ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) দাবি, বিশ্বাসযোগ্য তদন্তের মাধ্যমে কঠোর জবাবদিহিতা নিশ্চিতের কোনো বিকল্প নেই। এই ঘটনায় পুলিশের করা একাধিক মামলার সঙ্গে সেনাবাহিনীর ‘প্রাথমিক তদন্তের’ বক্তব্য একেবারেই বিপরীত। এই বৈপরীত্যগুলো যথাযথভাবে আমলে নিয়ে গ্রহণযোগ্য তদন্ত করে জনগণকে জানাতে হবে আদতেই পুলিশ ‘আত্মরক্ষার্থে’ গুলি চালিয়েছিল কীনা।
নিহতের সঙ্গী শিক্ষার্থী ও অন্যসকল সম্ভাব্য সাক্ষীর নিরাপত্তাসহ সকল অধিকার নিশ্চিত করতে হবে বলে বুধবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে দাবি করে টিআইবি।
এতে বলা হয়, গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০১৮ সালের ৪ মে থেকে সারা দেশে শুরু হওয়া মাদকবিরোধী অভিযানে গত ৩০ জুলাই পর্যন্ত শুধু কক্সবাজার জেলায় পুলিশ, বিজিবি ও র্যাবের সাথে শতাধিক ‘বন্দুকযুদ্ধের’ ঘটনায় নিহত হয়েছেন ২৮৭ জন। অথচ দেশের সংবিধান সব নাগরিকের আইনি সুরক্ষা পাওয়ার যে অধিকার দিয়েছে, তাতে মাদক ব্যবসায় জড়িত থাকলেই কাউকে বিনা বিচারে হত্যা করার কোনো অধিকার দেয়া হয়নি।
নিহতদের বেশ কয়েকজন কোনোভাবেই ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন না, এমন তথ্য-প্রমাণ নিয়ে বিভিন্ন সময় গণমাধ্যমের প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এমনকি চাঁদা দেয়া না হলে ‘ক্রস ফায়ারে দেয়ার’ মতো অভিযোগও খুব কম নয়, বলেন সংস্থাটি।
এ দায় প্রত্যক্ষভাবে জড়িতদের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট কোনো প্রতিষ্ঠানই এড়াতে পারেনা উল্লেখ করে টিআইবি বলে, দেশে ইয়াবা ব্যবসার লাগাম টানা যায়নি, ‘বড় বড় ক্রিড়ানকরা’ এক রকম ‘প্রাতিষ্ঠানিক সুরক্ষা’ নিয়ে বহাল তবিয়তে আছে। আর পুলিশ বাহিনী, সশস্ত্র বাহিনী ও পুলিশ বাহিনীর সমন্বয়ে গঠিত এলিট ফোর্স র্যাব, বিজিবি একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ের কিছু ‘মাদক ব্যবসায়ী’ ও বেশ কিছু ‘নিরপরাধ’ মানুষকে ‘বন্দুকযুদ্ধের’ নামে হত্যা করেছে।
তারা বলছে, পুলিশের গুলিতে সাবেক সেনা কর্মকর্তা নিহত হওয়ার ঘটনাকে এই সামগ্রিক পরিস্থিতির আলোকেই বিবেচনা করতে হবে। কারণ দেশের সংবিধান যেখানে কোনো নাগরিককেই বিনা বিচারে হত্যার অনুমোদন দেয়না, সেখানে ‘দায়মুক্তির’ অপব্যবহারের বিষয়টিও অবান্তর।
টিআইবি আশা করে সরকার এই ঘটনার সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য তদন্ত নিশ্চিত করার পাশাপাশি বিনা বিচারে হত্যার সংবিধানবিরোধী অবস্থান থেকে সরে আসার কার্যকর উদ্যোগ নেবে। পাশাপাশি এ মর্মান্তিক ঘটনায় নিহত সাবেক সেনা কর্মকর্তার সহকর্মী তিন শিক্ষার্থীর সর্বোচ্চ আইনি সুরক্ষা নিশ্চিত করা হবে।