জীবিকার তাগিদে ২০০৮ সালে আরব আমিরাতে গিয়েছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার মোহাম্মদ মুক্তার হোসেন (৩৯)। প্রবাস জীবন ভালই কাটছিলো তার। কিন্তু ২০১৪ সালে হঠাৎ করে কর্মস্থলে বড় ধরনের দুর্ঘটনায় পড়েন তিনি। এতে ডান হাতের কব্জি হারাতে হয় তাকে।
বিজয়নগর উপজেলার ১০নং পাহাড়পুর ইউনিয়নের ভিটিদাউদপুর গ্রামে স্ত্রী, মা ও এক ভাইকে নিয়ে মুক্তার হোসেনের সংসার।
আরও পড়ুন: কৃষকদের লাভবান করতে ভর্তুকি দেয়া হচ্ছে: মন্ত্রী
আরব আমিরাতে কর্মরত কোম্পানি কোনও ধরনের সাহায্য না করায় দেশ থেকে জমি বিক্রি করে প্রবাসে চিকিৎসা করাতে হয়েছিল তাকে। অবশেষে ২০১৫ সালে কব্জি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে দেশে ফিরে আসেন তিনি।
দেশে এসে হাতের জন্য কোনও কাজকর্ম না করতে পেরে আরও অসহায় হয়ে পড়েন মুক্তার হোসেন। পরে এক হাত নিয়েই বাড়ির পাশের জমিতে কৃষি কাজে মনোযোগ দেন মুক্তার। আস্তে আস্তে এক হাতে শিখে ফেলেন কাজকর্ম করা এবং সফলও হন।
একসময় বাড়ির পাশে ছোট্ট একটি দোকানও দেন। তবে কৃষি কাজে নেমে আরেক তিক্ত অভিজ্ঞতার মুখোমুখী হতে হয় তাকে। তিন বছর ধরে কৃষি কর্মকর্তার পিছনে ঘুরেও সরকারি বীজ, গাছ ও কৃষি সহায়তা পাচ্ছেন না তিনি।
আরও পড়ুন: ঠাকুরগাঁওয়ে আমন আবাদে ব্যস্ত কৃষকরা
কথা হলে আক্ষেপ করে তিনি ইউএনবিকে বলেন, ‘ইউনিয়নের দায়িত্বে থাকা কৃষি কর্মকর্তা আশরাফুল আলমের কাছে তিন বছর ধরে বলে আসছি আমাকে যেন সরকারি বীজ, গাছ বা কিছু সহায়তার ব্যবস্থা করে দেন। কিন্তু কৃষি কর্মকর্তা আমাকে কিছুই দিচ্ছেন না।’
উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা এই ইউনিয়নের দায়িত্বে থাকা আশরাফুল আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ‘মুক্তার হোসেন আমার কাছে এসেছিলেন কিন্তু কোনও বরাদ্দ না থাকায় দিতে পারিনি। সামনে কোনও বরাদ্দ আসলে তাকে সহায়তা করা হবে।’
আরও পড়ুন: শেরপুরের গারো কৃষকদের জুমের ফসল কাটায় বিক্ষোভ সমাবেশ
বিজয়নগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাব্বির আহম্মেদ বলেন, ‘নিয়মের বাইরে কেউ সহায়তা পায় না। আমি খবর নিয়ে মুক্তার হোসেনের জন্য কিছু করা যায় কিনা দেখবো।’
বিষয়টি জেলা কৃষি অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ রবিউল হক মজুমদারের নজরে আনা হলে তিনি আশ্বস্ত করে বলেন, ‘যে এক হাতেও কৃষি কাজ করতে চায় তাকে অবশ্যই সাহায্য করা উচিত। আমি উপজেলা ও ইউনিয়নের দায়িত্বে থাকা কৃষি কর্মকর্তাদের বলে দিবো যেন মুক্তার হোসেনকে সরকারি সহায়তা করা হয়।’