ঢালিউড সুপারস্টার শাকিব খান থেকে শুরু করে তরুণ হার্টথ্রব অভিনেতা আরিফিন শুভ এবং অভিনেত্রী জয়া আহসান থেকে মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ-২০১৮ জান্নাতুল ফেরদৌস ঐশীসহ চলচ্চিত্র জগতের প্রত্যেকেই ধর্ষণসহ নারী সহিংসতায় উত্তাল বিক্ষোভে নিজেদের সমর্থন জানিয়েছেন।
তারকারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ ভয়াবহ অপরাধের বিরুদ্ধে নিজেদের প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তাদের কেউ কেউ বলছেন যে বেগমগঞ্জের ন্যাক্কারজনক ঘটনা জাতির কলঙ্কজনক অধ্যায় হয়ে থাকবে। আবার ধর্ষকদের মৃত্যুদণ্ড দাবি করছেন অনেকে।
ঢালিউড সুপারস্টার শাকিব খান তার ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে দেয়া এক পোস্টে বলেন, সবকিছুর প্রথমে নারীর পরিচয় তিনি একজন মানুষ। সমাজ এখনও অনেক ক্ষেত্রে নারীকে মানুষ হিসেবে গণ্য করতে চায় না! তারপরই একজন নারী কারও মা, কারও বোন। এ কারও মা, বোন, মানুষ সত্ত্বা নারীকে মানুষ হিসেবেই মানুষের শ্রদ্ধা করা উচিত, গণ্য করা উচিত, মান্য করা উচিত। এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি বলেন, একজন নারী একজন মা, পৃথিবীর কোনো কিছু মায়ের সঙ্গে তুলনা হয় না। যারা একজন মা আর বোনকে অন্য চোখে দেখে, ধর্ষণের মানসিকতা মনের মধ্যে লালন করে বেড়ায় তার কোনো পরিচয় হয় না। সে পুরুষ নাকি, তার চেয়ে বড় তিনি কখনোই মানুষ নন। তার একমাত্র পরিচয় সে ধর্ষক।
দেশে মহামারির চেয়েও ভয়ংকরভাবে ছড়িয়ে পড়েছে ধর্ষণের মতো জঘন্যতম অপরাধ। এর কারণ ওইসব মানুষরূপী নরপশুদের নৈতিক অবক্ষয়, মাদকের বিস্তার, ধর্ষণসংশ্লিষ্ট আইনের সীমাবদ্ধতা, বিচার প্রক্রিয়ায় প্রতিবন্ধকতা এবং বিচারের দীর্ঘসূত্রতা, বলেন তিনি।
শাকিব খান বলেন, ‘আমি সচেতন মানুষ হিসেবে আমার দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে এ ধরনের ঘৃণিত অপরাধের বিরুদ্ধে কাজ করে যাচ্ছি, ভবিষ্যতেও করে যাব। এমনকি আমার শ্যুটিং চলতি ছবি ‘নবাব এলএলবি’ সিনেমাতেও ধর্ষণের মতো জঘন্য বিষয়টিকে প্লট হিসেবে বেছে নিয়েছি।’
দল, মত, ক্ষমতা সবকিছুর ঊর্ধ্বে গিয়ে ধর্ষণকারীদের দ্রুত বিচার নিশ্চিত ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান ঢালিউডের এ অভিনেতা।
বাংলাদেশে নারীদের প্রতি সহিংসতা বেড়ে যাওয়ার প্রতিবাদ জানিয়েছেন তরুণ হার্টথ্রব অভিনেতা আরিফিন শুভ। তিনি তার ফেসবুক পেজে বলেন, ‘আমরা মেয়েদের কত কিছু শিখাই! কাপড় ঠিক করা, একা চলাফেরা না করা, সাবধানে থাকা, নিজেদের সামলে চলা, ছেলেদের সাথে না মেশা, বেশি না হাসা, বেশিক্ষণ বাইরে না থাকাসহ আরও কত কি! অথচ ছেলেদের কেউ শিখাতে পারি না ধর্ষণ না করা। আফসোস!’
বেগমগঞ্জের নৃশংসতার ভিডিও দেখার পর দুঃখ প্রকাশ করে আবেগী এক পোস্ট দিয়েছেন বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের জনপ্রিয় অভিনেত্রী জয়া আহসান। তিনি বলেন, ‘কীভাবে এ দৃশ্য আমি দেখি! ফোনে ফোনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া সেই নির্মম নিষ্ঠুর ভিডিও আমারই দেশে তৈরি, এও বিশ্বাস করতে হবে? আমারই কোনো বোনকে লাঞ্ছনায় নরকের অতলে পৌঁছে দিচ্ছে আমারই পাশের বাড়ির এক ছেলে, এও আমাকে দেখতে হবে আমারই ভাইয়ের রক্তে ভেজা লাল-সবুজের দেশে?’
