এক সাক্ষাৎকারে তিনি ইউএনবিকে বলেন, ‘অস্ট্রেলিয়া এবং বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার এক শক্তিশালী ব্যবসায়িক খাতের ওপর নির্ভর করবে।’
এর আগে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও কাতারে রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করা এ হাইকমিশনার বলেন, অর্থনীতির উন্নয়ন ও সম্প্রসারণে আরও বেশি প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) আকর্ষণ করা বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হবে।
বাংলাদেশের কোনো গণমাধ্যমের সাথে নিজের প্রথম সাক্ষাৎকারে জেরেমি ব্রুয়ার বলেন, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) এবং ই- কমার্সসহ অস্ট্রেলিয়ার ব্যবসায়ীরা অন্য যেসব খাতে বিনিয়োগ করতে পারে সেগুলো চিহ্নিত করতে একসাথে কাজ করছে অস্ট্রেলিয়া এবং বাংলাদেশ।
এর বাইরেও কৃষি-ব্যবসা, শিক্ষা ও খনি অনুসন্ধানেও সুযোগ থাকতে পারে বলে জানান তিনি।
‘মহামারিজনিত সংকট থেকে উত্তোরণে উভয় দেশই এখন বিপুল চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। আমাদের এ দুই দেশের মধ্যে যাতে ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা, সংস্কৃতি, আঞ্চলিক ও বহুপাক্ষিক সম্পর্ক এবং টেকসই উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকে সেটি আমি নিশ্চিত করতে চাই,’ বলেন হাইকমিশনার।
এক প্রশ্নের জবাবে অস্ট্রেলিয়ান হাইকমিশনার বলেন, কোভিড-১৯ মহামারি সব দেশেই ব্যাপক ক্ষতিকর প্রভাব ফেলেছে। তবে অস্ট্রেলিয়া এবং বাংলাদেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় এবং দুই দেশের জনগণের মধ্যে পারস্পারিক সম্পর্ক দৃঢ় থাকবে।
করোনা মহামারির সম্পূর্ণ প্রভাব বুঝতে সময় লাগবে বলে মনে করেন অস্ট্রেলিয়ার এ দূত।
এছাড়া করোনা সংকট থেকে সৃষ্ট সুযোগগুলো পুরোপুরি বুঝতেও সময় লাগবে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, উদ্ভাবন ও সহযোগিতার মাধ্যমে অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশের সাথে তাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও দৃঢ় করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে।
দুই দেশের মধ্যকার উষ্ণ এবং পারস্পরিক সহযোগিতামূলক সম্পর্কের কথা তুলে ধরে ব্রুয়ার বলেন, ‘আমরা ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা, সংস্কৃতিসহ বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়নে অংশীদার থাকব।’
উন্নয়ন অংশীদারিত্ব:
অস্ট্রেলিয়া জানিয়েছে, করোনা মহামারিসহ বাংলাদেশকে যেকোনো সংকটে সহায়তা করতে তারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
হাইকমিশনার বলেন, ‘আমরা আমাদের বিশ্বস্ত অংশীদার ডব্লিউএফপি, ইউএনডিপি এবং ব্র্যাকের মাধ্যমে তাৎক্ষণিক সহায়তা সরবরাহ করেছি।’
কোভিড-১৯ সংকটে অবদান এবং উন্নয়নের ক্ষেত্রে সহযোগিতা অব্যাহত রাখতে অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেরিস পেইন সম্প্রতি দেশটির নতুন উন্নয়ন কৌশল ‘পার্টনারশিপস ফর রিকভারি’ ঘোষণা করেছেন বলেও জানান হাইকমিশনার ব্রুয়ার।
অস্ট্রেলিয়ার দূত বলেন, স্বাস্থ্য সুরক্ষা, স্থিতিশীলতা এবং অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের ক্ষেত্রে উন্নয়ন সহায়তা অব্যাহত রাখতে অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশের সাথে কাজ করবে, বিশেষ করে নারী ও মেয়েদের সুরক্ষার ওপর জোর দিয়ে।
আরএমজি এবং বিশ্বব্যাপী খ্যাতি:
হাইকমিশনার ব্রুয়ার বলেন, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক (আরএমজি) খাত গত এক দশকে বিশ্বজুড়ে ব্যাপক খ্যাতি অর্জন করলেও, কোভিড-১৯ মহামারিতে তা বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর সাথে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বজায় রাখাসহ তাদের পুনরুদ্ধারের জন্য সহায়তা করার লক্ষ্যে অস্ট্রেলিয়া নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে বলেও জানান তিনি।
