বাংলা ভাষাকে মাতৃভাষা হিসাবে প্রতিষ্ঠার জন্য ১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারি আটজন বাঙালির আত্মত্যাগের স্মরণে প্রতিবছর মাসব্যাপী এই বইমেলার আয়োজন করা হয়।
এ বছর মেলায় আরও বেশি প্রকাশনা, স্থান বড় করাসহ বই প্রেমিদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে ছাত্ররা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মিছিল বের করে। সে সময় পুলিশের গুলিতে সালাম, বরকত, রফিক, জব্বারসহ কয়েকজন সাহসী শিক্ষার্থীকে হত্যা করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে মেলার প্রথম দিন অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করবেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারও বিতরণ করা হবে।
বইমেলার স্থান পরিদর্শন করে বাংলা একাডেমি চত্বর এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মেলার বর্ধিত অংশে স্টল প্রস্তুত ও অবকাঠামো নির্মাণে শ্রমিকদের ব্যস্ত থাকতে দেখা গেছে।
যে সকল প্রকাশনা সংস্থাগুলো বরাদ্দ পেয়েছে তারা ইতোমধ্যে স্টল নির্মাণের কাজ শুরু করেছেন। অন্যদিকে, রাজধানীর বাংলা বাজার এবং পল্টন এলাকার ছাপাখানায় এখন নতুন বই মুদ্রণ ও বাঁধাইয়ের শেষ মুহূর্তের কাজের ব্যস্ততা দেখা গেছে।
বাংলা একাডেমির পরিচালক ও মেলা আয়োজক কমিটির সদস্য সচিব জালাল আহমেদ ইউএনবিকে বলেন, মেলা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য আমরা যথেষ্ট প্রস্তুত রয়েছি।’
‘মেলার সকল আনুষ্ঠানিকতা আমরা সফলভাবে শেষ করেছি। এবার আগে স্টল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে যাতে প্রকাশকরা তাদের স্টলগুলো সঠিকভাবে সময়মত নির্মাণ করতে পারে। স্টলের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য মেলার স্থানও বাড়ানো হয়েছে,’ যোগ করেন তিনি।
জালাল বলেন, এবারের মেলা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্য উৎসর্গ করা হবে এবং মেলায় তার জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে বিভিন্নভাবে তার জীবন ও কর্মের প্রদর্শনী করা হবে।
তিনি আরও বলেন, ১৩ জানুয়ারি পর্যন্ত মোট ৮৩০টি স্টল ৫৫০ জন প্রকাশকের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
এ বছর মেলার জন্য নির্ধারিত স্থান আট লক্ষ ৫০ হাজার বর্গফুট বৃদ্ধি করা হয়েছে, যা আগের বছরের চেয়ে তিন লক্ষ বর্গফুট বেশি। এবছর বাংলা একাডেমি সহ ৩৪ টি প্রকাশনা সংস্থাকে প্যাভিলিয়ন দেয়া হয়েছে। গত বছর এ সংখ্যা ছিল ২৪ টি।
বাংলা একাডেমী চত্বরে স্থান সংকুলান না হওয়ায় ২০১৩ সাল থেকে বইমেলা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সম্প্রসারণ করা হয়।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভারতীয় কবি শঙ্খ ঘোষ এবং মিশরীয় লেখক ও কবি মহসিন আল আরিশি সম্মানিত অতিথি হিসাবে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।
বইমেলা শুরু হওয়ার আগে লেখক এবং প্রকাশকরাও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের বই প্রচারে ব্যস্ত রয়েছেন।
আরও পড়ুন: বইমেলায় দুই উপন্যাস নিয়ে আসছেন কথাসাহিত্যিক জুয়েল
বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবিবুল্লাহ সিরাজী ইউএনবিকে বলেন, বাংলা একাডেমি এক মাসের জন্য মেলার একটি সুন্দর অনুষ্ঠান উপস্থাপনের জন্য প্রস্তুত রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এবারের বইমেলার মূল প্রতিপাদ্য বিষয় ‘বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী’ নির্ধারণ করা হয়েছে।
আনুষ্ঠানিকভাবে ১৯৭২ সালে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে মেলা শুরু হয়েছিল, তবে বাংলা একাডেমি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিবছর বইমেলার আয়োজন করার জন্য ১৯৭৮ সালে দায়িত্ব গ্রহণ করে। পরে এটি নামকরণ করা হয় ‘অমর একুশে গ্রন্থ মেলা’ এবং ১৯৮৪ সালে সাড়ম্বরে বর্তমানের অমর একুশে গ্রন্থমেলার সূচনা হয়।
রবি থেকে বৃহস্পতিবার প্রতিদিন বিকাল ৩টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত বইমেলা সকলের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্র ও শনিবার বেলা ১১টা থেকে রাত সাড়ে ৮ টা পর্যন্ত খোলা থাকবে।এছাড়া ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের দিন সকাল ৮টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকবে বলে আয়োজকরা জানিয়েছেন।