জেলার প্রায় প্রতিটি খামারেই দেশি জাতের ছোট ও মাঝারি সাইজের গরু লালন পালন করা হয়েছে। তবে গত বছরে বেশিরভাগ খামার মালিক লোকসানে পড়ায় এবার গরুর সংখ্যা কিছুটা কমেছে।
জেলা প্রাণী সম্পদ অফিস সূত্র জানিয়েছে, গত বছর অনেক খামার মালিকদের গরু বিক্রি করে লোকসান হয়েছে। এ কারণে এবার জেলায় গরুর সংখ্যা কমেছে। গত বছর জেলায় গরুর সংখ্যা ছিল প্রায় ৭০ হাজার। এবার কমে ৬৫ হাজারে দাঁড়িয়েছে। তবে গরু ও ছাগল মিলে ১ লাখ ৩৩ হাজারের বেশি এবার বাজারে উঠবে। গত বছর সব মিলিয়ে ১ লাখ ৪৫ হাজার ছিল।
খামার মালিকরা জানান, তাদের খামারে ৭০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকার গরু রয়েছে। আবার ৩৯ লাখ টাকারও গরু আছে।
সরেজমিনে কুষ্টিয়া সদর উপজেলার দহকুলা গ্রামে মোল্লা কৃষি ফার্মে গিয়ে দেখা যায়, খামারে ১০৬টি গরু আছে। ১০ জন শ্রমিক এখানে গরু পরিচর্যা করছেন। এসব দেশি জাতের গরু স্থানীয় আলামপুর বাজার থেকে ২ থেকে ৩ মাস আগে কেনা হয়েছে।
খামার মালিক সেলিম হোসেন বলেন, দুই বন্ধু মিলে দেড় বছর আগে খামারটি করেছি। এক বন্ধু সৌদি আরব থাকে। তিনিও সৌদি থেকে দেশে এসে আর যাননি। গরুর ফার্ম করেছেন।
তিনি বলেন, গত বছর ১০০টি দেশি গরু ঢাকার বাজারে নিয়ে গিয়েছিলাম। প্রথম দিকে প্রতিটি গরুতে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা করে লাভ হয়েছিল। পরের দিকে লোকসান হয়। এবছর ১০৬টি গরু আছে। কয়েকটি বিক্রি করেছি। স্থানীয় বাজারেই এবার বিক্রি করার চেষ্টা করছি। এখানে সব বিক্রি না হলে ঢাকায় নিয়ে যাব। ছোট ও মাঝারি সাইজের প্রতিটি গরু ৭০ হাজার থেকে ১ লাখ ২০ হাজারের মধ্যে বিক্রি হবে বলে আশা করছি।
তিনি আরও বলেন, গোখাদ্যের দাম বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। প্রতিটি গরুর জন্য দিনে ১৬৫ টাকার খাদ্য লাগে। এতে খরচ বাড়ছে। তবে গত বছরের লোকসান কাটিয়ে এবার লাভ হবে বলে আশা করছি।
একই গ্রামের শফির ৪টি গরু আছে। গত বছর কোরবানি ঈদের মাস খানেক পর ৪টি গরু কেনা হয়। নিম্নবিত্ত পরিবারের এই কৃষক গরু লালন পালন করে সংসারের যাবতীয় খরচ মেটান। এ বছর ঢাকার বাজারে তার ৪টি গরু বিক্রি করে ৬ লাখ টাকার বেশি পাওয়ার আশা করছেন তিনি।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গোখাদ্যের দাম অনেক বেড়ে গেছে। ঈদকে সামনে রেখে ব্যবসায়ীরা খাদ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। ১ হাজার ৫০ টাকার ভূষি বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৪০০ টাকায়। গমের ছাল বিক্রি হচ্ছে প্রায় ১ হাজার ২০০ টাকায়। আগের তুলনায় যা ১০০ থেকে ২০০ টাকা বেশি।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সিদ্দীকুর রহমান বলেন, গতবারের তুলনায় গরুর সংখ্যা কিছুটা কমেছে। খামারিদের গরু পালন ও বর্ষায় যাতে রোগ না হয় সেজন্য নানা পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। আর গরু মোটাতাজা করতে গিয়ে যাতে অবৈধ পন্থা অবলম্বন না করে সেদিকে লক্ষ্য রাখা হচ্ছে। আমাদের মাঠ কর্মীরা মনিটরিং বাড়িয়েছে।
জেলা প্রশাসক মো. আসলাম হোসেন বলেন, কুষ্টিয়ার গরুর আলাদা চাহিদা রয়েছে ঢাকা ও চট্টগ্রামের বাজারে। প্রচুর গরু খামারিদের খামার আছে। তাই জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে খামারিদের সহযোগিতা দেয়া হচ্ছে। কেউ যদি অসাধু পন্থায় গরু মোটা তাজা করার চেষ্টা করেন এমন প্রমাণ পাওয়া যায় তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।