সারা দেশ কাঁপিয়ে পরীমণির জামিন হলো। বেশ জনপ্রিয় একটি বিষয়। বিভিন্ন টকশো, ওয়েবিনার, আলোচনা সভায় তাকে নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। অনেকেই তার সাহসের কথা বলছেন। আমরাসহ সবাই খুশি। কিন্তু আর দুজন পিয়াসা আর মৌ, তাদের কথা কি হারিয়ে গেছে? তাদের কথা কে বলবে? পরীমণি চর্চার মাঝখানে আমরা কি তাদের ভুলে গেছি?
কোনো আলাদা অপরাধ নয় তাদের
তাদের যে অপরাধ সেটা একই-মদ, ইয়াবা, ব্ল্যাকমেইল… তাদেরই প্রথম ‘রাতের রানী’ নাম দেয়া হয়। এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেছিলেন, ‘এরা দিনে ঘুমায় আর রাত ভর পার্টি করে। তারা বড়োলোকের ছেলেদের সাথে ফষ্টি নষ্টি করে, ছবি তোলে, তারপর ব্ল্যাকমেইল করে’ ইত্যাদি। তাদের বেশি দিন রিমান্ড হয়নি, পরে সেখান থেকে জেলে। তাদের জন্য কোনো আন্দোলন হয়নি, তাদের কোটি কোটি সমর্থক নাই। সেই কারণেই কি তাদের জামিনের জন্য কেউ হাইকোর্টে রিট করেনি?
আইন ও সালিশ কেন্দ্র?
আইন ও সালিশ কেন্দ্র কেবল পরীমণির জন্য রিট করলো কেন? তারা তো দেশের নামজাদা আইন সহায়ক ও নারী অধিকার বিষয়ক প্রতিষ্ঠান, কি হতো আর দুই-তিনটা নাম জুড়ে দিলে?
জামিনের অধিকার সবার আছে। তবু সবার কথা তুলছি না, পিয়াসা আর মৌয়ের কথা বলছি। কারণ তারাও কারো না কারো কন্যা, যে কোনো কারণেই হোক অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত তবে বিচার হয়নি এখনো। তাই জামিন চাওয়াটা কি অপরাধ? পাওয়াটা কি অন্যায়?
তাদের মুক্তি-জামিন হয়তো কোনো রাজনৈতিক বিজয় হবে না। হয়তো তারা কাউকে ‘বিচ’ বলবে না, পত্রিকা হেডলাইন করবে না, টকশো হবে না কিন্তু রাষ্ট্রের যে শক্তি তাতে তাদের জামিন দেয়াটা কিছুই নয়। সেই কারণেই বলছি।
আমাদের আন্দোলন ব্যক্তির জন্য হয়ে গেলে, যে উদ্দেশে এতো সব কথা, লেখা, মানববন্ধন সবই দুর্বল হয়ে যাবে। পরীমণির জামিন লাভে অনেকে রাজনৈতিক অর্জন খুঁজে পেয়েছেন, কেউ পেয়েছেন আদর্শগত বিজয়। সবার জামিন হলে সমাজের তেমন কোনো লাভ হবে না হয়তো। তবে প্রমাণ হবে গ্রেপ্তার হওয়ার বেলায় সব অপরাধী যেমন সমান, জামিন পাওয়ার ব্যাপারেও তাই। ওদের জামিন দিন।
আফসান চৌধুরী: এডিটর এট লার্জ, ইউএনবি
আরও পড়ুন: পরীমণির জামিন ও ‘ডোন্ট লাভ মি বিচ’
পরীমণি আর পাবলিকের জামিন হলো, অন্যদের কী হবে
পরীমণি, পিয়াসা ও হেলেনাসহ ৮ জনের ব্যাংক হিসাব তলব