বহুল আলোচিত সিলেট এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে গৃহবধূকে সংঘবদ্ধধর্ষণের ঘটনার এক বছর পূর্ণ হলো আজ। গত বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর স্বামীকে আটকে রেখে ওই গৃহবধূকে গণধর্ষণের ঘটনার দু’টি মামলা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি প্রস্তাবও পাঠানো হয়। উচ্চ আদালতের আদেশে গণধর্ষণ, চাঁদাবাজি ও অস্ত্র আইনের দু’টি মামলার বিচার কার্যক্রম একই আদালতে এক সাথে চলবে । এজন্যে নতুন করে মামলার অভিযোগও গঠন করা হবে। তবে, আগামী ধার্য্য তারিখে কোন আদালতে নতুন করে অভিযোগ গঠন করা হবে তা এখনও নিশ্চিত নয়।
বাদীপক্ষের আইনজীবী প্যানেলের প্রধান এডভোকেট শহিদুজ্জামান চৌধুরী জানিয়েছেন, কয়েক মাস আগে মামলা দু’টি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানোর জন্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়। আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরবর্তী নির্দেশনার অপেক্ষায় রয়েছি। উচ্চ আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী সংঘবদ্ধধর্ষণ, চাঁদাবাজি ও অস্ত্র আইনের দু’টি মামলার বিচার হবে একই সাথে এবং একই আদালতে। এজন্যে নতুন করে অভিযোগ গঠন করতে হবে।
আরও পড়ুন: এমসি কলেজে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ: অধ্যক্ষ ও হোস্টেল সুপারকে সাময়িক বরখাস্তের নির্দেশ
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিশেষ পিপি এডভোকেট রাশিদা সাঈদা খানম উচ্চ আদালতের আদেশের ফলে নতুন করে অভিযোগ গঠন করার কথা নিশ্চিত করেন। তবে, দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে মামলা দু’টি পাঠানোর ব্যাপারে তার কাছে কোনো তথ্য নেই বলে তিনি জানান।
যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র
আলোচিত এই গণধর্ষণের ঘটনায় সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলার চান্দাইপাড়ার তাহিদ মিয়ার ছেলে সাইফুর রহমান (২৮), হবিগঞ্জ জেলার সদর উপজেলার বাগুনীপাড়ার শাহ জাহাঙ্গির মিয়ার ছেলে শাহ মো মাহবুবুর রহমান রনি (২৫), দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার উমেদনগরের মৃত রফিকুল ইসলামের ছেলে তারেকুল ইসলাম তারেক (২৮), জকিগঞ্জের আটগ্রামের মৃত অমলেন্দু লস্কর ওরফে কানু লস্করের ছেলে অর্জুন লস্কর (২৬), দিরাই উপজেলার বড়নগদীপুরের দেলোয়ার হোসেনের ছেলে রবিউল ইসলাম (২৫), কানাইঘাট উপজেলার লামা দলইকান্দির (গাছবাড়ী) সালিক আহমদের ছেলে মাহফুজুর রহমান মাসুম (২৫), সিলেট নগরীর গোলাপবাগ আবাসিক এলাকার মৃত সোনা মিয়ার ছেলে আইনুদ্দিন ওরফে আইনুল (২৬) ও বিয়ানীবাজার উপজেলার নটেশ্বর গ্রামের মৃত ফয়জুল ইসলামের ছেলে মিজবাউল ইসলাম রাজনকে (২৭) অভিযুক্ত করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে অভিযোগপত্র গত বছরের ৩ ডিসেম্বর আদালতে জমা দেয় পুলিশ। এতে ৫২ জনকে সাক্ষী রাখা হয়।
আরও পড়ুন: এমসি কলেজে ধর্ষণ: ধর্ষণ ও চাঁদাবাজির বিচার একসাথে চলবে
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শাহপরান থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ইন্দ্রনীল ভট্টাচার্য রাজন ঘটনার দুই মাস আট দিন পর ১৭ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্রটি আদালতে জমা দেন। গ্রেপ্তার হওয়া এই আট আসামির সকলেই অকপটে আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়। আট আসামির মধ্যে সাইফুর রহমান, শাহ মাহবুবুর রহমান রনি, তারেকুল ইসলাম তারেক ও অর্জুন লস্কর, মিজবাহুল ইসলাম রাজন ও আইনুদ্দিন ওরফে আইনুল ১৯ বছর বয়সী ওই নববধূকে গণধর্ষণ করে। রবিউল ইসলাম ও মাহফুজুর রহমান মাসুম ধর্ষণে সহযোগিতা করে। আট আসামির সকলেই ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল। তারা টিলগড় গ্রুপে সক্রিয় ছিল বলেও সূত্র জানিয়েছে। বর্তমানে আট আসামি সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে আটক রয়েছে।
আরও পড়ুন: এমসি কলেজে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ পেছাল
উল্লেখ্য, গেল বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর শুক্রবার বিকালে সিলেটের দক্ষিণ সুরমার জৈনপুরের ২৪ বছর বয়সী এক যুবক তার ১৯ বছর বয়সী নববিবাহিতা স্ত্রীকে নিয়ে প্রাইভেটকারযোগে এমসি কলেজ ক্যাম্পাসে ঘুরতে যান। এ সময় কয়েকজন যুবক ওই ব্যক্তি ও তাঁর স্ত্রীকে ঘিরে ধরে। এক পর্যায়ে প্রাইভেটকারসহ তাদেরকে জিম্মি করে কলেজের ছাত্রাবাসের অভ্যন্তরে নিয়ে যায় । এরপর স্বামীকে আটকে রেখে ছাত্রাবাসের এর সামনে প্রাইভেটকারের মধ্যেই গৃহবধূকে ধর্ষণ করে।