রবিবার উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে অনুষ্ঠিত এক সমাবেশে এ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন তিনি।
নিক্সন বলেন, ‘প্রশাসনের মধ্যে লুকিয়ে থাকা ওই জেলা প্রশাসক এ নির্বাচনে ১২ জন ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে নৌকার কর্মীদের গ্রেপ্তার করে পিটিয়েছে। মাত্র চারটি ইউনিয়নে ১২ জন ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে আমার নেতা-কর্মীদের যেখানে পাইছে সেখানে তাদের ওপর হামলা করা হয়েছে।’
হুঁশিয়ার করে দিয়ে সাংসদ বলেন, ‘ফরিদপুরে অনেক বড় নেতার পতন হইছে, ওই বরকত-রুবেলের যত অন্যায়, যত দুর্নীতি তার সাথে জেলা প্রশাসনের লোক জড়িত ছিল। বরকত-রুবেলের বিচারে হলে ওই জেলা প্রশাসকেরও বিচার হবে। কারণ ওই দিপু খাঁর (প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী কে এম ওবায়দুল বারী) বালির ব্যবসার ভাগ ওই জেলা প্রশাসক পায়।’
নিক্সন বলেন, ‘জেলা প্রশাসক যত বড় উপদেষ্টার নাতি হোন না কেন আপনি নিক্সন চৌধুরীর সাথে চোখ রাঙাইয়া কথা বলবেন না। আমি যদি জনগণ নিয়া আপনার বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামি, নেতা-কর্মীদের নিয়ে নামি তবে আপনি এক মিনিট দম নেয়ার সুযোগ পাবেন না।’
বক্তব্যের এক পর্যায়ে জেলা প্রশাসকের বিরুদ্ধে আপত্তিকর শ্লোগান দিতে শুরু করেন সমবেত নিক্সন অনুসারীরা।
সাংসদ নিক্সন আরও বলেন, ‘উনি এক উপদেষ্টার ভয় দেখায়, উনি মনে করে ওই উপদেষ্টাই ওনার ক্ষমতা। আরে এমন কত উপদেষ্টা দেখলাম মিয়া, জাফরউল্ল্য কাজীরই বেল নাই আর আপনি উপদেষ্টার ভয় দেখান। সরকারি চাকরি করেন বিএনপি নেতাদের চেয়ারম্যান বানানোর জন্য না। আমরা এর বিচার চাই।’
এর আগে নির্বাচনের দিন সাংসদের অশ্রাব্য ভাষায় কথা বলার বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে চরভদ্রাসন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জেসমিন সুলতানা বলেন, ‘বুথের ভিতর সিগারেট খাওয়া ও জাল ভোট দেয়ার চেষ্টা করায় সাংসদের লোককে আটক করা হয়। সাংসদ ফোনে আমাকে হুমকি-ধামকি দিলে আটকৃকতকে ছেড়ে দেয়া হয়।’
তিনি (এমপি) ইউএনওর ফোনে ওই সময় দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী কমিশনার ভূমিকে উদ্দেশ্য করে বলেন ‘শুয়ারের বাচ্ছা, কুত্তার বাচ্ছা। আমার লোকদের গাড়িতে উঠায়ছে ক্যান। এখনই ছাড়তে বলেন। ওর কত বড় সাহস শুয়ারের বাচ্ছা। আমি চরভদ্রাসন আসতেছি, ওরে আমি দেখতেছি’, বলেন তিনি।
শনিবার চরভদ্রাসন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনে মোট সাত জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। তবে নির্বাচনের আগে দুজন প্রার্থী সরে দাঁড়ান। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. কাওসার হোসেন (নৌকা) ১৬ হাজার ৫২৮ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী উপজেলার হরিরামপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান কে এম ওবায়দুল বারী পেয়েছেন ৫ গাজার ৩৪৬ ভোট।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে আযোজনের জন্য নির্বাচন কমিশনের চাহিদা অনুযায়ী চরভদ্রাসন উপজেলা নির্বাচনে ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেয়া হয়।
গত ৬ অক্টোবর চরভদ্রাসন উপজেলার নির্বাচন কর্মকর্তা জেলা প্রশাসকের কাছে প্রেরিত ‘চরভদ্রাসন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে উপনির্বাচন-২০২০ উপলক্ষে এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্টেট নিয়োগ প্রসঙ্গে এক আবেদনে সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে নির্বাচন পরিচালনা এবং আচরণবিধি প্রতিপালন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য চারজনসহ মোট ১২ জন নির্বাহী ম্যাজিস্টেট নিয়োগের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ জানান।
ওই আবেদনের প্রেক্ষিতে এ উপনির্বাচনে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১২ জন নির্বাহী ম্যাজিস্টেট নিয়োগ দেয়া হয়।
ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকার বলেন, ‘নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে আয়োজনের জন্য নির্বাচন কমিশনের চাহিদা অনুযায়ী ম্যাজস্ট্রেট নিয়োগ দেয়া হয়েছে।’
‘বেশি ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেয়া হলে নির্বাচনে কী সমস্যা হয় তা বোধগম্য নয়’ উল্লেখ করে বলেন, সাংসদ মুজিবর রহমান নিক্সনের হুঁশিয়ারির বিষয়টি তিনি তার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন।