তিনি বলেন, ‘এই করোনা মহামারির বছরে পৃথিবীর প্রায় সকল দেশেই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নেতিবাচক হয়েছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল ও সুদক্ষ নেতৃত্বে বাংলাদেশ প্রায় সাড়ে ৫ শতাংশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করে বিশ্বের ধনাত্মক প্রবৃদ্ধি অর্জনকারী মাত্র ২২ দেশের অন্যতম স্থান অধিকার করেছে। এবং এই ২২ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান উপরের দিকেই। একইসাথে করোনা মোকাবিলার ক্ষেত্রেও ব্লুমবার্গ প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশ উপমহাদেশের মধ্যে প্রথম ও সমগ্র বিশ্বের মধ্যে ২০তম।’
আরও পড়ুন: করোনা নিয়ন্ত্রণে থাকায় অর্থনীতি সচল আছে: স্বাস্থ্যমন্ত্রী
সচিবালয়ে বছরের শেষ দিন উপলক্ষে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে তিনি এ কথা বলেন।
এর আগে মন্ত্রী তথ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষ থেকে জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউট (এনআইএমসি) আয়োজিত ‘মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু ও গণমাধ্যম’ শীর্ষক অনলাইন সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন। এনআইএমসি’র মহাপরিচালক শাহিন ইসলামের সভাপতিত্বে সেমিনারে তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. মুরাদ হাসান, তথ্যসচিব খাজা মিয়া এবং মন্ত্রণালয়ের সংস্থা প্রধানরা সংযুক্ত ছিলেন।
সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের সেন্টার ফর ইকোনোমিক্স অ্যান্ড বিজনেস রিসার্চ প্রকাশিত প্রতিবেদন উদ্ধৃত করে হাছান বলেন, ‘তারা বলছে, বাংলাদেশ ২০৩০ সাল নাগাদ ২৮তম অর্থনীতির দেশ হবে, ২০৩৫ সাল নাগাদ হবে পৃথিবীর ২৫তম অর্থনীতির দেশ। অর্থাৎ বাংলাদেশের অর্থনীতির অবস্থান দাঁড়াবে পৃথিবীতে বহু উন্নত দেশেরও ওপরে।’
আরও পড়ুন: দেশের অর্থনীতি, জিডিপি নিয়ে সরকার মিথ্যাচার করছে: ফখরুল
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘২০২০ সালে আমাদের অন্যতম বড় অর্জন হচ্ছে কোনো বৈদেশিক সাহায্য ছাড়া সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতু প্রায় সম্পন্ন হয়েছে। করোনাকালেও বাংলাদেশে মানুষের মাথাপিছু আয় ১৯০০ ডলার থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০৬৪ ডলারে উন্নীত হয়েছে। সম্প্রতি আইএমএফ রিপোর্ট বলছে, আগামী বছর বাংলাদেশে মাথাপিছু আয় ভারতকে ছাড়িয়ে যাবে।’
তিনি জানান, ডিজিটাল বাংলাদেশ হওয়ার কারণে এ করোনা মহামারির প্রতিবন্ধকতা জয় করে দেশে শারীরিক-সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখেও সরকারযন্ত্র, ব্যবসা-বাণিজ্য ও অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম সচল রাখা সম্ভব হয়েছে। অনেক বিশেষজ্ঞের আশঙ্কা ভুল প্রমাণ করে মহামারিতে একজন মানুষও না খেয়ে মৃত্যুবরণ করেননি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীরা জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন এবং ১ কোটি ২৫ লাখ মানুষের কাছে ত্রাণসামগ্রী পৌঁছে দিয়েছেন উল্লেখ করে দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘সে কারণে আমাদের বহু নেতা করোনা আক্রান্ত হয়েছেন, মৃত্যুবরণ করেছেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির ৮১ জনের মধ্যে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। উপদেষ্টামণ্ডলী এবং সংসদ সদস্যদেরও বেশ কয়েকজনের মৃত্যু হয়েছে। মন্ত্রিসভার প্রায় এক তৃতীয়াংশ সদস্য করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন, একজন মৃত্যুবরণ করেছেন। এছাড়া দলের প্রায় ছয় শতাধিক নেতা-কর্মী করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন।’