ধর্ষকদের মৃত্যুদণ্ড দেয়ার দাবি জানিয়ে তিনি তার পোস্টে বলেন, ‘নিষ্পাপ শিশু, সরল আদিবাসী, বেড়াতে যাওয়া আনন্দিত স্ত্রী, ঘরের কোণে সংসারী মা সবাই হয়ে যাচ্ছে নরকের অঙ্গারে পোড়া ছবি। একের পর এক এ সর্বনাশা ঢেউ কোথায় ভাসিয়ে নিচ্ছে আমাদের? তাহলে কি মেনে নিতে হবে, ধর্ষণের অতিমারিই আমাদের গন্তব্য? না। এ পরিণতি আমরা কখনোই মেনে নেব না। এ যদি পৌরুষ হয়, তাকে আমি বলি, ছিঃ। সবাই কণ্ঠ মিলিয়ে চিৎকার করে বলি, ছিঃ। আর, তুমি এ হৃদয়ে উঠে এসো, দুঃখিনী বোনটি আমার।’
উদীয়মান অভিনেত্রী এবং মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ-২০১৮ জান্নাতুল ফেরদৌস ঐশী সম্প্রতি তার অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে একটি ভিডিও পোস্ট করেছেন। এতে তিনি ধর্ষণ সংস্কৃতির বিরুদ্ধে নিজের অবস্থান তুলে ধরেন। ভিডিওতে তিনি বলেন, ‘আমরা ধর্ষণের বিষয়ে প্রথম কথা বলছি না বা প্রথমবারের মতো সবাই প্রতিবাদ করছে না। তবে, বিবেকবান মানুষেরা এ জঘন্য অপরাধের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ ও দৃঢ় অবস্থান না নিলে কিছুই পরিবর্তন হবে না।’
প্রতিবাদ জানিয়ে জনপ্রিয় অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী বলেন, ‘লিঙ্গ তো আর একা ধর্ষণ করতে পারে না, ধর্ষণে প্রলুব্ধ করে মাথার ভেতর বাস করা অমানুষটা। মৃত্যুদণ্ড এদের জন্য যথেষ্ট নয়। প্রকাশ্যে এ অমানুষগুলোর লিঙ্গ শরীর থেকে কেটে আলাদা করে দেয়া হোক। যাতে লিঙ্গের ওপর শয়তান মাথার কোনো অধিকার না থাকে। তাহলেই এ বর্বরতা থেমে যাবে। এ কঠোর শাস্তি প্রয়োগে মানবাধিকারের কোনো মায়াকান্না আমরা শুনতে চাই না। সেই সাথে আইনের সঠিক এবং কঠিন প্রয়োগ চাই। শাস্তি হোক দৃষ্টান্তমূলক। এর বাইরে কোনো কথা নেই।’
ধর্ষণবিরোধী আন্দোলনে পিছিয়ে নেই টেলিভিশন ও চলচ্চিত্রের প্রখ্যাত পরিচালকরাও।
পরিচালক শিহাব শাহিন লেখে, ‘বেগমগঞ্জের পিশাচ, দানবগুলোর মৃত্যু চাই।’ চয়নিকা চৌধুরী বলেন, ‘শুধু বেগমগঞ্জেরই না, সব ধর্ষকের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা হোক। তাড়াতাড়ি।
একই সুরে কথা বলেছেন অভিনেতা জিয়াউল ফারুক অপূর্ব। তিনি লেখেন, ‘শুধু বেগমগঞ্জেরই না, সব ধর্ষকের শাস্তি নিশ্চিত করা হোক।’
বাংলাদেশের জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’র উপস্থাপক ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব হানিফ সংকেত তার ফেসবুক পেজের এক পোস্টে লেখেন, ‘ধর্ষণ নামক এক ঘৃণ্য সামাজিক ব্যাধি মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়েছে চারদিকে। ধর্ষণের শিকার হয়ে সামাজিকভাবে লাঞ্ছিত-বঞ্চিত হয়ে অসংখ্য নারী বেছে নিচ্ছেন আত্মহননের পথ। নারীদের ওপর যারা এ ধরনের পাশবিক আচরণ করছে তারা মানুষ নামের অমানুষ। এদের মনুষ্যত্ব নেই, আছে পশুত্ব। আর এ পশুরা আমাদের মা, বোন, স্ত্রী, কন্যাদের সম্ভ্রমহানি করছে যেখানে সেখানে।’
‘বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, অজপাড়া গাঁয়ের কোনো গৃহবধূ, এমনকি শিশুরাও এ পশুদের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে না। অপ্রতিরোধ্য গতিতে বেড়ে চলছে এদের ধর্ষণ সন্ত্রাস। আসুন সবাই মিলে এ ধর্ষকদের প্রতিরোধ করি। তুলে দেই আইনের হাতে। আর এদের ব্যাপারে দাবি একটাই, বিচারে দীর্ঘসূত্রিতার জটিল জট ভেঙে দ্রততম সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ শাস্তির নিশ্চয়তা,’ বলেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, ‘ধর্ষকদের রক্ষা নেই, সর্বোচ্চ শাস্তি চাই। সোচ্চার হয়ে বলি সবাই, বন্ধ হোক ধর্ষণ। নারী মাতা, নারী বধূ, কন্যা এবং বোন।