চাল ব্যবসায়ীদের দাবি, করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে মানুষের মাঝে খাদ্যপণ্য মজুতের প্রবণতা বেড়ে যাওয়ায় বাজারে চালের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং এতে দাম বেড়ে গেছে। মোকামে চালের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় মিল মালিকরাও বেশি উৎপাদনে নজর দিয়েছেন। ফলে বাজারে ধান কেনার প্রতিযোগিতা তৈরি হওয়ায় এর দামও বৃদ্ধি পেয়েছে।
নওগাঁ ধান-চাল আড়তদার সমিতির সভাপতি নিরোদ বরণ সাহা চন্দন বলেন, ‘বছরের এ সময়ে নওগাঁর চালের মোকামগুলো থেকে প্রতিদিন খুব বেশি হলে ১০০ ট্রাক চাল ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ দেশের বড় বাজারগুলোতে যেত। কিন্তু গত পাঁচ-ছয় দিন ধরে প্রতিদিন প্রায় ৫০০ ট্রাক চাল সরবরাহ করা হচ্ছে। অর্থাৎ মোকামে চালের বিক্রি বেড়েছে পাঁচ গুণ। আর চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় যোগান ঠিক রাখার জন্য মিল মালিকদের মাঝে ধান কেনার প্রবণতা বেড়েছে। ফলে ধানের দাম বেড়েছে প্রতি মণে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত। এর জেরে পাইকারিভাবে চালের দাম প্রতি বস্তায় ২০০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।’
অবশ্য চাল ব্যবসার সাথে জড়িতরা বলছেন, দেশে বড় ধরনের কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে চাল সংকট হবে না। দেশের মানুষের চাহিদার চেয়ে ১৯ লাখ মেট্রিক টন বেশি ধান গত আমন মৌসুমে উৎপাদন হয়েছে। আর চলতি বোরো মৌসুমে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে তো কোনো সংকট হওয়ার সম্ভাবনা নেই। করোনাভাইরাস আতঙ্কের কারণে বর্তমানে মানুষের মাঝে খাদ্যপণ্য কেনার যে প্রবণতা তৈরি হয়েছে এটা সাময়িক।
খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, নওগাঁ শহরের পার-নওগাঁ ও জেলার মহাদেবপুরের মোকামে মোটা জাতের স্বর্ণা চালের দাম ৫০ কেজির বস্তায় বেড়েছে ৩৫০ টাকা। এক সপ্তাহ আগেও প্রতি বস্তা স্বর্ণা চাল যেখানে ১ হাজার ৫৫০ টাকায় বিক্রি হতো, এখন সেই চাল বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৯০০ টাকা। চিকন জাতের জিরা চালের দাম কেজিতে বেড়েছে ৬ টাকা। এক সপ্তাহ আগে ২ হাজার ১০০ টাকা বস্তা বিক্রি হওয়া জিরা চাল এখন বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৪০০ টাকায়। এছাড়া কাটারিভোগ ও নাজিরশাইল চালের দাম কেজিতে বেড়েছে ৫ টাকা।
মের্সাস ফারিহা অটো মিলের মালিক শেখ ফরিদ উদ্দিন বলেন, ‘এক সপ্তাহ আগেও আমার মিল থেকে প্রতিদিন খুব বেশি হলে তিন গাড়ি চাল বিক্রি হতো। কিন্তু গত চার-পাঁচ দিন ধরে ছয় থেকে আট গাড়ি করে চাল বিক্রি হচ্ছে। চাহিদা অনুযায়ী যোগান দিতে পারছি না।’
নিয়ামতপুর উপজেলার ছাতড়া ও পত্নীতলা উপজেলার মধুইল বাজারে গিয়ে দেখা যায়, স্বর্ণার ধান মণ প্রতি ৮৫০-৯০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক সপ্তাহ আগে তা ছিল ৭৫০ টাকা। সরু ধান জিরা প্রতি মণ বিক্রি হচ্ছে ৯৮০-১০০০ টাকায়। সপ্তাহের ব্যবধানে দাম বেড়েছে প্রায় ১৫০ টাকা। কাটারিভোগ ধানের দামও প্রতি মণে ২০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। তবে বাজারে ধানের সরবরাহ ছিল খুব কম।
মধুইল বাজারের মেসার্স হাবিব নামে একটি প্রতিষ্ঠানের নথিতে দেখা যায়, তারা গত ১২ মার্চ জিরা চালের ধান প্রতি মণ কিনেছে ৮৫০ টাকায়। কাটারিভোগ ধান কিনেছে ১ হাজার ১৫০ টাকায়। বৃহস্পতিবার সেই জিরা ধান তাদের ৯৮০ টাকায় এবং কাটারিভোগ ১ হাজার ৩০০ টাকায় কিনতে হয়েছে।
বর্তমানে চালের দাম যে পরিমাণ বেড়েছে তা অস্বাভাবিক উল্লেখ করে জেলা চাল কল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন চকদার বলেন, ‘অন্য বছরগুলোতে এ সময়ে বাজারে ধানের সরবরাহ কম থাকায় চালের দাম একটু বাড়ার প্রবণতা ছিল। কিন্তু এতোটা দাম কখনও বাড়েনি। এ অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধি আমরাও চাই না। কিন্তু করোনাভাইরাস আতঙ্কে চাল কেনার হিড়িকের কারণে বাজারে এক ধরনের অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। মোকামে চাল বিক্রি অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে। কিছু দিন ধরে দিনে ৪০০ থেকে ৫০০ গাড়ি চাল নওগাঁ থেকে দেশের বিভিন্ন বাজারে যাচ্ছে। প্রতি দিন প্রায় ১ লাখ মেট্রিক টন চাল বিক্রি হচ্ছে। চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের উচিত সরকারি গুদামে যে মজুত আছে তা বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে বিতরণ করা।’