গাইবান্ধায় পটলের বাম্পার ফলন হয়েছে। অনুকূল আবহাওয়ার কারণেই ফলন ভালো হয়েছে। বাজারে দরও ভালো পাওয়া যাচ্ছে। এতে পটল চাষে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে কৃষক।
জেলা সদর, সুন্দরগঞ্জ, সাদুল্লাপুর, পলাশবাড়ী, গোবিন্দগঞ্জ, সাঘাটাসহ সাত উপজেলার অনেক জমিতেই এ বছর পটল চাষ হয়েছে। কার্তিক মাসে জমিতে মাচা করে লাগানো পটলের সারিসারি খেত দেখলে কৃষকসহ সকলের মন ভরে ওঠে। মাচায় মাচায় ঝুলছে কৃষকের স্বপ্ন।
গাইবান্ধা ঘাগোয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আমিনুজ্জামান রিংকু বলেন, রাস্তার দু’পাশে যতো দূর চোখ যায় পটলসহ সাথী ফসলের খেত । শুধু পটল নয় একই মাচায় ঝুলছে চিচিংঙ্গা, ধুন্দল, করলাসহ নানা জাতের সাথী ফসল। গাইবান্ধার যমুনা নদীর তীরবর্তী এলাকা গিদারী , ঘাগোয়া , মালিবাড়ি, লক্ষ্মীপুর খোলাহাটি , রুপারবাজার জুড়ে, সাদুল্লাপুরের ধাপেরহাট , রসুলপুর , জামালপুর। এসব এলাকায় হাট বসে কয়েক জায়গায়। হাট থেকে পাইকাররা ট্রাক ভর্তি করে কিনে নিয়ে যান।
আরও পড়ুন: গরমে ঠাকুরগাঁওয়ে কদর বেড়েছে তালশাঁসের
পটল চাষী আলতাফ হোসেন জানান, মাচায় যে পটল হয়েছে। ৪৩ হাজার টাকার পটল বিক্রি করেছি তারপরেও আরও অন্তত ৬০ হাজার টাকার পটল বিক্রি করতে পারবো । তাতে খরচ বাদ দিয়ে আমার লাভ হবে অন্তত ৮৫ হাজার টাকা ।
গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রেজা ই মাহমুদ জানান, গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার কামারদহ, কোচাশহর, গুমানীগঞ্জ , তালুক কানুপুর, হরিরামপুর, দরবস্ত , শালামারা ইউনিয়নের জমিতে জমিতে সবুজের সমারোহ। তিনি বলেন, উপজেলা সদরে হাট বসে পটলের। এই পটল কেনার জন্য দূরদুরান্ত থেকে পাইকাররা আসেন। তারপর বস্তা ভরে ট্রাকে করে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন হাট বাজারে বিক্রি হয়।
কৃষি কর্মকর্তা বলেন, চৈত্র, বৈশাখ মাস থেকে পটল উঠানো শুরু হয়। অনুকূল আবহওয়ায় এবছর পটলের ফলন ভালো হওয়ার পাশাপাশি বাজার দর ভালো পাওয়ায় লাভবান হয়েছেন চাষীরা। প্রতি কেজি খুচরা বিক্রি হয় ৩০ থেকে ৪০ টাকা।
আরও পড়ুন: চলতি মৌসুমে ফরিদপুরে সাড়ে ৫ লাখ মেট্রিক টন পেঁয়াজ উৎপাদন
পটল চাষী মোহাম্মেল হোসেন জানান, তিনি এবার তার ৫ বিঘা জমিতে পটল চাষ করেছেন। পটল চাষে ঝামেলামুক্ত এবং অল্প খরচেই হয় বলে এ আবাদ বেশী লাভজনক। পটল মানেই নগদ টাকার আবাদ। লাভের অংশ বেশি হওয়ায় প্রতিবছরই কৃষকদের মাঝে পটল চাষের আগ্রহ বাড়ছে। আতিমাত্রায় বৃষ্টি বা বন্যা না হওয়ায় অপেক্ষাকৃত নিচু জমিতে পটল আবাদ হয়েছে। এক বিঘার জমি থেকে সপ্তাহে ৮ থেকে ১০ মণ পর্যন্ত পটলের উৎপাদন হচ্ছে। এছাড়াও পটলের মধ্য আদা, কাঁচা মরিচ, হলুদ, আদা, মুখী কচু আবাদ করছেন। বিক্রি করেও নিজের চলে যায়।
ব্যাপারী আহম্মেদ আলী এসেছেন ঢাকা থেকে পটল কিনতে। হাটবারে পটল কিনে রাতেই নিয়ে যাবেন। তিনি বলেন ,উৎপাদনের শুরুতেই বাজারে প্রতিমণ পটল এক হাজার থেকে ১২শ’ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এখনও তা এক হাজার থেকে দেড় হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আমরা কম লাভে আড়তে বিক্রি করি। কাঁচামালের ব্যবসা ভালো মন্দ দুই আছে। সে কারণে প্রতিদিন কিনি প্রতিদিন বিক্রি করি।
গাইবান্ধা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক বেলাল হোসেন জানান, এবার জেলায় ৪শ’ ৮১ হেক্টর পটলের চাষ হয়েছে। হেক্টর প্রতি ফলন ২০ মেট্রিক টন। সরকার এ সবজির ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতে পারলে এ চাষ আগামীতে আরও বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করছেন চাষীরা।
আরও পড়ুন: হালদায় আশানুরূপ মাছের ডিম মিলছে না