সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবিপ্রবি) আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের হামলার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল।
বুধবার (২৬ জানুয়ারি) সকালে অনশনরত শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙানোর পর গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলার সময় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।
অধ্যাপক জাফর ইকবাল বলেন, ‘এটা খুবই দুঃখজনক যখন পুলিশ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করে, তখন শিক্ষকদের সামনে ঝাঁপিয়ে পড়া উচিত ছিল যে, খবরদার! তোমরা এটা করতে পারবা না। একজন শিক্ষকও সেটা করেননি। একজন শিক্ষকের এরকম মেরুদণ্ডহীন হওয়ার কোনো কারণ নাই।’
আরও পড়ুন: অনশন ভাঙলেন শাবিপ্রবির শিক্ষার্থীরা
শিক্ষার্থীদের আন্দোলন নিয়ে তিনি বলেন, ‘সারা বাংলাদেশের সমস্ত তরুণ প্রজন্ম তোমাদের পেছনে। সমস্ত মানুষজন তোমাদের পেছনে। তোমরা সুস্থ হও। উদাহরণ তৈরি করো। যে উদাহরণ বাংলাদেশের অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনুসরণ করবে।’
শিক্ষার্থীরা উপাচার্যকে ‘দানব’ বলেছেন। সেই ‘দানবের’ কাছে আপনারা শিক্ষার্থীদের রেখে যাচ্ছেন। এই বিষয়টাকে কিভাবে দেখছেন? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক জাফর ইকবাল বলেন, ‘শুনেন, ছাত্রদেরকে আন্ডারএস্টিমেট করবেন না। কে, কাকে, কার কাছে রেখে যাচ্ছি, সেটা সময়েই বলে দেবে।’
উপাচার্যের অপসারণ সংক্রান্ত দাবির প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সরকার যখন দাবিদাওয়া মেনে নেবেন বলেছেন, তখন দাবির মধ্যে এই দাবিটাও তো পড়ে। কিন্তু সরকারেরও তো নিজস্ব টেকনিক্যাল ব্যাপার থাকে, রাজনৈতিক ব্যাপার থাকে, সেটার জন্য তাদের হয়তো একটা প্রসেস থাকে। গোপালগঞ্জের ভাইস চ্যান্সেলরকে তারা একভাবে সরিয়েছে, অন্য ভাইস চ্যান্সেলরকে অন্যভাবে সরিয়েছে। কাজেই সেটা তাদের ব্যাপার। আমার প্রাইমারি কনসার্ন ছিল, ওদেরকে অনশন থেকে বের করতে পারি কিনা।’
আন্দোলনে বহিরাগতদের কোনো ইন্ধন ছিল বা আছে কিনা, এরকম এক প্রশ্নের জবাবে জাফর ইকবাল বলেন, আমি দেখেছি যে, এরা সাধারণ শিক্ষার্থী। এদের মধ্যে কোনো উচ্চভিলাষ নাই। পুলিশ ওদের গায়ে এরকম নির্মমভাবে হাত তুলেছে, কাজেই ওদের মনের ভেতর একটা ক্ষোভ হয়েছে, সংঘত কারণেই। সেজন্যই তারা এই আন্দোলনটা করছে। এর মধ্যে বিন্দুমাত্র বাড়াবাড়ি নাই, অহেতুক কোনো দাবি নাই। ওদের দাবি শতভাগ যৌক্তিক দাবি।’
আরও পড়ুন: শাবিপ্রবি: আন্দোলনরতদের দেখতে ক্যাম্পাসে এমপি
উপাচার্যকে উদ্দেশ্য করে জাফর ইকবাল বলেন, ‘আমি তিন বছর আগে যখন নাকি অবসরে চলে যাই, তখন একটা চিঠি লিখে উনাকে দিয়ে যাই। সেই চিঠিতে আমি বলে দিয়েছিলাম অনেকগুলো। আমি সেখানে লিখেছিলাম স্পষ্ট করে, আপনি যদি এগুলো না করেন, ছাত্রদের এখন যে ক্ষোভ আছে, তা বিক্ষোভে রূপ নেবে। একদম অক্ষরে অক্ষরে আমার কথাটা ফলেছে।’
‘মুক্তবুদ্ধির চর্চা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে’ অভিহিত করে শিক্ষার্থীরা একে ‘তালেবানি সিদ্ধান্ত’ বলে মন্তব্য করেছেন। এ বিষয়ে জাফর ইকবাল বলেন, ‘এটা তো অবিশ্বাস্য একটা ব্যাপার যে, একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে এ কাজগুলো বন্ধ হবে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্ট্রেংথ ছিল, আমাদের এমন কোনো সংগঠন নাই যেটা নাকি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিল না। সেটা যখন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে, তখনই বোঝা গেছে, এই মানুষটা আর যাই হোক, উনি একাডেমি বুঝেন না।’
শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙাতে ঢাকা থেকে বুধবার ভোর চারটায় ক্যাম্পাসে এসে পৌঁছান অধ্যাপক জাফর ইকবাল ও তার স্ত্রী অধ্যাপক ইয়াসমিন হক।
গত ১৬ জানুয়ারি বিকেলে তিন দফা দাবি আদায়ে উপাচার্যকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইআইসিটি ভবনে অবরুদ্ধ করেন শিক্ষার্থীরা। পরে পুলিশ উপাচার্যকে উদ্ধার করতে গেলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ওই সময় পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ারসেল ও রাবার বুলেট ছুড়ে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এতে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হন।
পুলিশ ৩০০ জনকে অজ্ঞাত দেখিয়ে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা করে। এরপর থেকে ক্যাম্পাসে অবস্থান নিয়ে টানা কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।
এর অংশ হিসেবে গত বুধবার (১৯ জানুয়ারি) অনশন শুরু করেছিলেন শিক্ষার্থীরা।
আরও পড়ুন: শাবিপ্রবি শিক্ষার্থীদের ওপর ‘পুলিশি হামলা’র প্রতিবাদে রাবি শিক্ষকদের অবস্থান কর্মসূচি