মাগুরায় নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বাড়ছে অস্বাভাবিক হারে। জিনিসপত্রের মূল্যের ঊর্ধ্বগতি দেখে অনেককে বাজার না করেই ফিরতে হচ্ছে ঘরে। বিশেষ করে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তদের দুর্ভোগ দিনকে দিন বেড়েই চলেছে। অন্যদিকে বিক্রেতাদের আক্ষেপ, আগের মতো বেচাকেনা হচ্ছে না।
সরেজমিনে দেখা যায়, জেলা শহর থেকে শুরু করে গ্রাম-গঞ্জের প্রতিটি হাট-বাজারে শাক-সবজিসহ সব কাঁচা বাজারের দাম বেড়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন ক্রেতারা। অনেকেই বাজারে এসেও কাঁচা বাজার না নিয়ে চলে যাচ্ছেন। কেউ কেউ বাধ্য হয়ে বেশি দামেই কিনছেন।
মাগুরার বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, গত কয়েকদিন ধরে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে কাঁচা মরিচ, ডিম ও সবজির দাম।
এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচের দাম বেড়ে হয়েছে ৫০০ টাকা।
জেলার বিভিন্ন কাঁচা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, কাঁচা মরিচের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকায়।
গত দুই সপ্তাহ আগেও কাঁচা মরিচের কেজি ছিল ১০০ থেকে ১২০ টাকা, দুই সপ্তাহের ব্যবধানে কেজি প্রতি প্রায় ৪০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা বাড়াকে অস্বাভাবিক বলছেন ক্রেতারা।
আরও পড়ুন: ২২ দিনের শিকার নিষেধাজ্ঞায় চাঁদপুরে রেকর্ড দামে ইলিশ বিক্রি, হতাশ হয়ে ফিরছেন ক্রেতারা
পাশাপাশি প্রতি কেজি আলু ৬০ টাকা, পটল প্রতি কেজি ৮০ টাকা, কচু প্রতি কেজি ৮০ টাকা, করলা প্রতি কেজি ৮০ টাকা, প্রতি কেজি ঢেঁড়স ৮০ টাকা, বেগুন প্রতি কেজি ১২০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া প্রতি কেজি ৮০ টাকা, মাঝারি লাউ প্রতিটি ১০০ টাকা, ফুলকপি প্রতি কেজি ১২০ টাকা, বাঁধাকপি প্রতি কেজি ১২০ টাকা, পেঁয়াজ ১২০, শসা ৮০ টাকা ও প্রতি কেজি মুলা ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়াও অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে ডিমের দাম।
প্রথমবারের মতো ফার্মের মুরগির এক ডজন ডিমের দাম রেকর্ড মূল্য ১৮০ টাকায় দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ প্রতি হালি ডিমের দাম ৬০ টাকা, যা সপ্তাহখানেক আগে ছিল ৫০ টাকা থেকে ৫৫ টাকা।
ব্যবসায়ীরা জানান, বাজারে ফার্মের মুরগির ডিমের ডজন বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকায়। আর মুদি দোকানে প্রতি পিস ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৫ টাকা দরে। যেখানে মাত্র এক সপ্তাহ আগে ডিমের ডজন ছিল ১৫০ টাকা। যার প্রতি হালি বিক্রি হতো ৫০ টাকায়।
আরও পড়ুন: সিরাজগঞ্জে বেশি দামে ডিম বিক্রি করায় ৪০ হাজার টাকা জরিমানা
ডিমের দাম বাড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ব্যবসায়ীরা বলেন, গত কয়েকদিনে মুরগির খাবারের দাম বেড়েছে। পাইকারি বাজারে ডিমের দাম বেশি তাই স্বাভাবিকভাবেই খুচরা বাজারেও দাম বেশি।
গরু, ছাগল এবং দেশি ও ব্রয়লার মুরগির মাংসের দাম না বাড়লে মাছের দাম ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। সরেজমিনে দেখা যায়, বাজারগুলোতে ছোট মাছ নেই বললেই চলে। যেগুলো আছে সেগুলো সাধারণ ক্রেতাদের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। আবার বড় মাছের দামও অনেক বেশি। ইলিশের ভরা মৌসুমেও দাম ধরাছোঁয়ার বাইরে।
এছাড়া বেড়েছে সব ধরনের চাল ও তেলের দাম।
তবে হঠাৎ নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় বাজারে বিক্রিও কমে গিয়েছে।
আরও পড়ুন: দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকার বিশেষ নজর দিয়েছে: প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উপসচিব
ক্রেতারা বলছেন, সবকিছুর দাম বাড়লেও তাদের উপার্জন বাড়েনি। বাজারে নিত্যপণ্যের দাম এত বেশি যে বাজারে যেতেই ভয় হয়। বাজার মনিটরিং না থাকার কারণে হু-হু করে বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম।
বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে দ্রুত বাজার মনিটরিংয়ের দাবি জানান তারা।
এ ব্যাপারে জেলার বাজার নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা সামুনুল ইসলাম জানান, অধিক পরিমাণ বৃষ্টি হওয়ায় ও পাইকারি দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে প্রতিদিনই কাঁচা মরিচ ও সবজির দাম বাড়ছে। এভাবে চলতে থাকলে দাম আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়া পরিবহন খরচও বেড়ে যাওয়ায় নিরুপায় হয়েই দাম বাড়াচ্ছে বিক্রেতারা।
আরও পড়ুন: মূল্যস্ফীতি কমেছে ১ শতাংশ: সালেহউদ্দিন