বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা বলেছেন, প্রাথমিকভাবে মনোনীত ভারতীয় ও বাংলাদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ভারতীয় রুপিতে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ কমাতে সাহায্য করতে পারে৷
তিনি বলেন, ‘এই নতুন প্রক্রিয়ার সুস্পষ্ট সুবিধা রয়েছে। এটি বাণিজ্য নিষ্পত্তির জন্য বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর কিছুটা চাপ কমাবে। যেখানে ব্যবসায়ীদের বিনিময় খরচেও কিছুটা সঞ্চয় হবে। মূলত, এই প্রক্রিয়াটি আমাদের নিজস্ব মুদ্রায় লেনদেনের নিশ্চিয়তা আনতে সাহায্য করবে,।’
মঙ্গলবার ভারতীয় রুপিতে বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের সূচনা উপলক্ষে একটি অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে হাইকমিশনার এসব কথা বলেন।
এসময় তিনি বলেন, বর্তমানে নির্ধারিত ভারতীয় ব্যাংকগুলো হলো-স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া ও আইসিআইসিআই ব্যাংক। এবং মনোনীত বাংলাদেশি ব্যাংকগুলো হলো সোনালী ব্যাংক ও ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড।
রুপিতে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য করার জন্য মনোনীত বাংলাদেশি ব্যাংকগুলোর প্রত্যেককে মনোনীত ভারতীয় ব্যাংকগুলোর সঙ্গে বাধ্যতামূলক একটি বিশেষ রুপি ভোস্ট্রো অ্যাকাউন্ট (এসআরভিএ) খুলতে হবে।
রাষ্ট্রদূত বলেন, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কারণে সৃষ্ট প্রতিকূলতা সত্ত্বেও উভয় পক্ষের সংকল্প ও ইচ্ছার কারণে দুই দেশের অর্থনৈতিক সম্পর্কে নতুন গতি এসেছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা কোভিড মহামারির কারণে সৃষ্ট চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছি এবং এর মাধ্যমে আরও শক্তিশালী হয়ে উঠেছি। বর্তমান গ্লোবাল হেডওয়াইন্ড যা সারা বিশ্বের অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলছে, তা আরেকটি চ্যালেঞ্জ উপস্থাপন করছে।’
আরও পড়ুন: কমনওয়েলথ ওয়ার সিমেট্রি পরিদর্শনে ভারতীয় হাইকমিশনার
তিনি আরও বলেন, ‘এটি অত্যন্ত আনন্দদায়ক এবং আমাদের দ্বিপক্ষীয় অংশীদারিত্বের স্থিতিস্থাপকতার একটি প্রতীক যে আমরা এই উদ্ভাবনী ব্যবস্থার মাধ্যমে আমাদের সম্পর্ক এবং আমাদের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সুযোগগুলোকে আবারও খাপ খাইয়ে নিচ্ছি।’
এ সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব এবং বাণিজ্য ও চেম্বার সংস্থার সভাপতিরা উপস্থিত ছিলেন।
ভারতীয় রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘আজ এই যুগান্তকারী আয়োজনে আপনাদের সবাইকে স্বাগত জানাতে পেরে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। এখানে আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতীয় রুপিতে ভারত-বাংলাদেশ বাণিজ্য শুরুর ঘোষণা দিচ্ছি।
তিনি বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে গত এক দশকে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘এবং সেই রূপান্তরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রকাশগুলোর মধ্যে একটি হলো আমাদের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক এবং পারস্পরিক যোগাযোগ।’
বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার এবং বিশ্বব্যাপী পঞ্চম বৃহত্তম। গত পাঁচ বছরে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য দ্বিগুণেরও বেশি হয়েছে।
গত তিন বছরে ভারতে বাংলাদেশের রপ্তানি ধারাবাহিকভাবে এক বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। গত অর্থবছরে তা প্রথমবারের মতো দুই বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে।
ভারত, তার বৈচিত্র্যময় বাজার সহ এশিয়ায় বাংলাদেশের জন্য শীর্ষ রপ্তানি গন্তব্যে পরিণত হয়েছে।
আরও পড়ুন: ঢাকা-দিল্লি গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ পরিকাঠামো নির্মাণে অগ্রাধিকার দেয়: হাইকমিশনার
‘মিলেট’ সংক্রান্ত বিষয়ে ভারত-বাংলাদেশ সহযোগিতা করতে পারে: হাইকমিশনার