সম্প্রতি এমনই কিছু প্রতিষ্ঠানের তালিকা প্রকাশ করেছে বিশ্বের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় ব্যবসা সংবাদ ভিত্তিক ম্যাগাজিন ফাস্ট কোম্পানি ডট কম। চলুন জেনে নেয়া যাক ২০১৯ সালের ওই তালিকায় স্থান পাওয়া বিশ্বের অন্যতম সেরা ১০ উদ্ভাবনী ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে:
১.মেইতুয়ান ডিয়ানপিং:
চীনা ভিত্তিক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান মেইতুয়ান ডিয়ানপিং। বিশ্বের ২,৮০০ শহরের সাড়ে তিন কোটিরও বেশি মানুষের জন্য অনলাইনের মাধ্যমে খাবার সরবরাহ, হোটেল বুকিং এবং সিনেমার টিকেট কাটার মতো পরিষেবা দিয়ে থাকে প্রতিষ্ঠানটি। ২০১৮ সালের প্রথমার্ধে ৩৩ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার লেনদেন করেছে চীনের এই প্রতিষ্ঠান। প্রতি বছরই এর গ্রাহক সংখ্যা গড়ে ৩৮ শতাংশ করে বাড়ছে।
২. গ্রাব:
সিঙ্গাপুরভিত্তিক রাইড শেয়ারিং অ্যাপলিকেশন গ্রাব। এই প্রতিষ্ঠানের ধারাবাহিক উত্থানে ২০১৮ সালে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে নিজেদের ব্যবসা গুটিয়ে নিতে বাধ্য হয় উবার। আর পরবর্তীতে উবারের বাজারও দখল করে নেয় গ্রাব। এর কয়েক মাস পরই নিজেদের এক কোটি ৩০ লাখ গ্রাহকের জন্য রাইড শেয়ারিংয়ের পাশাপাশি খাবার সরবরাহ, হোটেল বুকিং এবং বিভিন্ন আর্থিক পরিষেবা চালু করে প্রতিষ্ঠানটি। এই প্রচেষ্টার মাধ্যমেই গ্রাব ২০১৮ সালে ১ বিলিয়ন ডলার মুনাফা করে এবং ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য আরো ৩ বিলিয়ন ডলার তহবিল বরাদ্দ পায়।
৩. সুইটগ্রীণ:
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক জনপ্রিয় রেস্টুরেন্ট সুইটগ্রীণ। দেশের ৮টি রাজ্যে মোট ৯১টি শাখা রয়েছে এই রেস্টুরেন্টের। এখানকার মূল আকর্ষণ বিভিন্ন ধরনের সালাদ। দেশজুড়ে ১৫০ জন কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি খাবারের উপাদান সংগ্রহ করে তা প্রক্রিয়াজাত করে পৌঁছে দেওয়া হয় মানুষের খাবারের টেবিল পর্যন্ত। এই প্রতিষ্ঠনের কাছে সবচেয়ে বেশি খাবারের অর্ডার আসে অনলাইনের মাধ্যমে। তাদের অনলাইন পেজের সাথে যুক্ত আছে ১০ লাখেরও বেশি মানুষ। সুনাম ছড়িয়ে পড়ায় দেশের বিভিন্ন স্থানে আরও ১৫টি নতুন শাখা খোলার উদ্যোগ নিয়েছে গ্রীণসুইট।
৪. আলিবাবা গ্রুপ:
চীনাভিত্তিক বহুজাতিক ই-কমার্স, পাইকারি, ইন্টারনেটও প্রযুক্তি বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান আলিবাবা প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৯৯ সালে। ওয়েবপোর্টালের মাধ্যমে বিভিন্ন সেবা প্রদান করে থাকে প্রতিষ্ঠানটি। আলিবাবা বিশ্বের শীর্ষ ১০টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে একটি। ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে আলিবাবা এশিয়ার দ্বিতীয় কোম্পানি হিসেবে ৫০০ বিলিয়ন বাজার মূল্য অতিক্রম করে। আলিবাবা এখন বিশ্বের নবম মূল্যবান ব্রান্ড।
৫. অ্যাপল:
