ফরিদপুরে ১৩ বছরের এক শিশুকে ধর্ষণ ও ঘটনার প্রায় আড়াই মাস পর চিকিৎসাধীন শিশুটির মৃত্যুর ঘটনায় লিটন মাতুব্বর (২২) নামে এক যুবকের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
বুধবার (৩ মে) দুপুর ১২টায় ফরিদপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালতের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. হাফিুজুর রহমান এ রায় দেন।
আরও পড়ুন: ২০০২ সালে হাসিনার গাড়িবহরে হামলা: ৪ জনের যাবজ্জীবন, ৪৪ জনের ৭ বছরের কারাদণ্ড
এসময় আসামি আদালতে উপস্থিত ছিলেন। রায় শেষে তাকে পুলিশ প্রহরায় জেল হাজতে পাঠানো হয়।
মামলার বিবরণে জানা যায়, ওই শিশুর মা বাজারে চায়ের দোকানে পানি সরবরাহ করে থাকেন। এজন্য তাকে বেশিরভাগ সময় কাজে ব্যস্ত থাকতে হয়। এর সুবাদে শিশুটি বাড়িতে একাই থাকতো।
এই সুযোগে ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার কাউলীবেড়া গ্রামের রাশেদ মাতুব্বরের ছেলে আসামি লিটন মাতুব্বর শিশুটির বাড়িতে যাতায়াত করে ও সখ্য গড়ে তোলে।
এক পর্যায়ে লিটন নানা প্রলোভন দেখিয়ে শিশুটির সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তোলার চেষ্টা করে।
ঘটনার দিন ২০১৭ সালের ১০ জানুয়ারি সন্ধ্যা ৭টার দিকে শিশুটির মা বাড়িতে না থাকায় লিটন বাড়িতে প্রবেশ করে শিশুটির মুখে কাপড় গুজে তাকে ধর্ষণ করে এবং এ কথা কাউকে না বলার জন্য হুমকি দেয়।
কাউকে এ কথা বললে তাকে প্রাণে মেরে ফেলবে বলেও হুমকি দেয় লিটন।
পরবর্তীতে শিশুটি এ কথা কাউকে না বলে ধীরে ধীরে অসুস্থ হতে থাকে।
প্রায় দুই মাস পর শিশুটি তার মায়ের কাছে সব কথা খুলে বললে, শিশুটির মা তাকে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন।
আরও পড়ুন: শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলা: পলাতক আসামি ঢাকায় গ্রেপ্তার
সেই সঙ্গে তিনি কয়েক দফা সালিশ বৈঠকও করেন। তবে ওইসব সালিশের রায় মানেনি লিটন।
পরে এ ঘটনার ৭৩ দিন পর শিশুটির চাচা বাদী হয়ে ২০১৭ সালের ২৪ মার্চ লিটন মাতুব্বরকে একমাত্র আসামি করে ধর্ষণের অভিযোগে ভাঙ্গা থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
মামলা দায়েরের পরদিন ২৫ মার্চ শিশুটি চিকিৎসাধীন মারা যান।
ঘটনা তদন্ত করে ২০১৭ সালের ১৫ ডিসেম্বর ভাঙ্গা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) রতন কুমার মন্ডল আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে ফরিদপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতের পিপি স্বপন পাল বলেন, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ এর ৯(২) ধারায় অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় একমাত্র আসামি লিটন মাতুব্বরকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড ও এক লাখ টাকা অর্থদণ্ডের রায় দিয়েছেন আদালত।
ফরিদপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী (পিপি) অ্যাডভোকেট স্বপন পাল বলেন, আসামির বিরুদ্ধে সকল প্রমাণাদি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ হওয়ায় এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ ৯(২) ধারায় দোষী প্রমাণিত হওয়ায়, আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং একই সঙ্গে এক লাখ টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, আসামিকে এক লাখ টাকা দিতেই হবে। এখানে অনাদায়ের বিষয় রাখা হয়নি।
তিনি আরও বলেন, এ রায় সমাজে সুস্থতা ফিরতে ও দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখবে। আমরা এ রায়ে অত্যন্ত খুশি।