নরসিংদীর মেহেরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল হাসানকে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। এ সময় আরও দুইজন আহত হন।
মঙ্গলবার দিবাগত রাত সোয়া ১২টার দিকে মাধবদী থানার মেহেরপাড়া ইউনিয়নের ভগিরথপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
নরসিংদীর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। নিহত মাহবুবুল হাসান ভগিরথপুর গ্রামের হাজী ইমাম উদ্দিনের ছেলে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও নিহতের স্বজনরা জানান, মঙ্গলবার রাতে ভগিরথপুর মাজার বাসস্ট্যান্ড এলাকার ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কার্যালয় থেকে ৮/১০ জন দলীয় নেতা-কর্মীকে সঙ্গে নিয়ে বাসায় ফিরছিলেন মাহবুবুল হাসান। ওবায়দুল্লাহ টেক্সটাইলের সামনে পৌঁছলে ৭/৮ জন অস্ত্রধারী দুর্বৃত্ত তাদের উপর হামলা করে। এসময় গুলি ও ধারালো অস্ত্রের আঘাতে মাহবুবুল হাসান, সাঈদ হাসান পাপ্পু ও ফরহাদ মিয়া নামে তিনজন আহত হন।
আরও পড়ুন: তাবিজ-কবজ ও যাদু-টোনার অভিযোগে কবিরাজকে কুপিয়ে হত্যা
পরে স্থানীয়রা আহতদের উদ্ধার করে নরসিংদী সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক চেয়ারম্যান মাহবুবুল হাসানকে মৃত ঘোষণা করেন। আহত দুইজনকে ঢাকা মেডিকেলে পাঠানো হয়।
খবর পেয়ে সদর হাসপাতালে ছুটে আসেন নিহতের স্বজন, আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীরা।
রাজনৈতিক পূর্ব বিরোধের জেরে পরিকল্পিতভাবে এ হত্যার ঘটনা ঘটানো হয়েছে বলে দাবি কর্মী সমর্থক ও স্বজনেরা।
প্রত্যক্ষদর্শী রবিন মিয়া বলেন, দলীয় কার্যালয় থেকে মাহবুবুল হাসানসহ তারা বাড়ি ফিরছিলেন। এসময় সামনে থাকা বালু ট্রাকের আড়াল থেকে ৭/৮ জন অস্ত্রধারী ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। এরপরই মাহবুবুলকে কোপাতে থাকে। এসময় সঙ্গে থাকা লোকজন তাকে বাঁচাতে গেলে তাদের উপরও হামলা করে।
মাহবুবুল হাসানের ছোট ভাই হাফেজ মোহাম্মদ অলিউল্লাহ বলেন, মাদক ব্যবসা, অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে সবসময় প্রতিবাদী ছিলেন। সম্প্রতি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আমার ভাই যে পক্ষে কাজ করেছে তারা বিজয়ী হয়েছে। এ হিংসার জেরে পরাজিত রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যা করেছে।
নরসিংদী সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) মাহমুদুল কবীর বাশার বলেন, দিবাগত রাত পৌনে ১টার দিকে মেহেরপাড়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মহবুবুল হাসানসহ তিনজনকে রক্তাক্ত অবস্থায় হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আনা হয়। মাহবুব হাসানের মাথার পেছনে ঘাড়ে বড় ক্ষতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। গুলির বিষয়ে ময়নাতদন্তের পর বলা যাবে। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়েছে। এসময় সাঈদ হাসান পাপ্পু ও ফরহাদ মিয়া নামে আরও দুইজনকে আহতাবস্থায় ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
নরসিংদী সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তানভীর আহমেদ সদর হাসপাতালে গিয়ে হতাহতের বিষয়টি নিশ্চিত করলেও ঘটনাটি মাধবদী থানার হওয়ায় তদন্তের পর এ বিষয়ে বিস্তারিত জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানাবেন বলে জানান। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়েছে বলে জানান তিনি।
নরসিংদীর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সাবেক চেয়ারম্যান হত্যার পর পুলিশ ঘটনার তদন্তের পাশাপাশি অপরাধীদের ধরতে তৎপরতা চালাচ্ছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত চারজনকে আটক করা হয়েছে। পরবর্তী আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
আরও পড়ুন: কুষ্টিয়ায় পাওনা টাকার জেরে স্ত্রীর বড় ভাইকে কুপিয়ে হত্যা