বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন(বিইআরসি)বৃহস্পতিবার(১৩ অক্টোবর) পাইকারিতে বিদ্যুতের শুল্ক সমন্বয়ের বিষয়ে সিদ্ধান্ত ঘোষণা করবে। মঙ্গলবার কর্মকর্তারা এ তথ্য জানিয়েছেন।
বিইআরসি চেয়ারম্যান আবদুল জলিল ইউএনবিকে বলেন, শিগগিরই এ বিষয়ে নোটিশ জারি করা হবে।
এর আগে বিইআরসি প্রধান বলেছিলেন যে জনশুনানি শেষ হওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে যে কোনও সিদ্ধান্ত ঘোষণা করার নিয়ম অনুসারে ১৪ অক্টোবরের মধ্যে সিদ্ধান্ত ঘোষণা করবে নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
পাইকারিতে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাবের ওপর সর্বশেষ ১৮ মে গণশুনানি করেছিল রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড(বিপিডিবি)।
শুনানির প্রক্রিয়া শেষ করতে বিইআরসি স্টেকহোল্ডারদের প্রাসঙ্গিক নথি জমা দেয়ার সময় বাড়িয়েছে।
বিইআরসি’র সদস্য বলেছেন, সেই অতিরিক্ত সময় থেকে বিইআরসি ৯০ দিন গণনা করছে এবং ১৪ অক্টোবর নির্ধারিত সময় শেষ হবে।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলেছেন যে পাইকারিতে বিদ্যুতের শুল্কের কোনও সমন্বয় বিদ্যুতের বর্তমান খুচরা শুল্কের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলবে না।
কিন্তু বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলোর ওপর -এর প্রভাব পড়বে।এর মধ্যে যারা বিপিডিবি থেকে বিপুল পরিমাণে বিদ্যুৎ কিনে তাদের খুচরা গ্রাহকদের কাছে বিক্রি করে তারাও প্রভাবিত হবে। এর অর্থ হলো- যদি নিয়ন্ত্রকের কাছ থেকে কোনো ঊর্ধ্বমুখী সমন্বয় আসে, বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলো পরবর্তীতে খুচরা পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়াবে।
জ্বালানি নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি এমন সময়ে সিদ্ধান্ত ঘোষণা করতে যাচ্ছে যখন দেশে তীব্র বিদ্যুত সংকট চলছে এবং গ্রাহকরা প্রতিদিন পাঁচ থেকে ছয় ঘন্টা লোডশেডিংয়ের শিকার হচ্ছেন।
অন্যদিকে, আর্থিক সহায়তা হিসেবে ভর্তুকি পেতে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রচণ্ড চাপের মধ্যে রয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ।
বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে অনেক বেশি দামে বিদ্যুৎ কিনে গ্রাহকদের কাছে কম দামে বিক্রি করায় বিপিডিবি ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।
এই পটভূমিতে, বিপিডিবি গণশুনানিতে পাইকারিতে বিদ্যুতের শুল্ক ৬৫ দশমিক ৫৭ শতাংশ বাড়ানোর একটি প্রস্তাব পেশ করে যখন বিইআরসি-এর একটি প্রযুক্তিগত মূল্যায়ন কমিটি (টিইসি) ৫৭ দশমিক ৮৩ শতাংশ বৃদ্ধির সুপারিশ করেছিল।
পাঁচ সদস্যের কমিশন যেকোনও প্রস্তাবের বিষয়ে গণশুনানির পর স্টেকহোল্ডারদের যুক্তি ও পাল্টা যুক্তি শুনে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়।
১৮ মে গণশুনানিতে বিভিন্ন ব্যবসায়িক সংস্থার প্রতিনিধিসহ ভোক্তা অধিকার গোষ্ঠীগুলো এই মুহূর্তে বিদ্যুতের শুল্কের যে কোনও বড় বৃদ্ধির তীব্র বিরোধিতা করেছে। কারণ মানুষ ইতোমধ্যেই উচ্চ দ্রব্যমূল্যের কারণে উচ্চ মূল্যস্ফীতির সঙ্গে লড়াই করছে৷
তারা প্রস্তাবটিকে অযৌক্তিক আখ্যায়িত করে বলেন, অদক্ষ বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে উচ্চ হারে বিদ্যুৎ কেনার ক্ষেত্রে অনিয়ম, দুর্নীতি ও অনৈতিক প্রথা মোকাবিলার মাধ্যমে বিপিডিবি তার রাজস্ব ঘাটতি পূরণ করতে পারে।
আরও পড়ুন: বিদ্যুৎ খাতে উন্নয়নের নামে সরকারের ব্যাপক লুণ্ঠন প্রকাশ পেয়েছে: বিএনপি
বিপিডিবি কর্মকর্তারা প্রস্তাবটি উপস্থাপন করে বলেছিলেন যে সংস্থাটি বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলোতে ৮৮ হাজার ৯৯৩ মিলিয়ন কিলোওয়াট ঘন্টা (ইউনিট) সরবরাহ করতে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ৭৪ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা রাজস্বের প্রয়োজন হবে।
‘কিন্তু বিপিডিবি যদি তার বর্তমান বিদ্যুত পাঁচ টাকা ১৭ পয়সা প্রতি ইউনিট দরে বিক্রি করে, তাহলে ২০২২ সালের ক্যালেন্ডার বছরে ৩০ হাজার ২৫১ কোটি টাকা রাজস্ব ঘাটতির সম্মুখীন হবে। সরকারের ভর্তুকি ছাড়াই গণনা করার কথা উল্লেখ করে শুনানিতে
বিপিডিবির একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, বিপিডিবিকে বিদ্যুতের দাম ৬৫ দশমিক সাত শতাংশ বৃদ্ধি করে প্রতি ইউনিটের মূল্য ৫ দশমিক ১৭ টাকা থেকে ৮ দশমিক ৫৬ টাকা করতে হবে।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির দাম বৃদ্ধির পর বিদ্যুৎ বিভাগ তার ডিজেল-চালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কার্যক্রম এবং তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি স্থগিত করেছে।
ফলে, যদিও দেশের স্থাপিত বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় দুই হাজার ৫৫০ মেগাওয়াট, এটি এখন প্রায় ১৪ হাজার মেগাওয়াটের চাহিদার বিপরীতে প্রায় ১২ হাজার মেগাওয়াট উৎপাদন করে এবং প্রায় দুই হাজার মেগাওয়াটের লোডশেডিং দিচ্ছে।
আরও পড়ুন: লোডশেডিং: ঘোড়াশাল বিদ্যুৎকেন্দ্র স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত পরিস্থিতির উন্নতি হবে না
কর্ম সপ্তাহের শুরুতে ঢাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ পরিস্থিতি আরও খারাপ