বরিশালে হাড় কাঁপানো শীতে বিপর্যস্ত জনজীবন। শনিবার বরিশালে মৌসুমের সর্বনিম্ন ১০ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে স্থানীয় আবহাওয়া অফিস।
তীব্র শীতে বিশেষ করে দিনমজুর ও খেটে খাওয়া মানুষ পড়েছে বিপাকে।
আগামী কয়েক দিনে তাপমাত্রা আরও কমতে পারে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তারা।
আরও পড়ুন: কুড়িগ্রামে তাপমাত্রা কমে ১১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস
এদিকে বরিশালে শিশু ও বয়স্কদের ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা বেড়েছে। বরিশাল শের ই বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় (শেবাচিম) হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে গত কয়েক দিন ধরে ধারণ ক্ষমতার ৭ থেকে ১০ গুণ রোগী চিকিৎসা নিচ্ছে।
পাশাপাশি আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে বয়স্ক রোগীর সংখ্যাও। শয্যা সংকট থাকায় তাদের মেঝেতে শুইয়ে অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে সেবা দেওয়া হচ্ছে। এতে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন রোগীর স্বজনরা।
এমন বিরূপ আবহাওয়ার কারণে সব চেয়ে বেশি বিপাকে পরেছেন শ্রমজীবীসহ ছিন্নমূলরা। বিকাল পর্যন্ত সূর্যের দেখা না পাওয়ায় গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছাড়া কেউ ঘরের বাইরে বের হয়নি। ফলে অন্যান্য দিনের তুলনায় দোকানপাট কম খুলেছে।
আরও পড়ুন: দিনাজপুরে আজ দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮.৮ ডিগ্রি
স্বাভাবিকভাবে জনসাধারণের উপস্থিতিও ছিল সীমিত। এদিকে শীতে ঠান্ডাজনিত রোগে শেবাচিম হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে বৃহস্পতিবার ধারণ ক্ষমতার সাত গুণ বেশি শিশু চিকিৎসাধীন ছিল। এরপর শুক্র ও শনিবারও বেড়েছে শিশু ওয়ার্ডের রোগীর সংখ্যা। এর বাইরে বহির্বিভাগেও প্রতিদিন সেবা নিচ্ছেন দুই থেকে তিন শতাধিক শিশু।
বরিশাল সদর উপজেলার শায়েস্তাবাদ এলাকার নদী তীরের বাসিন্দা রিপন বলেন, নদী তীর এলাকায় কুয়াশার পাশাপাশি ঠান্ডা বাতাস বইছে। এ কারণে ঘরের মধ্যে টিকে থাকা দায় হয়ে গিয়েছে। আগুন বা রুম হিটার ছাড়া নদী তীরের ঘরে থাকা যায় না। আমরা এ শীতে খুবই বিপদে রয়েছি।
পথশিশু ইয়াসিন জানায়, দিনরাত তীব্র শীতের মধ্যে টার্মিনালেই থাকতে হচ্ছে। কয়েক দিন ধরে খুবই শীত পড়ছে। এ শীতের মধ্যে কাজ বাদ দিয়ে সারাদিন আগুনের পাশে বসে থাকতে হচ্ছে।
আরও পড়ুন: চুয়াডাঙ্গা ও কিশোরগঞ্জের নিকলীতে আজ দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা
নগরীর লঞ্চটার্মিনালের শ্রমিক আবদুর রহমান বলেন, তীব্র শীত আর বাতাসে টিকে থাকাই দায়। সংসার চালানোর তাগিদে বাইরে বের হয়েছি। তা না হলে ঘর থেকেই বের হতাম না।
রিকশাচালক লোকমান মিয়া বলেন, ঠান্ডা বাতাসের মধ্যেও রিকশা নিয়ে বের হয়েছি। শীতের কারণে রাস্তায় লোকজন কম থাকায় আয়ও অনেক কমেছে।
গৌরনদীর মাজেদা বেগম বলেন, জ্বর-সর্দিতে আমার ছেলে আক্রান্ত হওয়ায় শেবাচিমে ভর্তি করিয়েছি। কিন্তু এখানে এসেও সেবা পাইনি।
আরও পড়ুন: ২ দিন পর তাপমাত্রা বাড়তে পারে: আবহাওয়া অফিস
হাসপাতালের পরিচালক ডা. এইচএম সাইফুল ইসলাম বলেন, স্থান সংকটের কারণে শয্যা কম। তাই বাধ্য হয়ে শিশুদের মেঝেতে বিছানা দিয়ে সেবা দিচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, ওয়ার্ডে ধারণ ক্ষমতার অধিক রোগী থাকার পাশাপাশি রোগীর স্বজনরাও প্রতিনিয়ত মেঝে নোংরা করে। তারপরও সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিত করছি আমরা।
এসময় শিশুদের সুস্থ রাখতে গরম কাপড়ে শিশুদের আবৃত রাখাসহ অভিভাবকদের সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
আরও পড়ুন: তেঁতুলিয়ায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৭.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড
বরিশাল আবহাওয়া অফিসের উচ্চ পর্যবেক্ষক মাসুদ রানা রুবেল জানান, একই সঙ্গে সকালে ২ নটিক্যাল মাইল বেগে বাতাস বয়ে গেছে। তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামলে মৃদ্যু শৈত্যপ্রবাহ অনুভব হয়।
তিনি আরও জানান, এখন মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে না গেলেও শৈত্যপ্রবাহ অনুভূত হচ্ছে। এমন শীত আগামী তিন থেকে চার দিন অব্যাহত থাকবে। তারপর ধীরে ধীরে তাপমাত্রা বাড়তে পারে। বরিশালে চলতি মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: দিল্লিতে রেড অ্যালার্ট জারি