প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সৌভাগ্যবান, যে তিনি বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিবকে তার জীবনসঙ্গী হিসেবে পেয়েছিলেন। যিনি তাকে দেশের স্বাধীনতা ও জনগণের কল্যাণে কাজ করার জন্য অপরিসীম শক্তি জুগিয়েছিলেন।
সোমবার বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিবের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘এটা আমার বাবার জন্য সৌভাগ্যের বিষয় যে, তিনি আমার মাকে তার পাশে জীবনসঙ্গী হিসেবে পেয়েছিলেন।’
এই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাঁচ বিজেতার হাতে বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতু ন নেছা মুজিব পদক-২০২২ বিতরণ করেন।
শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু ও বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিবের জ্যেষ্ঠ সন্তান। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ধানমন্ডি রোডের ৩২ নম্বর বাসভবনে তার বাবা-মাকে পরিবারের বেশিরভাগ সদস্যসহ হত্যা করা হয়েছিল।
তাদের ছেলেকে (বঙ্গবন্ধু) ছোট বেলা থেকেই দেশের জন্য কাজ করার স্বাধীনতা দেয়ার জন্য তার দাদা এবং দাদীর প্রতি শ্রদ্ধা জানান শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, তার দাদা-দাদি কখনোই তাদের ছেলের কাছে কিছু দাবি করেননি।
আরও পড়ুন: বঙ্গমাতার আত্মত্যাগ থেকে শিক্ষা নিন: শেখ হাসিনা
তিনি বলেন, ‘আমার বাবার পক্ষে দেশের স্বাধীনতা অর্জনের সংগ্রামে পুরোপুরি নিবেদিত হওয়া সহজ ছিল, কারণ তিনি তাঁর পাশে এমন অসাধারণ জীবনসঙ্গী ও পিতামাতা পেয়েছিলেন।’
শেখ হাসিনা বলেন, মায়ের মতো জীবনসঙ্গী না পেলে বঙ্গবন্ধুর জন্য দেশের জন্য কাজ করা এবং রাজনীতিতে পূর্ণ মনোযোগ দেয়া খুবই কঠিন হতো।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘...যদি তিনি (বঙ্গমাতা) তার স্বামীকে বিভিন্ন দাবির জন্য সব সময় চাপ দিতেন, তাহলে আমার বাবার জন্য এটা (রাজনীতিতে মনোযোগ দেয়া) কঠিন কাজ হতো।’
তিনি বলেন, তার মা কখনোই তার স্বামীর কাছ থেকে কিছু পাওয়ার জন্য জোরাজুরি করেননি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার মায়ের যে কোনও সমস্যাকে সাহসের সঙ্গে মোকাবিলা করার এবং কঠিন পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নেয়ার অস্বাভাবিক মানসিক শক্তি ছিল।
তিনি আরও বলেন, তার মা তাদেরকেও সেভাবেই বড় করেছেন এবং তার সন্তানদের সাহসের সঙ্গে প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে শিখিয়েছেন।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, তার মা যে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তা দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে সহায়ক বলে প্রমাণিত হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার আগে ও পরে ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনা উল্লেখ করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার মা আত্মবিশ্বাসী ছিলেন, যে দেশ স্বাধীন হবে এবং আমার মায়ের এই প্রত্যয় আমার বাবার জন্য খুব সহায়ক ছিল।’
আরও পড়ুন: বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব পদক পেলেন ৫ বিশিষ্ট নারী
তিনি বলেন, তার মা শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত দেশের জন্য সর্বস্ব দিয়ে গেছেন।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘১৫ আগস্ট, তিনি তার জন্য জীবন ভিক্ষা করেননি। বরং তিনি তার জীবন উৎসর্গ করেছেন।’
শেখ হাসিনা দেশের নারীদেরকে বঙ্গমাতার আদর্শে উদ্বুদ্ধ হতে বলেন। যা আমাদের শিক্ষা দেয়, আকাঙ্ক্ষা ও ভোগ-বিলাসই কারও জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য হওয়া উচিত নয়।
তিনি বলেন, আমি দেশের নারীদের ত্যাগের চেতনা ধারণ করে জনগণের কল্যাণে কাজ করার আহ্বান জানাব।
বঙ্গমাতার জীবন ও আত্মত্যাগের ওপর মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিশিষ্ট লেখক আনোয়ারা সৈয়দ হক।
পুরস্কারপ্রাপ্তদের মধ্যে সৈয়দা জেবুন্নেসা হক বলেন, এই সম্মান পেয়ে তিনি গভীরভাবে আলোড়িত।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা, জাতীয় মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান বেগম চেমন আরা তৈয়ব এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক সম্পাদক মো. হাসানুজ্জামান কল্লোল।
অনুষ্ঠানে বঙ্গমাতার ওপর একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবস্থার মাধ্যমে সারাদেশের ২৫০০ অস্বচ্ছল নারীর মাঝে ২০০০ টাকা করে বিতরণ করেন।
এর মধ্যে ১৩ লাখ টাকা বন্যা কবলিত সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও নেত্রকোনা জেলার নারীদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে।
এছাড়া প্রধানমন্ত্রী সারাদেশে দুস্থ মহিলাদের মধ্যে প্রায় চার হাজার ৫০০টি সুইং মেশিন বিতরণ করেন।
তিনি ‘শেখ ফজিলাতুন নেছা: আমার মা’- শিরোনামের একটি বইয়ের মোড়কও উন্মোচন করেন।
শেখ হাসিনা রাজধানীতে বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিবের নামে একটি মহিলা হোস্টেলও খোলেন।
আরও পড়ুন: দলমত নির্বিশেষে আমি প্রতিটি নাগরিকের প্রধানমন্ত্রী