রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের উন্নয়নমূলক প্রকল্প নিয়ে আদালত অবমাননার মামলা এবং গাছ কাটা বন্ধের রিট আবেদনের ওপর শুনানি মূলতবি করেছেন হাইকোর্টের পৃথক দুটি বেঞ্চ।
বৃহস্পতিবার আদালত অবমাননার মামলার শুনানি ২ সপ্তাহ মুলতবি করেছেন বিচারপতি মামনুন রহমান ও বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চ।
আর গাছ কাটা বন্ধ চেয়ে ৬টি সংগঠন ও এক ব্যক্তির করা রিট আবেদনের শুনানি ৪ সপ্তাহের জন্য মূলতবি করেছেন বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি এস এম মনিরুজ্জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চ।
আরও পড়ুন: সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গাছ কাটা বন্ধে হাইকোর্টে রিট
হাইকোর্টে আদালত অবমাননার মামলার পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ। আর রিট আবেদনকারীপক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার ফিদা এম কামাল ও অ্যাডভোকেট সৈয়দা রেজওয়ানা হাসান।
রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন হাইকোর্টকে বলেন, রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের উন্নয়নমূলক প্রকল্প নিয়ে পরিবেশবাদীসহ সকলের সাথে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী বৈঠক করবেন।
আরও পড়ুন: সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গাছ না কাটার নির্দেশ হাইকোর্টের
তিনি বলেন, বৈঠকের পরে তারা উদ্যানে গাছ না কাটা এবং ৭ মার্চের ভাষণের আদলে অবকাঠামো নির্মাণসহ যাবতীয় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।’ এজন্য তিনি সময় চেয়ে দুটি মামলার শুনানি মূলতবির আবেদন জানান।
শুনানিকালে বিচারপতি ফারাহ মাহবুব উভয়পক্ষের আইনজীবীদের উদ্দেশে বলেন, আমরা চাই সেখানে (সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে) গাছও থাকবে। আর হাইকোর্টের আগের রায়ের নির্দেশনা অনুসারে কাজও হবে। আর একটা কথা, অ্যাটর্নি জেনারেল বলেছেন যে, সরকার এটা নিয়ে পরিবেশবাদীদের সঙ্গে বসে আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে সমাধান চান। আমরাও চাই, সমস্যার সন্তোষজনক নিষ্পত্তি হোক। অন্যথায় যারা সংক্ষুব্ধ তারা যেকোনো সময়ই আদালতে আসতে পারবেন।
আদালত অবমাননার মামলা
‘উদ্যানের ঐতিহাসিক স্থানসমুহ যথাযথভাবে সংরক্ষণে ২০০৯ সালের হাইকোর্টের রায় বাস্তবায়ন হয়নি। উল্টো সেখানে গাছ কেটে রেস্টুরেন্ট ও দোকান বানাচ্ছে’-এই অভিযোগে সরকারের তিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আদালত অবমাননার আবেদন করেন অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ।
মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের সচিব তপন কান্তি ঘোষ, গণপূর্তের প্রধান প্রকৌশলী মো. শামিম আখতার এবং প্রধান আর্কিটেক্ট অব বাংলাদেশ মীর মনজুর রহমানের বিরুদ্ধে এই আদালত অবমাননার আবেদন করা হয়।
বিচারপতি মামনুন রহমান ও বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চে এ আবেদনের ওপর শুনানি শুরু হলে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মহোদয় আমাকে জানিয়েছেন যে, এখন গাছ কাটা হচ্ছে না। তিনি পরিবেশবাদীদের সঙ্গে বসতে চান। বসেই সমাধান করতে চান। এজন্য এক মাস সময় চাচ্ছি। এ পর্যন্ত শুনানি মূলতবি রাখা হোক।
এই আবেদনের বিরোধিতা করে মনজিল মোরসেদ বলেন, অ্যাটর্নি জেনারেল যেহেতু বলছেন তাকে মন্ত্রী বলেছেন যে সবাইকে নিয়ে বসতে চান। তাহলে আদালত সময় দিতে পারেন। তবে অ্যাটর্নি জেনারেল আদালতকে নিশ্চিত করবেন যে আর কোনো গাছ কাটা হবে না।
এ সময় উভয়পক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে তর্ক-বিতর্ক চলে।
বেশ কিছুক্ষণ এভাবে চলার পর আদালত বলেন, যেহেতু অ্যাটর্নি জেনারেল বলছেন যে তারা বসতে চান। তাহলে আমরা শুনানি দুই সপ্তাহের জন্য মূলতবি রাখছি। যদি এর মধ্যে কোনো গাছ কাটা হয় তখন আপনি (মনজিল মোরসেদ) আদালতে আসতে পারবেন। এরপর আদালত আদেশ দেন।
ছয় সংগঠনের রিটের শুনানি
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মূল নকসার সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ স্থাপনা উচ্ছেদ, উদ্যান সংরক্ষণ এবং স্বাধীনতা যুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে মূলরুপে রাখার নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদন করে পরিবেশবাদী ছয়টি সংগঠন ও একজন ব্যক্তি। এ আবেদনের ওপর বিচারপতি ফারাহ মাহবুবের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চে বেলা একটার দিকে শুনানি শুরু হয়।
শুরুতেই অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রীর কথা উল্লেখ করে শুনানি একমাস মূলতবি রাখার আবেদন জানান।
তিনি বলেন, মন্ত্রী পরিবেশবাদীদের সঙ্গে বসে বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে চান।
সৈয়দা রেজওয়ানা হাসান এই বক্তব্যের বিরোধিতা করে বলেন, এর আগেও মন্ত্রী বলেছিলেন যে আমাদের সঙ্গে ১১ মে বসবেন। কিন্তু বসেননি। সুতরাং এই মুহূর্তে গাছ কাটার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিন এবং রুল জারি করুন।
জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, মন্ত্রী মহোদয় নিজেই বলেছেন যে গাছ কাটা বন্ধ আছে। আপাতত গাছ কাটবে না।
এ সময় আদালত রিট আবেদনকারীপক্ষের আইনজীবীদের উদ্দেশে বলেন, আপনাদের উদ্বেগ বুঝতে পারছি। যেহেতু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আপনাদের নিয়ে বসতে চাচ্ছেন। আমরাও চাই আলাপ আলোচনার ভিত্তিতে বিষয়টির সন্তোষজনক সমাধান হোক। আপনারা সামনা-সামনি বসুন। সকলে মিলে সমস্যা চিহ্নিত ও সমাধান করুন। আমরা অ্যাটর্নি জেনারেলের কথা উল্লেখ করে আদেশ দিচ্ছি। চার সপ্তাহ মূলতবি রাখছি।
আদালতে বলেন, আমরা চাই, আগের রায়ের নির্দেশনার আলোকে সমঝোতার ভিত্তিতে বিষয়টির সন্তোষজনক সমাধান হোক। আর যদি কোনো সমস্যা হয় তবে আদালত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।