আরও পড়ুন: সময়মতো প্রণোদনা প্যাকেজ অর্থনীতিকে ঘুরে দাঁড়াতে সাহায্য করেছে: প্রধানমন্ত্রী
মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু ও গণমাধ্যম প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, রাষ্ট্রের চারটি স্তম্ভের মধ্যে গণমাধ্যম স্তম্ভ সুদৃঢ় থাকলে রাষ্ট্রও সুদৃঢ় তাকে। সে কারণে বঙ্গবন্ধু যে স্বপ্নের ঠিকানায় বাংলাদেশকে পৌঁছে দিতে চেয়েছিলেন, সে লক্ষ্যে স্বাধীনতার পরপরই তার নেতৃত্বে গঠিত হয়েছিল বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল, প্রেস ইনস্টিটিউট ও ওয়েজবোর্ড। সেই ধারাবাহিকতায় বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গণমাধ্যমের স্বাধীন ও সুষ্ঠু বিকাশে বহু পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে এবং তার হাত ধরে দেশের গণমাধ্যম যেভাবে বিকশিত হয়েছে সেটি অতুলনীয়।
‘আমরা বিশ্বাস করি, গঠনমূলক সমালোচনা সমাজকে বহুমাত্রিক ও গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করে,’ বলেন তথ্যমন্ত্রী।
আগামী বছর বিএনপির চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে প্রশ্নের উত্তরে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘বিএনপি নিজেরা চোখ বন্ধ করে অন্ধকারের মধ্যে আছে, সে জন্য চারদিকে অন্ধকার দেখছে। আমি আশা করব তারা আগামী বছর চোখটা খুলে আলো দেখবেন। আর বিএনপির যে নেতৃত্ব, সেই নেতৃত্বে তারা জনগণ থেকে ক্রমাগতভাবে দূরে সরে গেছে। আশা করি, আগামী বছর বিএনপি নেতিবাচক রাজনীতির ধারা থেকে বেরিয়ে ইতিবাচক রাজনীতিতে ফিরে আসবে। দুঃখজনক হলেও সত্য, এই করোনাকালে যেভাবে জনগণের পাশে থাকার দরকার ছিল, বিএনপিসহ তাদের মিত্ররা তা থাকেনি। সরকারের প্রতি বিষোদগার ও সংবাদ সম্মেলনের মধ্যেই তাদের কার্যক্রম সীমাবদ্ধ রেখেছিলেন। জনগণকে প্রাধান্য না দিয়ে তারা তাদের হীন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ও দলীয় স্বার্থকেই প্রাধান্য দিয়েছেন। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক।’
আরও পড়ুন: করোনাকালে এশিয়ায় সবচেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি বাংলাদেশের: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
আওয়ামী লীগের চ্যালেঞ্জ নিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘যুগ যুগ ধরে সমস্ত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এগিয়ে গেছে ও যাচ্ছে। গত ১২ বছর ধরে আমরা চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়েও দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। আগামী বছরও তার কোনো ব্যতিক্রম নয়। আমরা দলকে আরও সুসংগঠিত করতে চাই কারণ আমরা মনে করি দলের কারণেই আজকে দল রাষ্ট্র ক্ষমতায়। সুযোগ সন্ধানীদের স্বার্থ হাসিলের কারণে যাতে দল ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সে জন্য অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করে দলীয় পদ থেকে বাদ দেয়ার কাজ আমরা শুরু করেছি, আগামী বছরও সেটি অব্যাহত থাকবে।’
‘আগামী বছর স্রষ্টার কৃপায় পৃথিবী থেকে করোনা দূরীভূত হবে, আমরা আবার মুক্ত পৃথিবীতে মুক্তভাবে শ্বাস নিতে পারব, পৃথিবীর মানুষ আবার আগের অবস্থায় ফিরে যেতে পারবে,’ আশাবাদ ব্যক্ত করেন তথ্যমন্ত্রী।
আরও পড়ুন: জিডিপির ‘প্রশ্নবিদ্ধ’ প্রবৃদ্ধির সুবিধা জনগণ পাচ্ছে না: বিএনপি