‘অস্ট্রেলিয়ার কিছু সংস্থা বাংলাদেশে তাদের সরবরাহকারীদের সাথে পারস্পরিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে ইতিবাচকভাবে কাজ করেছে বলে আমরা বিশ্বাস করি,’ যোগ করেন ব্রুয়ার।
বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ:
অস্ট্রেলিয়ান হাইকমিশনার হিসেবে নিজের পদটি বাংলাদেশের ইতিহাস এবং অস্ট্রেলিয়া ও বাংলাদেশের সম্পর্কের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলকের সাথে মিলে যায় উল্লেখ করে আনন্দ প্রকাশ করেন হাইকমিশনার জেরেমি ব্রুয়ার।
‘অবশ্যই, এ বছর আমরা বাংলাদেশের জাতির পিতা (বঙ্গবন্ধু) শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ উদযাপন করছি। পরের বছর বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০তম বার্ষিকী এবং ২০২২ সালে অস্ট্রেলিয়া ও বাংলাদেশের মধ্যকার কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্ণ হবে,’ যোগ করেন তিনি।
মানবিক সহায়তা:
যেকোনো মানবিক সংকটে অস্ট্রেলিয়া ও বাংলাদেশের মধ্যে অংশীদারিত্বের জন্য তিনি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলে জানান নবনিযুক্ত অস্ট্রেলিয়ান হাইকমিশনার।
কক্সবাজারে বাংলাদেশের স্থানীয় সম্প্রদায় এবং রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সহায়তার জন্য অস্ট্রেলিয়া ২০১৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১৯০ মিলিয়ন অস্ট্রেলিয়ান ডলার সরবরাহ করেছে।
ব্রুয়ার বলেন, ‘কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাবের পর আমরা আমাদের বিদ্যমান মানবিক সহয়তার হার বাড়িয়েছি এবং মহামারি পরিস্থিতি মোকাবিলায় অতিরিক্ত তহবিল সরবরাহ করেছি।’
‘আমরা নারী এবং মেয়েদের সুরক্ষার জন্যও প্রচেষ্টাও বাড়াচ্ছি যারা করোনাভাইরাসের অতিরিক্ত ঝুঁকিতে রয়েছেন,’ যোগ করেন তিনি।
মানবাধিকার:
মানবাধিকারের প্রতি অস্ট্রেলিয়া গভীরভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ উল্লেখ করে ব্রুয়ার বলেন, ‘আমরা ১৯৪৮ সালে মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্রের মূল স্বাক্ষরকারী ছিলাম।’
তিনি বলেন, বাংলাদেশসহ বিশ্বের অন্য দেশগুলোর সাথে উন্নয়ন সহায়তাসহ এবং মানবিক সহায়তার মাধ্যমে মানবাধিকারকে এগিয়ে নিয়ে যেতে দ্বিপক্ষীয়ভাবে কাজ করছে অস্ট্রেলিয়া।
অস্ট্রেলিয়া একটি শক্তিশালী বহুপক্ষীয় মানবাধিকার ব্যবস্থায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলে জানান এ রাষ্ট্রদূত।
আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী:
হাইকমিশনার বলেন, অস্ট্রেলিয়ার সীমান্ত পুনরায় খুলে দেয়ার পর তারা আবারও নিরাপদে এবং উপভোগ্য পরিবেশে তাদের বিশ্বমানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের স্বাগত জানাতে প্রস্তুত রয়েছেন।
গড়ে প্রতি বছর প্রায় ছয় থেকে সাত হাজার বাংলাদেশি শিক্ষার্থী অস্ট্রেলিয়ায় পাড়ি জমান।
অস্ট্রেলিয়ার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং প্রশিক্ষণকেন্দ্রগুলো থেকে আরও অনেক বাংলাদেশি শিক্ষার্থী এবং তরুণ পেশাদারদের উপকৃত হওয়ার সুযোগ রয়েছে বলে জানান বাংলাদেশে নিযুক্ত নতুন অস্ট্রেলিয়ান হাইকমিশনার।
সুন্দর বাংলাদেশ:
বাংলাদেশে আসার পর থেকে এ দেশের আকর্ষণীয় ইতিহাস ঐতিহ্য তার ওপর গভীর প্রভাব ফেলেছে বলে জানান হাইকমিশনার।
তিনি বলেন, ‘আশা করি, আমি এ সুন্দর দেশ এবং এর সমৃদ্ধ ইতিহাস ও সংস্কৃতি সম্পর্কে আরও বেশি জানতে পারব এবং এ দেশের সর্বস্তরের মানুষের সাথে সাক্ষাৎ করতে সক্ষম হব।’
অস্ট্রেলিয়া সম্পর্কে আরও বেশি জানতে বাংলাদেশিদের সহায়তা করার প্রত্যাশাও ব্যক্ত করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত অস্ট্রেলিয়ার হাইকমিশনার জেরেমি ব্রুয়ার।