বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্ক ইতিহাস ও সংস্কৃতিতে নিহিত উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দু’দেশের এখন জনগণের মধ্যে যোগাযোগ, ব্যবসা-বাণিজ্য ও সংযোগের ওপর গুরুত্ব দেয়া উচিত। কেননা এর গুরুত্ব দু’পক্ষের জন্যই বেড়ে চলেছে।
তিনি বলেন, ‘দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের মূলে এখন জনগণের মধ্যে যোগাযোগ, ব্যবসা- বাণিজ্য ও সংযোগের ওপর মনোযোগ দেয়া দরকার যা দু’পক্ষের জন্য ক্রমাগত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।’
সোমবার মৈত্রী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এক ভিডিও বার্তায় এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশ ও ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে সোমবার নয়াদিল্লিতে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ ওয়ার্ল্ড অ্যাফেয়ার্স এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক নতুন উচ্চতায়: প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্ক ইতিহাস,সংস্কৃতি, ভাষা, ধর্ম নিরপেক্ষতা,গণতন্ত্র ও অন্যান্য অগণিত অভিন্নতার মূল্যবোধে নিহিত। ‘নিয়মিত উচ্চ পর্যায়ের রাজনৈতিক মিথষ্ক্রিয়া ও মতবিনিময়ের কারণে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আমাদের বন্ধুত্বের বন্ধন আরও শক্তিশালী, বৈচিত্র্যময় ও প্রসারিত হয়েছে।’
তিনি বলেন, কোভিড -১৯ এর কারণে বিধিনিষেধ সত্ত্বেও সব পর্যায়ে সম্পর্ক স্থিতিশীল ও শক্তিশালী রয়েছে। কোভিড-১৯ মহামারি মোকাবিলায় আমাদের চমৎকার সহযোগিতায় এটি স্পষ্ট ছিল।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের অংশীদারিত্ব চুক্তি, সমঝোতা স্মারক, দ্বিপক্ষীয় চুক্তির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় যা আমাদের কাজের সম্পর্কের জন্য আনুষ্ঠানিক কাঠামো প্রদান করে। আজ আমাদের বিস্তৃত অংশীদারিত্ব পরিপক্ক হয়েছে; গতিশীল, ব্যাপক ও কৌশলগত আকার নিয়েছে এবং সার্বভৌমত্ব, সমতা, বিশ্বাস ও পারস্পরিক সম্মানের ওপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে।’
আরও পড়ুন: আন্তর্জাতিক মানের পণ্য উৎপাদনে মনোযোগ দেয়ার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর
১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর ভারত বাংলাদেশকে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও ভারত কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন করছে। ‘এটি আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের যাত্রায় একটি মাইলফলক।’
তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের সম্পর্কের গুরুত্বে বিশ্বাস করি। এই বার্ষিকীটি দু’দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ভিত্তি এবং সামনের পথের প্রতিফলন করার একটি সুযোগ। দীর্ঘস্থায়ী গতিশীল অংশীদারিত্বকে আরও শক্তিশালী করতে কাজ করার জন্য পুনরায় প্রতিশ্রুতি দেয়ার জন্য এটি উভয় দেশের জন্য একটি উপলক্ষ।’
তিনি বলেন, ২০২১ সালের ২৬-২৭ মার্চ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশে সফরের সময় উভয় পক্ষই ঢাকা ও নয়াদিল্লিসহ ১৮টি নির্বাচিত শহরে যৌথভাবে এ দিনটি উদযাপন এবং ৬ ডিসেম্বরকে ‘মৈত্রী দিবস’ হিসাবে স্বীকৃতি দেয়ার বিষয়ে সম্মত হয়।
বঙ্গবন্ধুর বড় কন্যা শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্কের ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন।
১৯৭২ সালে বলা বঙ্গবন্ধুর কথা উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে আমাদের বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে। সম্পর্কটি সবচেয়ে বন্ধুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ ও ভারতের বন্ধুত্ব আমাদের হৃদয়ে। বন্ধুত্বের বন্ধন দৃঢ় এবং দীর্ঘস্থায়ী থাকবে।’
আরও পড়ুন: প্রেক্ষিত পরিকল্পনা: সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের ‘অগ্রসেনা’ হিসেবে কাজ করার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের জনগণের প্রতি ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ও তার সরকার, অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতা ও সামগ্রিকভাবে ভারতের জনগণের উদারতার কথাও স্মরণ করেন শেখ হাসিনা।
সাংস্কৃতিক বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা, নয়াদিল্লিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার রাষ্ট্রদূত মুহাম্মদ ইমরান ও আইসিডব্লিউএ মহাপরিচালক বিজয় ঠাকুর সিং এ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।
মোদির আশ্বাস
দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ককে আরও প্রসারিত ও গভীর করতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কাজ চালিয়ে যাবেন বলে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি জানিয়েছেন।
সোমবার দুই দেশের ‘মৈত্রী দিবস’ উদযাপন নিয়ে এক টুইট বার্তায় মোদি বলেন,‘আমাদের সম্পর্ককে আরও প্রসারিত ও গভীর করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য আমি উন্মুখ।’
১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার মাত্র ১০ দিন আগে ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর ভারত বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়।
স্বাধীন বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনকারী প্রথম দেশগুলোর মধ্যে ভারত অন্যতম।
আরও পড়ুন: উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হলে বাংলাদেশ ব্র্যান্ডিংয়ের সুযোগ পাবে: প্রধানমন্ত্রী
মোদি বলেন,‘আজ ভারত ও বাংলাদেশ মৈত্রী দিবস পালন করছে। আমরা যৌথভাবে আমাদের ৫০ বছরের বন্ধুত্বকে স্মরণ করি এবং উদযাপন করছি।’
চলতি বছরের মার্চে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের সময় ৬ ডিসেম্বরকে ‘মৈত্রী দিবস’ হিসেবে পালন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল।