দফায় দফায় সিদ্ধান্ত বদল করে ধর্মঘট অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন চা শ্রমিক নেতারা। ৩০০ টাকা মজুরির দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ারও ঘোষণা দিয়েছেন তারা।
শনিবার (২০ আগস্ট) মধ্যরাতে এক ভিডিও বার্তায় আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়ে চা শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নিপেন পাল বলেন, শনিবার বিকালে শ্রম অধিদপ্তরের সাথে আমরা বৈঠকে বসি। সেখানে আমাদের মজুরি ২৫ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব দেয়া হয় এবং প্রধানমন্ত্রী ভারত সফর শেষে ফিরে আমাদের সাথে বসবেন জানিয়ে আমাদের ধর্মঘট প্রত্যাহারের অনুরোধ করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর প্রতি সম্মান জানিয়ে ধর্মঘট প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেই। তবে আমি কোনো চুক্তিতে স্বাক্ষর করিনি।
তিনি বলেন, বৈঠক শেষে বেরিয়ে আমি সাধারণ চা শ্রমিকদের ক্ষোভ আঁচ করতে পারি। তারা ২৫ টাকা মজুরি বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলন চালিয়ে যেতে চান। আমরাও তাদের সাথে একমত। তাই আমি আমার আগের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে নিচ্ছি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে।
এর আগে বিকালে শ্রম অধিদপ্তরের সাথে বৈঠক শেষে বেরিয়ে নিপেন পাল বলেছিলেন, প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসে আমরা ধর্মঘট প্রত্যাহার করছি। আমাদের মজুরি ২৫ টাকা বাড়িয়ে ১৪৫ টাকা করা হয়েছে। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী ভারত সফর থেকে এসে আমাদের সাথে বসবেন বলে জানিয়েছেন। সেখানে আমাদের দাবি-দাওয়া তাঁকে জানানো হবে। তাই তাঁর আশ্বাসে আমরা আপাতত ধর্মঘট প্রত্যাহার করছি। রবিবার থেকে সব শ্রমিকরা কাজে যোগ দেবে।
দৈনিক মজুরি ১২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০০ টাকা উন্নীতের দাবিতে গত ১৩ আগস্ট থেকে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট শুরু করেন চা শ্রমিকরা। ধর্মঘটের ৮ দিনের মাথায় শনিবার দুপুরে মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলের বিভাগীয় শ্রম দপ্তরের কার্যালয়ে শ্রম অধিপ্তর ও সরকারের প্রতিনিধির সাথে বৈঠকে বসেন চা শ্রমিক নেতারা।
পড়ুন: ‘প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসে চা শ্রমিকদের ধর্মঘট স্থগিত, প্রত্যাহার নয়’
বৈঠক শেষে শ্রমিক নেতারা ধর্মঘট প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত জানানোর পরই ক্ষোভ প্রকাশ করেন সাধারণ চা শ্রমিকরা। এমন সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে সিলেট, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জে বিক্ষোভ করেন শ্রমিকরা। তারা ২৫ টাকা মজুরি বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ারও ঘোষণা দেন। এসময় নেতাদের বিরুদ্ধেও বিষেদগার করেন শ্রমিকরা।
অন্দোলন নিয়ে এই বিভক্তির প্রেক্ষিতে শনিবার রাতে সিলেট ভ্যালির চা শ্রমিক নেতাদের নিয়ে নিজ কার্যালয়ে বৈঠকে বসেন সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান।
বৈঠক শেষে রাত ১১ টায় চা শ্রমিক ইউনিয়নের সিলেট ভ্যালির সভাপতি রাজু গোয়ালা বলেন, আমরা ধর্মঘট প্রত্যাহার করিনি। প্রধানমন্ত্রীর সাথে বৈঠক পর্যন্ত স্থগিত করেছি। প্রধানমন্ত্রী ভারত সফর থেকে ফিরে আমাদের সাথে বসবেন বলে জানিয়েছেন। তাঁর সম্মানে আমরা ততদিন পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
রাজু গোয়ালা আরও বলেন, আমাদের মজুরি মাত্র ২৫ টাকা বাড়ানো হয়েছে। এতে আমরা কেউই সন্তুষ্ট না। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী যেহেতু আশ্বাস দিয়েছেন, ভারত থেকে ফিরে আগামী মাসে আমাদের সাথে বসবেন। আমাদের দাবি দাওয়া শুনবেন তাই আমরা তাঁর প্রতি সম্মান জানিয়ে ধর্মঘট আপাতত স্থগিতের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আশা করি, প্রধানমন্ত্র্রী আমাদের দাবি দাওয়া শুনে একটি গ্রহণযোগ্য সমাধানের উদ্যোগ নেবেন।
রাজু বলেন, সারাদেশের কথা জানি না। তবে আমাদের সিলেট ভ্যালির ২৩ বাগানের শ্রমিকরা আন্দোলন স্থগিত করতে সম্মত হয়েছে। এখন আমরা আবার সব বাগানের পঞ্চায়েত কমিটির সাথে বসবো।
রবিবার থেকে শ্রমিকরা যথারীতি কাজে যোগ দেবে বলেও সেসময় জানান রাজু।
সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমানও জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীর প্রতি সম্মান দেখিয়ে রবিবার থেকে চা শ্রমিকরা কাজে যোগ দিতে সম্মত হয়েছে।
তবে এর কিছুক্ষণ পরই নিজের মত পরিবর্তন করেন এই চা শ্রমিক নেতা। রাত ১টার দিকে ফেসবুকে দেয়া এক স্ট্যাটাসে রাজু লিখেন, সিলেট ডিসি অফিসে মিটিং চলাকালীন সময়ে আমি কেন্দ্রীয় কমিটির পরিবর্তনকৃত সিদ্ধান্ত অবগত ছিলাম না। সিলেট ভ্যালি কার্যকরী পরিষদ বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়ন বি ৭৭ এর প্রত্যেকটি সিদ্ধান্তের সাথে ছিল, আছে, থাকবে। এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে রাজু গোয়ালা বলেন, আমাদের আন্দোলন চলবে।
এরপর রবিবার সকাল থেকে ধর্মঘট শুরু করেন তারা।
মাত্র ২৫ টাকা মজুরি বাড়ানোতে শ্রমিকরা ক্ষুব্ধ জানিয়ে চা শ্রমিক অধিকার আন্দোলনের সভাপতি রিতেশ মোদী বলেন, শ্রমিকরা এই সমঝোতা মানে না। তারা আন্দোলন চালিয়ে যেতে চায়। আমাদের কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।
আরও পড়ুন: মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে কাল থেকে চা শ্রমিকদের অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট
চা শ্রমিকদের মজুরি ২০১৯ সালেই বৃদ্ধি করা উচিৎ ছিল: গবেষক আশ্রাফুল