কনকনে ঠান্ডা ও ঘন কুয়াশায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে লালমনিরহাটের খেটে খাওয়া অসহায় মানুষের জীবন। ভোর হতেই জেলা সদরসহ পাঁচটি উপজেলাজুড়ে কুয়াশার ঘনত্ব কয়েক গুণ বেড়ে যাচ্ছে। রাস্তা, মাঠ ও বসতবাড়ি ঢেকে যাচ্ছে কুয়াশার চাদরে। উত্তরের হিমেল হাওয়ায় শীত এখানে শুধু একটি ঋতু নয়, বরং সাধারণ মানুষের জন্য টিকে থাকার কঠিন এক সংগ্রামে পরিণত হয়েছে।
কুড়িগ্রাম আবহাওয়া পর্যবেক্ষণকেন্দ্রের তথ্যমতে, বুধবার সকাল ৬টায় লালমনিরহাটে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল শতভাগ এবং গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় প্রায় সাড়ে ৮ কিলোমিটার। আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, আগামী কয়েক দিনে তাপমাত্রা আরও কমার সম্ভাবনা রয়েছে।
শীত ও কুয়াশায় সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন তিস্তা নদীতীরবর্তী চরাঞ্চল ও খোলা প্রান্তরের বাসিন্দারা। টিনের চালাঘর, ফাঁকা দেওয়াল আর কয়েক টুকরো পুরোনো কাপড়ই তাদের শীত নিবারণের একমাত্র সম্বল। গভীর রাতে কুয়াশা শিশিরের মতো নয়, বরং বৃষ্টির মতো ঝরে পড়ছে এখানে। এতে ভিজে যাচ্ছে ঘরবাড়ি ও কাপড়চোপড়; বেড়ে যাচ্ছে শীতের তীব্রতা।
কালীগঞ্জ উপজেলার কাকিনা ইউনিয়নের চরের বাসিন্দা আব্দুল হাই বলেন, এত ঠান্ডায় হাত-পা শক্ত হইয়া যায়। রাইতে ঠিকমতো ঘুম আইসে না। নদীপাড়ের মানুষ, বড় কষ্টে আছি। আর খুব বেশি বাতাস আইছে বাহে।
জেলা সদর, হাতীবান্ধা, পাটগ্রাম, আদিতমারী, কালীগঞ্জ উপজেলাজুড়ে সকাল থেকেই কুয়াশার কারণে চারপাশের তেমন কিছুই দেখা যায় না। দিনের বেলায়ও যানবাহনগুলোকে হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। এতে ভোরে কাজে বের হওয়া দিনমজুর, কৃষক ও শ্রমজীবী মানুষের ভোগান্তি বেড়েছে।
আদিতমারী রেলওয়ে স্টেশন এলাকার অটোরিকশাচালক সামছুল হক (৫৭) বলেন, শীতে শরীর নড়ে না, তাও সকাল হইলেই গাড়ি নিয়ে বাহির হইতে হয়। কাজ না করলে খাবার জুটে না।
শীতের সঙ্গে সঙ্গে রোগবালাইও বাড়ছে জেলাজুড়ে। জেলা সদর হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে শিশু ও বয়স্ক রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। স্বর্দি-কাশি, শ্বাসকষ্ট ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে অনেকে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হচ্ছেন। তবে দরিদ্র পরিবারের অনেকেরই প্রয়োজনীয় ওষুধ কেনার সামর্থ্য নেই।
আদিতমারি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ডা. আজমল বলেন, শীতে স্বাস্থ্যের পরিচর্যায় শিশু ও বয়স্কদের বিশেষভাবে সতর্ক থাকতে হবে। ঠান্ডা এড়িয়ে চলা এবং অসুস্থ হলে দ্রুত চিকিৎসা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।