দেশের সকল অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দরে যাত্রী সেবার মান বৃদ্ধিসহ আধুনিকায়ন ও সম্প্রসারণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)।
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ দেশের সাতটি বিমানবন্দরে অভ্যন্তরীণ টার্মিনাল আধুনিকায়ন ও সম্প্রসারণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। পাশাপাশি যাত্রী সেবার মান বাড়ানোর জন্য এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
তিনটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর-ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ছাড়াও কক্সবাজার, রাজশাহী, সৈয়দপুর, নীলফামারী এবং বরিশালে অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দর রয়েছে।
আরও পড়ুন: অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা জোরদারে গুরুত্বারোপ: সরকারি নথি
পর্যায়ক্রমে সব অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দরে আধুনিকায়ণের পদক্ষেপ
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম মফিজুর রহমান ইউএনবিকে বলেন, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ দেশের সাতটি বিমানবন্দরের অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দরগুলোতে যাত্রী সেবার মান বাড়ানোর কাজ চলছে।
তিনি বলেন, দেশে বর্তমানে অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটে যাত্রী সংখ্যা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। ইতোমধ্যে শাহজালাল বিমানবন্দরে অবতরণ টার্মিনালের কাজ শুরু হয়েছে, যা দ্রুত সময়ের মধ্যে সম্প্রসারণ কাজ শেষ হবে বলে আশা করছি। এছাড়া বাকি সবগুলোতেই দ্রুত সময়ে কাজ শুরু হবে।
চেয়ারম্যান বলেন, শাহজালালের অভ্যন্তরীণ টার্মিনাল চলতি বছরের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে সম্প্রসারণের পরিকল্পনা রয়েছে।
তিনি বলেন, বিমানবন্দরগুলোর অভ্যন্তরীণ টার্মিনাল ভবনগুলো একইভাবে সম্প্রসারণ করা হবে এ জন্য একটি বাজেট ধরা হয়েছে। ইতোমধ্যে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় থেকে অনুমতি নেয়া হয়েছে।
এছাড়াও কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রূপান্তরের কাজ চলছে। ওই কাজের অংশ হিসেবে সেখানে অভ্যন্তরীণ টার্মিনালকে আরও আধুনিকায়ন করা হবে।
বেবিচক জানায়, অভ্যন্তরীণ যাত্রীদের চাপ সামাল দেয়ার পাশাপাশি সেবার মান বাড়ানোর জন্য এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। শাহজালালের অভ্যন্তরীণ পুরনো টার্মিনাল ভবনের দ্বিতীয় তলায় ৮ হাজার বর্গফুটের একটি ফ্লোর তৈরি করা হচ্ছে। ওই ফ্লোরের অর্ধেক অংশ জুড়ে থাকবে দুটি আন্তর্জাতিক মানের লাউঞ্জ। আর বাকি অর্ধেক জায়গায় থাকবে যাত্রীদের বসার ব্যবস্থাসহ অন্যান্য সুবিধা। থাকবে লিফটসহ শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা।
তিনি আরও জানান, শাহাজালাল বিমানবন্দরে অভ্যন্তরীন টার্মানালে আধুনিক স্ক্যানিং মেশিন নিরাপত্তা সরঞ্জাম, আন্তর্জাতিক মানের দুটি লাউঞ্জ, ৩০০ অধিক যাত্রী বসার ব্যবস্থা, স্মোকিং রুম, ডায়াপার চেঞ্জিং স্টেশন, মাদার্স কর্নার স্থাপন করা হবে।
আরও পড়ুন: ঢাকা বিমানবন্দরে ৩০ স্বর্ণের বার জব্দ, বিমানের নিরাপত্তা কর্মীসহ আটক ২
অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটে চাপ বাড়ছে
এ বিষয়ে বেসামরিক বিমানচলাচল ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী ইউএনবিকে বলেন, বহির্বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বিমানবন্দরে যাত্রী সেবার মান বাড়াতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী দেশের সকল অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দরগুলো আরও আধুনিকায়ন ও সম্প্রসারণ করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, দেশের বিদ্যমান যাত্রী পরিবহন ব্যবস্থার মধ্যে অভ্যন্তরীণ বিমান চলাচল গত কয়েক বছরে উল্লেখযোগ্য হারে যাত্রী প্রতিনিয়তই বাড়ছে। দেশের মানুষ এখন অর্থনৈতিকভাবে অনেক উন্নত হয়েছে। বিদেশি, ব্যবসায়ী, পর্যটক সময় বাঁচাতে অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটে বেশি যাতায়ত করছে ফলে যাত্রী সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেজন্যই আমরা সকল অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দরের কাজগুলোতে গুরুত্ব দিয়ে প্রকল্প হাতে নিয়েছি।
তিনি বলেন, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটে যাত্রী সংখ্যা প্রচুর হওয়ায় ঢাকায় অভ্যন্তরীণ টার্মিনালে যাত্রীদের অপেক্ষমাণ সময় আরও স্বাচ্ছন্দবোধসহ সকল সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করা হবে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, দেশের সকল অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দরগুলোকে ঢেলে সাজানো হবে। আন্তর্জাতিক বিমানবন্দেরের সকল সুবিধা অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দেরে কীভাবে করা যায় আমরা সে উদ্যোগ নিয়েছি।
বেবিচক জানায়, অভ্যন্তরীণ টার্মিনালে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও আপডেট করা হচ্ছে। অভ্যন্তরীণ টার্মিনালে অপরাধ ঠেকাতে নিরাপত্তা সরঞ্জাম স্থাপন করা হবে। সব রুটে নিরাপত্তা আরও জোরদার করা হবে।
পড়ুন: বিমানবন্দর রেলস্টেশনে ট্রেনে কাটা পড়ে যুবকের মৃত্যু
বিমানবন্দর এবং এয়ারলাইন্স উভয় ক্ষেত্রেই সেবার মান উন্নত করা দরকার
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স ও নভোএয়ার অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট পরিচালনা করছে। তবে সবচেয়ে বেশি বিমান পরিচালনা করছে ইউএস বাংলা-এয়ারলাইন্স।
ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স-এর মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) কামরুল ইসলাম ইউএনবিকে বলেন, ৭-৮ বছরে অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটে প্রায় ৩০০ শতাংশ যাত্রী বেড়েছে। সে অনুযায়ী যাত্রীদের সুবিধা বাড়েনি। যাত্রী সেবার মান আগের অবস্থায় রয়ে গেছে।
তিনি বলেন, এয়ারলাইন্সগুলো শুধু যাত্রী সেবার মান বাড়ালে হবে না। সাথে এয়ারপোর্টও সেবার মান থাকতে হবে। মোট কথা যাত্রী সেবার মান এয়ারপোর্ট ও এয়ারলাইন্স দুটো মিলিয়েই থাকতে হবে।
তিনি বলেন, ঢাকা, কক্সবাজার ও রাজশাহীতে যাত্রী লাউঞ্জ স্থাপন করা হয়েছ। তেমনি বাকি সবগুলো অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দরে যাত্রী লাউঞ্জসহ সকল সুযোগ সুবিধা দিয়ে যাত্রী সেবার মান বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।