সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত ব্যক্তিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেয়ার অজুহাতে স্বজনদের কাছে মোটা অংকের টাকা দাবি করেছেন একটি প্রাইভেট অ্যাম্বুলেন্স চালক ও মালিক। বৃহস্পতিবার এই ঘটনা ঘটেছে।
সূত্রমতে, সড়ক দুর্ঘটনায় আহত বাসযাত্রী হাসপাতালের রেজিস্ট্রারে চিকিৎসাধীন থাকলেও রোগীর খোঁজ মিলেছে প্রাইভেট অ্যাম্বুলেন্সে, তবে জীবিত নয়। হাসপাতালে এসে স্বজনরা এই রোগীকে পেয়েছেন মৃত।
আরও পড়ুন: কুমিল্লায় যাত্রীবাহী বাসে হঠাৎ আগুন: শিশুসহ নিহত ২, আহত ২০
বৃহস্পতিবার ভোরে কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের দেবিদ্বারে দুর্ঘটনার শিকার হয়ে তিশা পরিবহনের একটি বাসে ১৫ যাত্রী আহত হয়। ওই ঘটনায় আহতদের মধ্যে ১২ জনকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নেয়া হয়। ভর্তি হওয়া গুরুতর আহত বাস যাত্রীদের একজন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলার উত্তর বাঙ্গরা গ্রামের শাহিন মিয়ার ছেলে মাহবুবুল আলম বাবুল। সকালে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য অ্যাম্বুলেন্স যোগে ঢাকায় নেয়া হচ্ছে বলে মোবাইল ফোনে রোগীর স্বজনদের জানায় হাসপাতালের সামনে থাকা প্রাইভেট অ্যাম্বুলেন্স চালক রোহান। এজন্য অ্যাম্বুলেন্স চালক তাদের কাছে ৩০ হাজার টাকা দাবি করেন। দ্রুত এ টাকা পাঠাতে বলেন। কিন্তু অনেক নাটকীয়তার পর ওই অ্যাম্বুলেন্স চালক আবার কল করে ১৫ হাজারে নেমে আসেন। সবশেষে ১১ হাজার টাকা দাবি করেন। এদিকে এই খবর পেয়ে বাবুলের স্বজনরা কুমেক হাসপাতালে আসেন। হাসপাতালে এসে দেখেন তাদের রোগী আহত বাবুল সিটে নেই। তারা বাবুলকে মৃত পান অ্যাম্বুলেন্সে।
আরও পড়ুন: কুমিল্লায় তৃতীয় লিঙ্গের একজনকে ছুরিকাঘাতে হত্যা
এক পর্যায়ে বিষয়টি নিয়ে রোগীর স্বজনরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সামনে মালিক ও চালকের সাথে বাকবিতন্ডায় জড়িয়ে পড়েন। এ সময় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অ্যাম্বুলেন্সের মালিক ও চালককে ডেকে এনে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন। রোগীর স্বজনরা অভিযুক্ত অ্যাম্বুলেন্স মালিক ও চালককে আটক করলেও পরে তারা কৌশলে পালিয়ে যায়।
ঢাকা মেট্রো-৭১৩০৭২ নম্বরের অ্যাম্বুলেন্সটির মালিক ইউছুফের বাড়ি কুমিল্লা নগরীতে এবং চালক রোহান কোতোয়ালি থানাধীন মুরাদপুর এলাকার মো. রফিকের ছেলে।
আরও পড়ুন: কুমিল্লায় যাত্রীদের নিরাপত্তায় চালকের পরিচিতি কার্ড সংযুক্তি শুরু
রোগীর স্বজন সাইফুল ইসলামের অভিযোগ, সড়ক দুর্ঘটনায় আহত রোগী হাসপাতালে ভর্তি থাকার কথা কিন্তু কোন ছাড়পত্র কিংবা রেফার করা ছাড়া রোগী অ্যাম্বুলেন্সে যায় কীভাবে? এ ঘটনার জন্যে তিনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবহেলাকে দায়ী করেন।
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতলের পরিচালক ডা. মোহাম্মদ মহিউদ্দিন বলেন, ‘ভোর বেলায় হাসপাতালে লোকজন কম থাকার সুযোগে জরুরি বিভাগের কাছ থেকে চক্রটি আহত রোগীটিকে নিয়ে যায়। যারা এই কাজটি করেছে, গুরুতর অন্যায় করেছে।’
হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র ছাড়া রোগী অ্যাম্বুলেন্সে গেল কীভাবে এমন প্রশ্নের তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।
কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) আজিম-উল-আহসান বলেন, ‘বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। পুলিশ মেডিকেল কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা নিয়ে এই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবে।’