সিলেটের বিশ্বনাথে ধর্ষণের শিকার এক নারীর লাশ নিয়ে রাতভর ঘোরাঘুরির সময় লাশসহ অ্যাম্বুলেন্সটি আটক করে পুলিশে দিয়েছে জনতা। রবিবার সকালে বিশ্বনাথের লামাকাজি এলাকা থেকে ওই নারীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এসময় জব্দ করা হয় অ্যাম্বুলেন্সটিও। আর ওই নারীর মৃত্যুর ঘটনায় আটক ২ বৃদ্ধকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ।
জানা গেছে, সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার রাতে মারা যান মখলিছুন বেগম (৩২) নামের ৫ মাসের অন্তঃসত্ত্বা নারী। তিনি বিশ্বনাথ উপজেলার লামাকাজী ইউনিয়নের মির্জারগাঁও গ্রামের আবদুস সালামের মেয়ে।
এ তথ্য নিশ্চিত করে বিশ্বনাথ থানার উপপরিদর্শক(এসআই) অলক বলেন, রবিবার সকালে সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরির পর ময়নাতদন্তের জন্য লাশ ওসমানী মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠানো হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, মখলিছুন বেগম স্বামী পরিত্যক্তা হয়ে দুই সন্তান নিয়ে বাবার বাড়িতে বসবাস করছিলেন। বাবা দরিদ্র হওয়ায় মখলিছুন লামাকাজি বাজারের নৈশপ্রহরী মির্জারগাঁও গ্রামের বাসিন্দা কমলা মিয়ার বাসায় বেশ কিছুদিন ধরে ঝিয়ের কাজ করেন। এই সুবাদে কমলা মিয়া তার সত্তরোর্ধ্ব বিয়াই উপজেলার সত্তিশ গ্রামের রইছ আলীর সাথে তাকে (মখলিছুন) বিয়ে দেয়ার ফন্দি আটেন।
নানা প্রলোভন দেখিয়ে সত্তরোর্ধ্ব বৃদ্ধ রইছ আলীর সাথে বিয়ে দেয়া হয় মখলিছুনকে। বিয়ের চার দিনের মাথায় রইছ আলী জানতে পারেন, তার নব-বিবাহিতা স্ত্রী মখলিছুন বেগম পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। পরে দুই বিয়াই মিলে মখলিছুনকে সিলেট ওসমানী হাসপাতালে গর্ভপাত করাতে নিয়ে যান।
শুক্রবার বিকেলে হাসপাতাল থেকে ফেরার পর রইছ আলী মখলিছুন বেগমকে স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানান। এরপর তাকে বাবার বাড়িতে রেখে যান দুই বিয়াই।
সন্ধ্যায় মখলিছুন বেগমের শারীরিক অবস্থা খারাপ হলে তাকে উদ্ধার করে পুলিশের সহায়তায় ফের হাসপাতালে পাঠান তার বাবা। ওইদিন রাতেই কমলা মিয়া ও তার বিয়াই রইছ আলীকে গ্রেপ্তার করে থানা পুলিশ।
শনিবার রাতে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান মখলিছুন বেগম। তখন তার বাবা আব্দুস সালাম স্থানীয় ইউপি মেম্বার আবুল কালামকে সাথে নিয়ে মামলা দায়ের করতে বিশ্বনাথ থানায় অবস্থান করছিলেন। এই সুযোগে একজন অজ্ঞাতনামা নারী অভিভাবক পরিচয় দিয়ে হাসপাতাল থেকে একটি অ্যাম্বুলেন্স করে লাশ নিয়ে লামাকাজীর উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন এবং পথে মদিনা মার্কেট এলাকায় ওই অজ্ঞাতনামা নারী অ্যাম্বুলেন্স থেকে নেমে যান।
আরও পড়ুন: সিলেটে তরুণীকে ধর্ষণ, যুবক আটক
এরপর রাত ১২টার দিকে আব্দুস সালাম ও আবুল কালাম থানায় অবস্থানকালে হঠাৎ খবর পান- লামাকাজীতে একজন নারীর লাশ নিয়ে একটি অ্যাম্বুলেন্স অনেকক্ষণ ধরে ঘোরাঘুরি করছে। পরে সেটি স্থানীয় জনতা আটক করে রাখে।
খবর পেয়ে আব্দুস সালাম ও আবুল কালাম লামাকাজীতে গিয়ে মখলিছুনের লাশ শনাক্ত করেন। পরে রবিবার (২২ আগস্ট) সকালে বিশ্বনাথ থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে লাশ মর্গে পাঠিয়েছে। মখলিছুনের বাবা জানান, তার মেয়েকে ধর্ষণ করে হত্যা করা হয়েছে।
পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে আটক রইছ আলী জানান, মখলিছুনকে দেড় মাস আগে তিনি বিয়ে করেছেন। তবে মখিলছুন বেগম ৫ মাসের অন্তঃসত্ত্বা কীভাবে হলো সেটি তিনি জানেন না।
আরও পড়ুন: প্রবাসীর স্ত্রীর ঘর থেকে যুবকের লাশ উদ্ধার
বিশ্বনাথ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) অলক বলেন, লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি হয়েছে। ওসমানী হাসপাতাল থেকে ওই নারীর লাশ এখানে কীভাবে এলো, সে বিষয়ে এখনও বিস্তারিত বলতে পারছি না। এ নিয়ে অনুসন্ধান চলছে। এ ঘটনায় স্থানীয় রইছ আলী ও কমলা মিয়া নামের দুজনকে শুক্রবার রাতেই আটক করা হয়েছে। এর মধ্যে রইছ আলী নিজেকে ওই নারীর স্বামী দাবি করছে।
এ ব্যাপারে বিশ্বনাথ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গাজী আতাউর রহমান বলেন, এ ঘটনায় দুই জনকে গ্রেপ্তার এবং মামলা দায়ের করা হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মখলিছুনকে ধর্ষণ করা হয়েছে কি-না বা তার মৃত্যু কীভাবে হয়েছে তা ময়নাতদন্তের পর বলা যাবে।
তবে স্থানীয় একটি সূত্র জানিয়েছে, গর্ভপাত ঘটাতে গিয়ে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে ওই নারীর মৃত্যু হয়।
আরও পড়ুন: প্রতিবন্ধী পুনর্বাসন কেন্দ্রে ৪ তরুণীর আত্মহত্যার চেষ্টা