স্থানীয়দের অভিযোগ, এই এলাকায় কোনো বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নেই এবং এ কারণেই যেখানে সেখানে ফেলা হয় বাড়িঘর ও বিভিন্ন কারখানার বর্জ্য পদার্থ। তাই পরিবেশ দূষিত হচ্ছে এবং ডেমরায় মশা-মাছির উপদ্রব ব্যাপকভাবে বেড়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে যথাযথ বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে রাজধানীর এই এলাকাকে পরিষ্কার রাখার জন্য সরকারকে যথাযথ উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন স্থানীয়রা। সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে বাসযোগ্য শহর তৈরির জন্য অপরিকল্পিতভাবে ভবন এবং কারখানার নির্মাণ বন্ধে পদক্ষেপ নেয়ারও আহ্বান জানান তারা।
তরিকুল হাসান নামে ডেমরার এক বাসিন্দা জানান, এই এলাকার যেখানে সেখানে বিশেষত রাস্তার পাশে বর্জ্য ফেলার কারণে বাসিন্দারা বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন।
তিনি বলেন, ‘ডেমরা এলাকাটি বিভিন্নভাবে দূষিত হচ্ছে এবং কোনো ডাম্পিং স্টেশন না থাকায় যত্রতত্র ফেলা হচ্ছে বাসাবাড়ি ও কলকারখানার বর্জ্য। দ্রুত সময়ের মধ্যে এই এলাকায় একটি বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্ল্যান্ট স্থাপন করা উচিত, তা না হলে এই জায়গা বসবাস অযোগ্য হয়ে উঠবে।’
তরিকুল আরও বলেন, ‘বর্জ্য পদার্থের দুর্গন্ধ এবং মশা-মাছির উপদ্রবে এই এলাকার বাসিন্দারা রাতে ঠিকমতো ঘুমাতেও পারেন না। এছাড়া প্রতিনিয়তই বিভিন্ন কারখানা অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠছে। এতে স্থানীয়দের ভোগান্তি আরও বেড়েছে। ডেমরাকে একটি বাসযোগ্য স্থান করার জন্য সরকারকে এ বিষয়ে চিন্তা করতে হবে।’
ডেমরার বাসিন্দা ফাতেমা আক্তার বলেন, ‘বর্জ্য এবং জলাবদ্ধতার কারণে শুকনো মৌসুমে এই এলাকায় মশা-মাছির যন্ত্রণা বেড়ে যায়। সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ আমাদের এলাকা পরিষ্কার রাখতে সঠিকভাবে কাজ করে না। এমনকি তারা নিয়মিত মশা নিধনের ওষুধও স্প্রে করে না।’
ডিএসসিসির আওতাধীন ৬৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সালাউদ্দিন আহমেদ ইউএনবিকে বলেন, নতুন ওয়ার্ড হলেও, এই এলাকায় বর্জ্য নিষ্পত্তি করার কোনো ব্যবস্থা নেই।
তিনি বলেন, ‘গৃহস্থালির বর্জ্যগুলো ঘরবাড়ি, পুকুর, খাল বা রাস্তার পাশে যেখানে সেখানে ফেলে দেয়া হয়। এছাড়া বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডের কারখানার বর্জ্য নীচু জায়গা হিসাবে মির পাড়া রাস্তার পাশে ফেলা হয়।’
তবে ডিএসসিসির কর্মকর্তারা বিষয়টি জানেন এবং সিটি করপোরেশন শিগগিরই বর্জ্য অপসারণ করার উদ্যোগ গ্রহণ করবে বলে জানান সালাউদ্দিন।
ডেমরা, শ্যামপুর, দনিয়া, মাতুয়াইল, সরুলিয়া, মান্ডা, দক্ষিণগাঁও এবং নাসিরাবাদ ইউনিয়ন সম্প্রতি ডিএসসিসিতে যুক্ত হয়েছে।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে ডিএসসিসির আওতাধীন ৭০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আতিকুর রহমান ইউএনবিকে বলেন, তারা জানেন না যে কে এই এলাকার রাস্তার পাশে ক্ষতিকারক পলিথিনসহ অন্যান্য বর্জ্য ফেলছে।
তিনি বলেন, ‘যদিও আমরা ঢাকা-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান মোল্লার নির্দেশনায় জায়গা না পেয়ে স্থানীয়দের নীচু জমিতে ঘর-বাড়ির বর্জ্য ফেলার অনুমতি দিয়েছিলাম। তবে সেখানে ক্ষতিকারক প্লাস্টিকের বর্জ্য কে বা কারা ফেলছে তা আমরা জানি না।’
বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়ায় গতি আনতে সিটি করপোরেশন সম্প্রতি ডেল্লা ও দুর্গাপুর এলাকায় দুটি বিকল্প এসটিএস স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে বলেও জানান আতিকুর।
‘শুধু ডেমরা নয়, পুরো রাজধানীতেই মশা-মাছির উপদ্রব বেড়েছে। আমার ওয়ার্ডে প্রতিদিন মশা নিধন ওষুধ ছিটানো হচ্ছে,’ বলেন তিনি।
এনভায়রমেন্ট অ্যান্ড সোস্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের (এসডো) মহাসচিব ড. শাহরিয়ার হোসেন বলেন, যেখানে সেখানে বর্জ্য ফেলা হলে পরিবেশ এবং জনস্বাস্থ্যের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে। এছাড়া বর্জ্য পোড়ানো হলে একটি বিপজ্জনক গ্যাস নির্গত হয়।
তিনি বলেন, ‘মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করা উচিত যাতে তারা যত্রতত্র বর্জ্য বা ময়লা না ফেলে। এ ক্ষেত্রে আইনের প্রয়োগ অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।’
পরিবেশ রক্ষায় যথাযথ বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কেন্দ্রের প্রয়োজনীয়তার বিষয়টির ওপরও গুরুত্বারোপ করেন শাহরিয়ার।