সম্প্রতি মিয়ানমারের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বিষয়কমন্ত্রী কাইয়া টিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেনকে লেখা এক চিঠিতে এ কথা জানান।
এছাড়া বাংলাদেশসহ সকল প্রতিবেশী দেশের সাথে শান্তিপূর্ণ সহঅবস্থান ও পারস্পারিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ক সমস্যা সমাধানে মিয়ানমার প্রতিজ্ঞাবদ্ধ বলে মন্ত্রী চিঠিতে উল্লেখ করেন।
কাইয়া টিন বলেন, মিয়ানমার প্রতিবেশী দেশের সাথে পারস্পারিক অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে যেকোনো দ্বিপাক্ষিক বিষয়ের সমাধান করতে চায়।
গত ১৯ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত চীন, মিয়ানমার ও বাংলাদেশের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের মাধ্যমে মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর দ্রুত প্রত্যাবাসন শুরুর আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
মিয়ানমারের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বিষয়কমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মতো তিনিও মনে করেন যে করোনা মহামারির কারণে নজিরবিহীন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন জাতির মধ্যে পারস্পারিক সংহতি ও সহযোগিতা প্রযোজন।
পারস্পারিক অলোচনার ভিত্তিতে ১৯৭৮ ও ১৯৯২ সালে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত নেয়ার বিষয়টি মন্ত্রী উল্লেখ করেন।
আরও পড়ুন: বছরের ২য় প্রান্তিকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে আশাবাদী বাংলাদেশ
বাংলাদেশি পাসপোর্টধারী রোহিঙ্গারা বিবেচিত হচ্ছেন বাংলাদেশি হিসাবে: সৌদি দূত
রোহিঙ্গাদের ফেরাতে মিয়ানমার রাজি থাকলেও আন্তরিক নয়: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
চিঠিতে কাইয়া টিন ড. মোমেনের সুস্বাস্থ্য এবং বাংলাদেশের জনগণের শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করেন।
গত ১ জানুয়ারি মিয়ানমারের মন্ত্রীকে চিঠি প্রদানের জন্য ড. মোমেনকে ধন্যবাদ জানান।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, কাইয়া টিন ও ড. মোমেন একই সময়ে জাতিসংঘে নিজ নিজ দেশের স্থায়ী প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন এবং সেসময় থেকে তাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা গড়ে উঠে বলে চিঠিতে উল্লেখ করেন।
এর আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন জানান, যাচাই বাছাইয়ের জন্য ৮ লাখ ৪০ হাজার রোহিঙ্গার একটি তালিকা মিয়ানমারের কাছে হস্তান্তর করেছে বাংলাদেশ।
‘কিন্তু মিয়ানমার মাত্র ৪২ হাজার মানুষের তথ্য যাচাই করেছে। এ বিষয়ে তাদের গুরুত্বের অভাব রয়েছে,’ বলেন তিনি।
ড. মোমেন বলেন, বাংলাদেশ যথাযথভাবে তার দায়িত্ব পালন করলেও মিয়ানমার তা করছে না।
তবে প্রত্যাবাসন শুরুর বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। কারণ ১৯৭৮ এবং ১৯৯২ সালে নিজ নাগরিকদের ফিরিয়ে নিয়েছিল মিয়ানমার।
প্রায় তিন বছর আগে মিয়ামারের সেনারা রোহিঙ্গাদের টার্গেট করে ‘হত্যা ও ধর্ষণ’ চালিয়েছিল এবং রোহিঙ্গা গ্রামগুলো পুড়িয়ে দিয়েছিল। জাতিসংঘ, রিফিউজি ইন্টারন্যাশনাল, ইউনাটেড স্টেটস হলোকাস্ট মেমোরিয়াল মিউজিয়াম, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর এবং আরও অনেককেই এ বিষয়টি দেখিয়েছে।
সেসময় ৮ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা ‘সহিংস গণহত্যা’ থেকে বাঁচতে পালিয়ে এসেছিল এবং বাংলাদেশ এখন প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে জায়গা দিয়েছে।
রোহিঙ্গা সঙ্কটের স্থায়ী সমাধানের জন্য বাংলাদেশ একাধিক উপায়ে- দ্বিপক্ষীয়, বহুপক্ষীয়, ত্রিপক্ষীয় এবং বিচার ব্যবস্থা মাধ্যমে চেষ্টা করে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ ও মিয়ানমার ২০১৭ সালের ২৩ নভেম্বর প্রত্যাবাসন চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। ২০১৮ সালের ১৬ জানুায়ারি ‘ফিজিক্যাল অ্যারেঞ্জমেন্ট’ সম্পর্কিত একটি চুক্তিতেও স্বাক্ষর করে ঢাকা-নেপিদো, যা রোহিঙ্গাদের তাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নিতে সহায়ক হবে বলে মনে করা হয়েছিল।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা ইস্যুতে বড় দেশগুলোর সিদ্ধান্ত কৌশলগত: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে বাংলাদেশ, মিয়ানমার ও চীন
ফিরে দেখা ২০২০: রোহিঙ্গাদের জন্য যন্ত্রণার আরও এক বছর
মিয়ানমার সরকারের প্রতি রোহিঙ্গাদের আস্থার অভাবের কারণে ২০১৮ সালের নভেম্বরে এবং ২০১৯ সালের আগস্টে দুবার প্রত্যাবাসন প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের অনুকূল পরিবেশ তৈরিতে মিয়ানমারকে আরও অধিকতর চাপ প্রয়োগ এবং বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে এ প্রত্যাবাসন শুরু করতে ‘সতর্কতার সাথে আশাবাদ’ ব্যক্ত করেছে বাংলাদেশ।
প্রত্যাবাসনের অবস্থা তৈরিতে উভয় দেশের মধ্যে ফেব্রুয়ারিতে একটি যৌথ ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা হবে।
২০ জানুয়ারি প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে বাংলাদেশ, মিয়ানমার এবং চীনের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় আলোচনা শেষে পররাষ্ট্র সচিব জানান, আগের দুটি ব্যর্থ প্রচেষ্টা থেকে শিক্ষা নিয়ে তারা এগিয়ে যেতে চান, যাতে সফলভাবে এবার প্রত্যাবাসন শুরু করা যায়।
বৈঠকে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। চীনের ভাইস মিনিস্টার লুও ঝাওহুই বেইজিং থেকে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের প্রতিনিধিদের সাথে ভার্চ্যুয়ালি বৈঠকে যোগ দেন।
রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনই এ সঙ্কটের একমাত্র সমাধান বলে মনে করে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং যত দ্রুত সম্ভব প্রত্যাবাসন শুরু করতে চায় বাংলাদেশ।