এটি গণমাধ্যমকর্মীর ওপর হামলা ও গণমাধ্যমের ওপর হস্তক্ষেপের শামিল। আমি এগুলোর তীব্র নিন্দা জানাই এবং এর বিচার হবে।
এর আগে তথ্যমন্ত্রী বলেন, বিএনপি শান্তিপূর্ণ সমাবেশের কথা বলে ২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশর ডাক দিয়েছিল। সরকার, পুলিশ প্রশাসন ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রশাসন তাদের সার্বিকভাবে সহযোগিতা করেছে।
তিনি বলেন, শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশের কথা বলে তারা সমাবেশ শুরু হওয়ার আগেই প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা চালিয়েছে। প্রধান বিচারপতি কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব নয়, প্রধান বিচারপতি একটি প্রতিষ্ঠান। বিচার বিভাগের প্রধান। তার বাসভবনে তারা হামলা চালিয়েছে এবং সেখানে ঢুকে পড়েছে।
আরও পড়ুন: দেশে গণতন্ত্রের অভিযাত্রাকে নস্যাৎ করতে দেওয়া হবে না: তথ্যমন্ত্রী
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের ৫২ বছরের ইতিহাসে হাজার হাজার মিছিল সেই বাসভবনের সামনে দিয়ে গেছে সরকারি দল, বিরোধী দল। কাকরাইলার মোড়ে অনেক সময় অনেক গণ্ডগোল হয়েছে, কিন্তু কখনো প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা হয়নি।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, বিএনপির আইনজীবীরা প্রধান বিচারপতির কার্যালয়ের দরজায়, প্রধান বিচারপতির খাস খামারার দরজায় লাথি মেরেছে। অর্থাৎ তারা বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠানকে তোয়াক্কা করে না। সেটি প্রমাণ হচ্ছে গতকালের ঘটনা। সবচেয়ে নেককারজনক হচ্ছে তারা পুলিশ হাসপাতালে হামলা চালিয়েছে। হাসপাতালে হামলা চালিয়ে ১৯টি গাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছে, ভাঙচুর করেছে অ্যাম্বুলেন্সসহ।
তিনি আরও বলেন, ইসরাইলি বাহিনী গাজায় হাসপাতালে হামলা চালিয়েছে। আর এখানে বিএনপি-জামায়াত হাসপাতালে হামলা চালিয়েছে।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, নাইটিঙ্গেল মোড়সহ বিভিন্ন জায়গায় পুলিশের উপর হামলা চালিয়ে একজন পুলিশকে পিটিয়ে পরে চাপাতি দিয়ে কোপ দিয়ে হত্যা করা হয়। একশোর বেশি পুলিশ সদস্য আহত, দুজনের অবস্থা গুরুতর এবং আনসারের ২৫ জন সদস্য আহত।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, শনিবার রাতে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে গেছি। রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালেও গেছি। সেখানে বহু পুলিশ যন্ত্রণায় ছটফট করছে। বেশিরভাগ পুলিশের মাথায় তারা আঘাত করেছে, যাতে মৃত্যু হয়।
হাছান মাহমুদ বলেন, যে পুলিশ সদস্যকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে আপনারা সেই জায়গা দেখেননি, আমি লাশ দেখেছি। পেছনে কোপ দিয়ে নামিয়ে ফেলা হয়েছে, মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য। এগুলো কোনো রাজনৈতিক দলের কাজ হতে পারে না। এগুলো সন্ত্রাসী দলের কাজ। বিএনপির জামায়াত যে আবার ২০১৩, ২০১৪, ২০১৫ সালের অবস্থায় ফিরে এসেছে শনিবার আপনারা দেখেছেন।
তিনি বলেন, যারা করেছে শুধু তাদের নয়, এটির দায় এটির নির্দেশ দাতাদের। কারণ তারা এই প্রস্তুতি নিয়ে এসেছিল। তারা বোমা নিক্ষেপ করেছে, পুলিশের উপর ককটেল নিক্ষেপ করেছে এবং পুলিশ সর্বোচ্চ ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, শনিবারের সংঘর্ষে শামীম মিয়া নামের যে যুবদল নেতা মারা গেছে বলে মির্জা ফখরুল সাহেবরা বলেছেন, তাদের রাজনীতি তো মিথ্যাচারের উপর। তার পরিবার বলছে দলের সঙ্গে যুক্ত ছিল না। তার গায়ে কোনো আঘাতের চিহ্ন ছিল না।
হাসপাতাল বলছে- তিনি হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা গেছেন। অর্থাৎ কী রকম মিথ্যাচার।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, পুলিশ সদস্য হত্যার দায় এড়ানোর জন্য একজন সাধারণ মানুষ তাদের এই অপকর্মের জন্য মৃত্যুবরণ করেছে, সেটিকে যুবদল বলে পরিচয় দিচ্ছে। এ ধরনের ন্যাক্কারজনক ঘটনা দেশ, জনগণ, সরকার বরদাশত করতে পারে না এবং আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ এ ধরনের ন্যাক্কারজনক ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতে দিতে পারি না। যারা এরকম ন্যাক্কারজনক ঘটনার নেতৃত্ব দিয়েছেন তারা দায় এড়াতে পারেন না। আমাদের দায়িত্ব দেশে শান্তিশৃঙ্খলা, জনগণের স্বস্তি স্থাপন করা, জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
আরও পড়ুন: ২৮ অক্টোবর রাজপথ আওয়ামী লীগের দখলে থাকবে: তথ্যমন্ত্রী