চট্টগ্রামে বিনা অপরাধে তিন বছর কারাভোগ করে মুক্তি পাওয়া মিনুর রহস্যজনক মৃত্যুর পর তাঁর বড় ছেলে ইয়াছিন (১২) নিখোঁজ হয়েছেন। মঙ্গলবার সকাল থেকে তার কোন খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।
ইয়াছিন কয়েক বছর ধরে নগরীর ষোলশহর রেলস্টেশনে একটি দোকানে কাজ করতো।
নিখোঁজের পর থেকে ইয়াসিনকে খোঁজে বেড়াচ্ছেন মিনুর ভাই মো. রুবেল। তিনি সর্বশেষ মঙ্গলবার সকালে ভাগ্নের সন্ধানে সেই দোকানে যান। কিন্তু দোকান ভেঙে ফেলায় খোঁজ পাওয়া যায়নি।
আরও পড়ুন: কারাগার থেকে মুক্তি পেলেও সড়কে প্রাণ গেল সেই মিনুর
এর আগে ২৮ জুন সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতের পর ‘অজ্ঞাত’ ব্যক্তি হিসেবে মিনুকে দাফন করা হয়। তবে ট্রাক চাপায় তার মারা যাওয়াকে অস্বাভাবিক দাবি করেন তার আইনজীবী গোলাম মাওলা মুরাদ।
ইয়াসিন নিখোঁজের ব্যাপারে মো. রুবেল বলেন, মিনু আপা মৃত্যুর খবর জানার পর থেকে তাঁর বড় ছেলে ইয়াছিনকেও খোঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। প্রথমে শুনেছিলাম দোকানের মালিকের সঙ্গে বাঁশখালী গিয়েছিল। কিন্তু ইয়াছিন যে দোকানে চাকরি করতো সেটি এখন নেই। বিষয়টি পুলিশকে জানোনা হয়েছে।
আরও পড়ুন: কারাগার থেকে মুক্তি পেলেন নিরপরাধ মিনু
মিনুর মৃত্যু নিয়েও তিনি মুখ খোলেন। রুবেল বলেন, মিনুর মৃত্যুতে রহস্য থাকতে পারে। যারা মিনুকে কারাগারে নিয়ে গেছেন, তারা শক্তিশালী। কেউ যদি মিনুকে হত্যা করে থাকে তাকে বিচারের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
মিনুর আইনজীবী গোলাম মাওলা মুরাদ গণমাধ্যমকে বলেন, মিনুর মৃত্যু স্বাভাবিক নয়। মাত্র ১৩ দিন আগে কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন তিনি। তিন বছর পর জেল থেকে মুক্তি পেয়ে পরিবারের সঙ্গেই ছিলেন। জেল থেকে বের হওয়ার পর তিনি কিছুটা মানসিক সমস্যায় ভুগছিলেন। বাসা থেকে ৪ কিলোমিটার দূরে রাস্তায় মিনু আসলেই সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন, নাকি অন্য কেউ মিনুকে মেরে ফেলেছে? মিনুর মৃত্যু ঘটনাটির তদন্ত চলছে। যদি বিচার বিভাগীয় তদন্ত হয়, তাহলে ভালো হবে।
তিনি আরও বলেন, মিনুর মৃত্যুর পর দিনই বেওয়ারিশ মরদেহ হিসেবে দাফন করেছে পুলিশ। বিনা অপরাধে জেল খাটায় বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচারের কারণে মিনু বেশ পরিচিত মুখ ছিলেন। মিনুর মরদেহ কিভাবে বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা হয়?
মিনুর মৃত্যুর ঘটনায় সড়ক দুর্ঘটনা আইনে দায়ের করা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. খোরশেদ আলম বলেন, সড়কের ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। সিনিয়র স্যারদেরকেও দেখানো হচ্ছে। গাড়িটি শনাক্তের চেষ্টা চলছে। দুর্ঘটনাটি রাতের বেলায় হওয়ায় একটু সময় লাগছে।
আরও পড়ুন: অর্থের বিনিময়ে অন্যের সাজা ভোগ করা মিনুকে মুক্তির নির্দেশ
জানা গেছে, চট্টগ্রাম নগরীর কোতোয়ালি থানার রহমতগঞ্জে একটি বাসায় ২০০৬ সালের জুলাই মাসে মোবাইলে কথা বলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে গার্মেন্টকর্মী কোহিনূর আক্তারকে গলা টিপে হত্যা করা হয়। এরপর একটি গাছের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখা হয়। পারভীন আত্মহত্যা করেছেন বলে দাবি করেন গার্মেন্টকর্মী কুলসুম আক্তার কুলসুমী। এরপর থানায় অপমৃত্যু মামলা হয়।
মামলায় পুলিশ দুই বছর তদন্ত শেষে পারভিনকে হত্যা করা হয়েছে মর্মে প্রতিবেদন দিলে মামলাটি হত্যা মামলায় রূপান্তর করা হয়। এর মধ্যে এক বছর তিন মাস জেল খেটে জামিনে মুক্তি পান কুলসুম।
মামলার বিচার শেষে ২০১৭ সালের নভেম্বরে তৎকালীন অতিরিক্ত চতুর্থ মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. নুরুল ইসলাম ওই হত্যা মামলায় আসামি কুলসুম আক্তার কুলসুমীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডসহ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেন। ওই সাজার পরোয়ানামূলে ২০১৮ সালের ১২ জুন কুলসুম আক্তার কুলসুমীর বদলি হয়ে মিনু কারাগারে যান।