বাংলাদেশের শহর এলাকায় ১৫ বছরে মাথাপিছু তিন গুণ বেড়েছে প্লাস্টিকের ব্যবহার। ২০০৫ সালে মাথাপিছু প্লাস্টিকের ব্যবহার তিন কেজি ছিল। কিন্তু ২০২০ সালে সে পরিমাণ তিন গুণ বেড়ে ৯ কেজি হয়েছে।
ঢাকা শহরে এই পরিমাণ ২২ কেজি ৫০০ গ্রাম, যা জাতীয় গড়ের চেয়ে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেশি। ২০০৫ সালে ঢাকায় মাথাপিছু প্লাস্টিকের ব্যবহার ছিল ৯ কেজি ২০০ গ্রাম।
সোমবার রাজধানীর একটি হোটেলে এক অনুষ্ঠানে ‘টুয়ার্ডস এ মাল্টিসেক্টরাল অ্যাকশন প্ল্যান ফর সাসটেইনেবল প্লাস্টিক ম্যানেজমেন্ট ইন বাংলাদেশ'নামক বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
অনুষ্ঠানে বিশ্বব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত কান্ট্রি ডিরেক্টর দানদান চেন তার উদ্বোধনী বক্তব্যে বলেন, 'দ্রুত প্রবৃদ্ধি ও নগরায়ণের কারণে বাংলাদেশে প্লাস্টিকের ব্যবহার এবং দূষণ উভয়ই হঠাৎ বেড়ে গেছে। করোনাভাইরাস মহামারি প্লাস্টিক আবর্জনার অব্যবস্থাপনাকে আরও বাড়িয়েছে।'
তিনি বলেন, ‘ক্রমশ বাড়তে থাকা দূষণের হার কমিয়ে সবুজ প্রবৃদ্ধি নিশ্চিতের জন্য প্লাস্টিকের টেকসই ব্যবস্থাপনা বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
তিনি আরও বলেন,‘সরকারের ‘ন্যাশনাল অ্যাকশন প্ল্যান’কে আমরা সাধুবাদ জানাই।’
সংস্থাটির সাম্প্রতিক এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ প্লাস্টিক দূষণ ব্যবস্থাপনার জন্য ‘ন্যাশনাল অ্যাকশন প্ল্যান’ এ স্বল্পমেয়াদী (২০২২-২০২৩), মধ্যমেয়াদী (২০২৪-২০২৬) এবং দীর্ঘমেয়াদী (২০২৭-২০৩০) পরিকল্পনা অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: জীবিকার উন্নয়নে বাংলাদেশকে ৩০০ মিলিয়ন ডলার ঋণ দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক
প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়, টেকসই প্লাস্টিক ব্যবস্থাপনার জন্য বাংলাদেশের জাতীয় কর্মপরিকল্পনা ২০২৫ সালের মধ্যে ৫০ শতাংশ প্লাস্টিক পুনর্ব্যবহার করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ, ২০২৬ সালের মধ্যে একক-ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা ৯০ শতাংশ করে প্লাস্টিক বর্জন এবং ২০২০/২১ বেসলাইন থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপাদন ৩০ শতাংশ কমিয়ে আনতে হবে।
পরিকল্পনাটি অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়, পরিবেশ অধিদপ্তর, বেসরকারি খাত এবং অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের দ্বারা সম্মিলিতভাবে তৈরি করা হয়েছিল।
করোনা মহামারি প্লাস্টিক দূষণকে আরও বৃদ্ধি করেছে। বিশেষ করে মাস্ক, গ্লাভস এবং ব্যক্তিগত সুরক্ষামূলক সরঞ্জামগুলোতে ব্যবহৃত একবার ব্যবহার করা হয় এসব জিনিসের বেশিরভাগই প্লাস্টিক থেকে তৈরি হয়।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, প্লাস্টিক বর্জ্যের একটি বড় অংশ জলাশয় ও নদীতে ফেলা হয়।
এতে বলা হয়,বাংলাদেশ ধাপে ধাপে প্লাস্টিক দূষণ রোধে পদক্ষেপ নিয়েছে। যেমন- ২০০২ সালে বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে বাংলাদেশ প্লাস্টিকের শপিং ব্যাগ নিষিদ্ধ করে। তবে কিছুদিন পর আবারও বেড়ে যায় প্লাস্টিক দূষণ। পাট প্যাকেজিং আইন ২০১০ ছয়টি প্রয়োজনীয় জিনিসের (ধান, চাল, গম, ভুট্টা, সার, চিনি) প্লাস্টিকের প্যাকেজিংয়ের বিকল্প হিসাবে প্রচার করা হয়। এছাড়া ২০২০ সালে হাইকোর্ট সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে উপকূলীয় অঞ্চল এবং সারা দেশের সমস্ত হোটেল ও মোটেলগুলোতে একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক ব্যবহার নিষিদ্ধ করার নির্দেশ দেয়।
আরও পড়ুন: আরও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে বাংলাদেশ-বিশ্বব্যাংকের ২৫ কোটি ডলারের চুক্তি
দেশে ঝরে পড়া তরুণ ও বস্তির শিশুদের শিক্ষায় বিশ্বব্যাংকের সহায়তা