জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় বিশ্ব নেতাদের কাছে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চারটি পরামর্শ তুলে ধরেছেন।
বৃহস্পতিবার (২১ এপ্রিল) মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আমন্ত্রণে শুরু হওয়া বিশ্ব নেতাদের অংশগ্রহণে জলবায়ু বিষয়ক সম্মেলন ‘লিডার্স সামিটের’ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এই পরামর্শগুলো তুলে ধরার পাশাপাশি সম্বনিত উদ্যোগ গ্রহণেরও আহ্বান জানান।
আরও পড়ুন: বাইডেনের জলবায়ু সম্মেলনের আলোচ্যসূচিতে থাকছে বাংলাদেশের দাবিদাওয়া: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সমস্যা মোকাবিলায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সারা বিশ্বের ৪০ জন রাষ্ট্রপ্রধানকে জলবায়ু বিষয়ক ভার্চুয়াল সম্মেলন 'লিডারস সামিট'-এ অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ জানান।
প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে রাখতে উন্নত দেশগুলোকে কার্বন নিঃসরণ হ্রাসে অবিলম্বে একটি উচ্চাভিলাষী কর্ম-পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে। এছাড়া ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার তহবিলের বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রা নিশ্চিত করতে হবে, যা অভিযোজন ও প্রশমনের মধ্যে ৫০:৫০ ভারসাম্য বজায় রাখবে।
প্রধানমন্ত্রীর তৃতীয় পরামর্শ হলো, প্রধান অর্থনীতি, আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি খাতগুলোকে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় উদ্ভাবনের পাশাপাশি জলবায়ু অর্থায়নের জন্য বিশেষভাবে ছাড় দিতে হবে। তিনি তার শেষ পরামর্শে, সবুজ অর্থনীতি ও কার্বন প্রশমন প্রযুক্তির ওপর গুরুত্ব দেয়া এবং এ লক্ষ্যে দেশগুলোর মধ্যে প্রযুক্তির বিনিময়ের প্রতি জোর দেন।
পূর্বে ধারণকৃত ভিডিও বার্তায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'করোনা মহামারি আমাদের আবারও স্মরণ করিয়ে দিয়েছে যে, বৈশ্বিক সমস্যা নিরসনে সকল দেশের সমন্বিত উদ্যোগ অত্যন্ত প্রয়োজন।'
প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের ফিরে আসায় এবং জলবায়ু শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজন ও এই আয়োজনে তাকে আমন্ত্রণ করায় শেখ হাসিনা প্রেসিডেন্ট বাইডেনের প্রশংসা ও ধন্যবাদ জানান।
আরও পড়ুন: দেশের উন্নয়নের জন্য আরও জ্বালানি প্রয়োজন: প্রধানমন্ত্রী
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সাথে জলবায়ুর সংকট নিরসনে বাংলাদেশের আগ্রহ প্রকাশ করে প্রধানমনত্রী বলেন, জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ ও সীমিত সম্পদের দেশ হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশ অভিযোজন ও প্রশমনের ক্ষেত্রে বিশ্ব নেতৃত্ব হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে তিনি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ মোট জিডিপির প্রায় ২.৫ শতাংশ বা প্রায় ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার জলবায়ু পরিবর্তনজনিত দুর্যোগ মোকাবিলা এবং টেকসই জলবায়ু সহনশীল ব্যবস্থা গড়ে তুলতে ব্যয় করছে।
সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গা সমস্যার কথা উল্লেখ করে বলেন, 'মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যূত প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে বাংলাদেশ। তারা দেশের প্রতিবেশকে অধিকতর ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে।'
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ ন্যাশনালি ডিটারমাইন্ড কন্ট্রিবিউশন (এনডিসি) বৃদ্ধিতে এবং জলবায়ুর পরিবর্তন সহনীয় টেকসই পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে কার্বন হ্রাসের পদক্ষেপ নিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, বাংলাদেশ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ‘মুজিববর্ষ’ উদযাপনে দেশব্যাপী ৩০ কোটি গাছের চারা রোপণের পরিকল্পনা নিয়েছে। এছাড়া কম-কার্বনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে ‘মুজিব ক্লাইমেট প্রোসপারিটি প্ল্যান’ প্রণয়নের পরিকল্পনার কথাও তুলে ধরেন।
আরও পড়ুন: প্রধানমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানাতে জন কেরি ঢাকায়
প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন যে, ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরাম (সিভিএফ) এবং ভি২০ (ভালনারেবল টুয়েন্টি) এর সভাপতি হিসেবে বাংলাদেশের প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর স্বার্থ সমুন্নত রাখা।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট হ্যারিস ‘লিডার্স সামিটের’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উস্থিত ছিলেন।