খুলনায় রিয়েল সঞ্চয় ও ঋণদান কো অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড নামে একটি সমিতির বিরুদ্ধে গ্রাহকদের প্রায় সাত কোটি টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠেছে। টাকা আদায়ের জন্য সমিতির ম্যানেজার ইসতিয়াক রাব্বি শোভনকে শুক্রবার রাতভর অবরুদ্ধ রাখার পর শনিবার পুলিশে সোপর্দ করেন গ্রাহকেরা।
সমাজসেবা অধিদপ্তরের রেজিস্ট্রেশন নিয়েই প্রতিষ্ঠানটি তাদের কার্যক্রম চালিয়ে আসছিলেন বলে জানা গেছে।
গ্রাহকদের অভিযোগ, খুলনা মহানগরীর ৪ নম্বর ঘাট এলাকায় বস্তিবাসীর কাছে ২০১২ সাল থেকে ডিপিএস, এফডিআর, দৈনিক, সাপ্তাহিক ও মাসিক মেয়াদে ওই সমিতি টাকা নিতো। নির্দিষ্ট মেয়াদের পর লভ্যাংশসহ টাকা ফেরত দিতো তারা। কিন্তু করোনা মহামারির পর থেকে তারা গ্রাহকদের আর কোনো টাকা ফেরত দেয়নি।
তারা জানান, শুধু ঘাট এলাকা নয়; খালিশপুর, দৌলতপুর ও সোনাডাঙ্গা এলাকায় সব মিলিয়ে তাদের গ্রাহক সংখ্যা এক হাজারেরও বেশি। দুবছর ধরে তারা কেউ সমিতির কাছ থেকে টাকা পান না। সম্প্রতি সমিতির লোকজন সবাই গা-ঢাকা দেয়।
আরও পড়ুন: সাড়ে ৩ কোটি টাকা আত্মসাৎ মামলায় দম্পতি কারাগারে
তারা জানান, শুক্রবার সন্ধ্যায় নিউমার্কেট এলাকার একটি রেস্টুরেন্টে বসে সমিতির ম্যানেজার ইসতিয়াক রাব্বি শোভন খাবার খাচ্ছিলেন। বিষয়টি জানতে পেরে ৪ নম্বর ঘাট বস্তির শতাধিক লোক গিয়ে তাকে আটক করেন। পরে তাকে ৭ নম্বর ঘাট জেটি হ্যান্ডলিং শ্রমিক ইউনিয়নের অফিসে নিয়ে আটকে রাখে।
তবে ম্যানেজার শোভনের দাবি, সমিতির মালিক শিবলু নামে এক ব্যক্তি। তিনি কিছুদিন আগে বিদেশে পালিয়ে গেছেন। তিনি তাদের ম্যানেজার ছিলেন।
তিনি বলেন, ‘আমি কী করে টাকা ফেরত দেবো! শ্রমিকরা আমাকে অযথা আটকে রেখে মারধর করেছে।’
গ্রাহক ইতি আক্তার বলেন, আমি দৈনিক ৩০ টাকা করে তাদের কাছে জমা রাখতাম। বছর শেষে তারা সুদসহ মূল টাকা ফেরত দিতো। কিন্তু গত দুবছর আমার টাকা ফেরত পাইনি। তিনি বলেন, আমাদের ৪ নম্বর ঘাট বস্তিতে শত শত মানুষ তাদের বিশ্বাস করে টাকা দিয়েছে।
অপর গ্রাহক রওশানারা বলেন, আমাদের পরিবারের চারজন তাদের কাছে টাকা জমা রাখতো। তবে গত দুবছর তারা কোনো টাকা দিচ্ছে না।
আরও পড়ুন: খুলনায় অর্থ আত্মসাৎ মামলায় অভিযুক্ত ব্যাংক কর্মকর্তা কারাগারে
এ বিষয়ে খুলনা সিটি করপোরেশনের (খুসিক) প্যানেল মেয়র মো.আমিনুল ইসলাম মুন্না জানান, তার ওয়ার্ডেরও অনেক লোক টাকা জমা রেখে এখন আর ফেরতে পাচ্ছে না। শুক্রবার রাতের ঘটনা তিনি জানেন। শোভনকে থানায় হস্তান্তর এবং ওই সমিতির লোকজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
তিনি জানান, গ্রাহকদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী ওই সমিতিটি প্রায় সাত কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে।
এ ব্যাপারে খালিশপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামাল হোসেন খান জানান, এখনও কেউ থানায় অভিযোগ বা মামলা করেনি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।