রাজস্ব আদায়ের এ কর্তৃপক্ষ সারা দেশে নতুন যোগ্য করদাতাদের করের আওতায় আনার জন্য ১২০টির মতো দল গঠন করেছে বলে জানতে পেরেছে ইউএনবি। এ দলের সদস্যরা যোগ্য করদাতাদের চিহ্নিত এবং তাদের কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) বরাদ্দ দিতে বাড়ি এবং অফিস পরিদর্শন করবেন।
সূত্র মতে, এনবিআরের পক্ষ থেকে সব কর কমিশনারকে যোগ্য ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে করের আওতায় আনার জন্য এবং কর পরিশোধ নিয়ে যে ভীতি রয়েছে তা দূর করতে উদ্যোগ নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রতিটি টিআইএন নম্বরধারীর জন্য আয়কর রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করা এবং অচল টিআইএনগুলো সচল করতে কমিশনারদের নির্দেশ দিয়েছে এনবিআর।
এনবিআরের আয়কর শাখা ইতোমধ্যে এ বিষয়ে মাঠ পর্যায়ের কার্যলয়গুলোকে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিয়েছে। মাঠ পর্যায়ের কার্যালয়গুলোকে বিদ্যমান কর জরিপের দলগুলো পুনর্গঠন এবং চলতি মাস থেকে জরিপ শুরু করার উপদেশ দেয়া হয়েছে।
এনবিআর সূত্র জানিয়েছে, সারা দেশে প্রতিটি কর অঞ্চলে ১০ সদস্যের চারটি করে জরিপ দল থাকবে। এনবিআরের কর্মকর্তা ছাড়াও জরিপ দলগুলোকে সহায়তা করার জন্য জেলা প্রশাসন, পুলিশ, আনসার এবং কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুজন শিক্ষার্থী (একজন নারী) প্রতিনিধি থাকবেন।
অভ্যন্তরীণ জরিপের অংশ হিসেবে, মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা ইতোমধ্যে সিটি করপোরেশন, রাজউক ও সাব-রেজিস্ট্রার কার্যালয় থেকে সম্ভাব্য করদাতাদের তথ্য সংগ্রহ করেছেন। এ ‘সেকেন্ডারি তথ্য’ কোনো প্রতিষ্ঠানে ইতোমধ্যে নিয়োজিত ব্যক্তি সম্পর্কিত তথ্য তুলে ধরে।
সেই সাথে এনবিআর উপজেলা পর্যায়ে সম্ভাব্য করদাতাদের তথ্য সংগ্রহ করতে সেকেন্ডারি তথ্য বা অভ্যন্তরীণ জরিপের সাহায্য নিচ্ছে।
এনবিআরের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ইউএনবিকে বলেন, ‘ধরুন যদি আমাদের কাছে ‘এক্স’ সংস্থার একটি ফাইল থাকে এবং প্রতিষ্ঠানটিতে বেতনভুক্ত ৪৫০ কর্মকর্তা থাকেন তবে আমরা সব কর্মীর নাম ও তাদের টিআইএন নম্বর জানতে চাইতে পারি। এভাবে আমরা যোগ্য করদাতাদের নাম খুঁজে বের করতে পারি এবং তাদের করের আওতায় আনতে পারি। অভ্যন্তরীণ জরিপ বলতে একে বুঝানো হয়।’
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এনবিআর সিটি করপোরেশন ও পৌরসভা থেকে দেয়া বাণিজ্যিক লাইসেন্স সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহ করছে। পরে তাদের করের আওতায় আনতে ও রাজস্ব আদায়ের জন্য তাদের নামে টিআইএন জারি করা হবে।
সেই সাথে, এনবিআর বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিআইডিএ) কাছ থেকে বিদেশিদের তথ্য, বিআরটিএ’র কাছ থেকে যানবাহনের মালিক, সাব-রেজিস্ট্রি অফিস থেকে জমির ক্রেতা ও বিক্রেতাদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করছে।
জাতীয় আবাসন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকেও সম্পত্তির মালিকদের তথ্য নেয়া হচ্ছে বলে জানান এনবিআরের এ কর্মকর্তা।
তিনি বলেন, ‘এখনও করের আওতার বাইরে আছেন এমন সব উপযুক্ত করদাতাদের শনাক্ত করতে এনবিআরের এসব প্রচেষ্টা সহায়তা করবে। আমরা আশা করি এভাবে আমরা সমাজের সব সম্পদ্শালীদের করের আওতায় আনতে সক্ষম হব।’
এনবিআরের আরেক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, ঘরে ঘরে জরিপ চলাকালীন মাঠ কর্মকর্তাদের সামাজিক দূরত্বসহ কোভিড-সম্পর্কিত স্বাস্থ্য সুরক্ষার নির্দেশনা মেনে চলতে বলা হয়েছে। মহামারিজনিত কারণে গত মার্চের শেষ সপ্তাহ থেকে স্থবির হয়ে পরায় অভ্যন্তরীণ জরিপে এনবিআর বেশি জোর দেবে। কোভিডের কারণে ঘরে ঘরে জরিপ স্থগিত করা হয়েছিল।
চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে মোট রাজস্ব সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকা যেখানে এনবিআর থেকে আসবে প্রায় ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। নন-এনবিআর উৎস থেকে আসা রাজস্ব ধরা হয়েছে ১৫ হাজার কোটি টাকা এবং করবিহীন রাজস্ব ধরা হয়েছে ৩৩ হাজার কোটি টাকা।
এনবিআরের নির্ধারিত আয়ের মধ্যে ১ লাখ ৩ হাজার ৯৪৫ কোটি টাকা আসবে আয়, মুনাফা এবং মূলধন কর থেকে, এক লাখ ২৫ হাজার ১৬২ কোটি টাকা আসবে ভ্যাট থেকে, সম্পূরক কর থেকে আসবে ৫৭ হাজার ৮১৫ কোটি টাকা, আমদানি শুল্ক থেকে আসবে ৩৭ হাজার ৮০৭ কোটি টাকা, রপ্তানি শুল্ক থেকে আসবে ৫৫ কোটি টাকা, আবগারি শুল্ক থেকে আসবে তিন হাজার ৬৮৬ কোটি টাকা এবং অন্যান্য কর থেকে আসবে ১ হাজার ৫৩০ কোটি টাকা।