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বহুজাতিক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান অ্যাপল ইনকর্পোরেটেড। এই প্রতিষ্ঠান কনজ্যুমার ইলেকট্রিক, কম্পিউটার সফটওয়্যারসহ বিভিন্ন পণ্য তৈরি করে থাকে। এই কোম্পানির পণ্যের মধ্যে রয়েছে আইফোন স্মার্টফোন, আইপ্যাড ট্যাবলেট কম্পিউটার, ব্যক্তিগত কম্পিউটার ম্যাক, বহনযোগ্য মিডিয়া প্লেয়ার আইপড, স্মার্টওয়াচ ও স্মার্ট টিভি। অ্যাপলের সফটওয়্যারের মধ্যে রয়েছে ম্যাক ওএস এবং আইওএস অপারেটিং সিস্টেম, আইটিউন্স মিডিয়া প্লেয়ার, সাফারি ওয়েব ব্রাউজার। প্রফেশনাল অ্যাপলিকেশনের মধ্যে রয়েছে ফাইনাল কাট প্রো, লজিক প্রো এবং এক্সকোড। ২০১৭ সালে বিশ্বব্যাপী অ্যাপলের বার্সিক আয় ছিল ২২ হাজার ৯০০ কোটি মার্কিন ডলার। মুনাফার ভিত্তিতে স্যামসাং এবং হুয়াওয়ের পরে তৃতীয় বৃহৎ মোবাইল নির্মাতা প্রতিষ্ঠান অ্যাপল।
৬. ডমিনোজ:
বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ খাবার সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান এখন ডমিনোজ। বিশেষ করে হালের জনপ্রিয় ফাস্টফুড পিৎজা’র জন্য ডমিনোজের সুখ্যাতি এখন দুনিয়াজুড়ে। ২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠানটি শুধুমাত্র অনলাইনের মাধ্যমেই এর ৬০ শতাংশেরও বেশি গ্রাহকের কাছে খাবার সরবরাহ করেছে। শেয়ার বাজারের খারাপ অবস্থার মধ্যেও ডমিনোজের শেয়ার বেড়েছে ২২ শতাংশ।
৭. আফ্রিকান লিডারশিপ ইউনিভার্সিটি:
মোট জনসংখ্যার ৫০ শতাংশ ১৯ বছরের কম বয়সী হওয়ায় ২০৩৫ সালের মধ্যে বিশ্বের সবচেয়ে বড় কর্মযোগ্য লোকের বাসস্থান হবে আফ্রিকা। এই মহাদেশকে বদলে দিতে কাজ করবে প্রায় এক বিলিয়ন মানুষ। এমন পরিসংখ্যানে অনুপ্রাণিত হয়ে উচ্চশিক্ষা প্রসারে ২০০৮ সালে জোহানেসবার্গে আফ্রিকান লিডারশিপ হাই স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন ঘানার উদ্যোক্তা ফ্রেড সোয়ানিকার। প্রতিষ্ঠানের সাফল্য দেখে ২০১৫ সালে প্রতিষ্ঠা করেন আফ্রিকান লিডারশিপ ইউনিভার্সিটি। দুই বছর পর এই বিশ্ববিদ্যালয়ের আরো একটি ক্যাম্পাস প্রতিষ্ঠা করেন রুয়ান্ডায়। আফ্রিকান লিডারশিপ ইউনিভার্সিটি বর্তমান আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীদের মাঝে উচ্চশিক্ষা প্রসারে ব্যাপক বূমিকা রাখছে।
৮. মোজিলা:
মোজিলা ফায়ারফক্স মোজিলা ফাউন্ডেশন ও এর অধীন্স্ত মোজিলা কর্পোরেশন কর্তৃক উন্নয়নকৃত একটি ফ্রি ও ওপেন সোর্স ওয়েব ব্রাউজার। সব ধরণের অপারেটিং সিস্টেমের জন্য এর আলাদা আলাদা সংস্করণ রয়েছে। ২০০২ সালে তৈরির পর ২০০৪ সালে প্রথম এটি উন্মুক্ত করা হয়। মাত্র ৯ মাসে ৬০ লাখেরও বেশিবার ডাউনলোড হওয়ার মাধ্যমে এটি হানা দেয় ইন্টারনেট এক্সপ্লোরারের রাজত্বে। মোজিলা কর্তৃপক্ষের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্তই ফায়ারফক্সের ব্যবহারকারী ছিল ৫০ কোটিরও বেশি।
৯. দ্য ওয়াল্ট ডিজনি কোম্পানি:
দ্য ওয়াল্ট ডিজনি কোম্পানি যা মূলত ডিজনি নামেও সুপরিচিত। যুক্তরাষ্ট্র তথা পুরো বিশ্বের অ্যানিমেশন জগতের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান এটি। ডিজনি বর্তমানে বিখ্যাত তার ব্যাপক পরিধি নিয়ে গঠিত চলচ্চিত্র নির্মাণ বিভাগ দ্য ওয়াল্ট ডিজনি স্টুডিওসের জন্য। ডিজনির অধীনে রয়েছে এবিসি, ডিজনি চ্যানেল, ইএসপিএন, এ+ নেটওয়ার্কস কেবল টিভি নেটওয়ার্কসহ বিভ্ন্নি প্রচার মাধ্যমের মালিকানা।
১০. ইউনিটি টেকনোলজিস:
ভিডিও গেম নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ইউনিটি টেকনোলজিস। কম সময়ের মধ্যে ত্রিমাত্রিক অ্যানিমেশন তৈরিতে ডেভলপারদেরও সহায়তা দিয়ে থাকে প্রতিষ্ঠানটি। ২০১৮ সালে নিজেদের উদ্ভাবন করা থ্রি ডি প্রযুক্তি বিভিন্ন প্রকৌশল, সিনেমা এবং মোটরগাড়ি শিল্পেও প্রসারিত করে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ইউনিটি টেকনোলজিস।