অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ অর্থ বিভাগের মধ্যমেয়াদী সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতিবিবরণী (২০২৩-২৪ থেকে ২০২৫-২৬) অনুযায়ী, ২০২৫-২৬ অর্থবছরের শেষ নাগাদ জিডিপির ১১ দশমিক ২ শতাংশ রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার।
এতে বলা হয়, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি, দারিদ্র্য বিমোচন এবং সামাজিক ফলাফলের উন্নয়নে বাংলাদেশ ধারাবাহিকভাবে একটি পরিমিত বাজেট ঘাটতি ( সাধারণত জিডিপির প্রায় ৫ শতাংশ ) বজায় রেখে একটি সম্প্রসারণমূলক রাজস্ব অবস্থান বজায় রেখেছে।
এছাড়া বাংলাদেশে কর-জিডিপি অনুপাত তার সমকক্ষদের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে কম। এজন্য সরকার রাজস্ব সংগ্রহের উন্নতির জন্য বেশ কয়েকটি উদ্যোগ নিয়েছে।
তবুও এটি বলেছে, জিডিপি প্রবৃদ্ধির দ্রুত গতি অনুপাত বাড়ানোকে চ্যালেঞ্জিং করে তুলেছে।
যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তাতে করের পরিমাণ ও করদাতার সংখ্যা উভয়ই বৃদ্ধি করে রাজস্ব আদায় ধীরে ধীরে বাড়বে হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, সরকারি ব্যয় নীতিমালার প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে অবকাঠামো নির্মাণ ও ব্যবসায়িক পরিবেশ উন্নয়নের মাধ্যমে বেসরকারি বিনিয়োগকে উৎসাহিত করা, কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি। এছাড়া সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচির মাধ্যমে নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠীকে সহায়তা করা এবং সম্পদের দক্ষ পুনর্বণ্টন নিশ্চিত করার মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচন এবং এভাবেই অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন নিশ্চিত করা।
আরও পড়ুন: জাতীয় নির্বাচনের পর বাংলাদেশের অর্থনীতি চাঙ্গা হবে: বিএসইসি চেয়ারম্যান
কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাবের সঙ্গে সঙ্গে সরকার জীবনযাত্রার মান হ্রাস থেকে রক্ষা করার পাশাপাশি জীবন বাঁচানোর দিকে মনোনিবেশ করতে শুরু করে।
এতে বলা হয়, এ জন্য সরকার কর্মসংস্থান বজায় রাখা, আয় সহায়তা প্রদান, সরবরাহ শৃঙ্খল সচল রাখা, গ্রামীণ অর্থনীতিকে পুনরায় সক্রিয় করা এবং খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করার ওপর জোর দিয়েছে।
এজন্য সরকার ব্যয় বৃদ্ধি করে এবং ২৮টি প্রণোদনা প্যাকেজের মাধ্যমে ব্যাপক পুনরুদ্ধার কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে।
প্রণোদনা প্রচেষ্টা ভাল কাজ করেছিল এবং ফলস্বরূপ অর্থনীতি দ্রুত উচ্চ প্রবৃদ্ধির পথে ফিরে এসেছিল যখন অন্যান্য দেশগুলো লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিল।
যাইহোক, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ আবারও যথেষ্ট ঝুঁকি তৈরি করেছে এবং ঝুঁকি হ্রাস করার জন্য সরকার অভ্যন্তরীণ উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির মাধ্যমে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে উৎসাহিত করার জন্য সরকারি ব্যয়কে যুক্তিসঙ্গত করার নীতি অনুসরণ করছে।
কল্যাণ ও উন্নয়ন সর্বাধিক করার জন্য অর্থনীতি পরিচালনার সময় সরকার মধ্যমেয়াদে জিডিপির প্রায় ৫ শতাংশ বাজেট ঘাটতি বজায় রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ঐতিহাসিকভাবে, রাজস্ব সংগ্রহ এবং বাজেট বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার কারণে বাংলাদেশে জিডিপির তুলনায় সরকারি ব্যয়ের আকার কম ছিল।
পরিস্থিতির উন্নতির জন্য সরকারি ব্যয় বাড়ানোর জন্য কিছু কৌশল গ্রহণ করেছে সরকার।
২০২৫-২৬ অর্থবছরে সরকারি ব্যয় বৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে জিডিপির প্রায় ১৬ দশমিক ২ শতাংশ।
তাছাড়া, সরকার এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য পাবলিক ফাইন্যান্সিয়াল ম্যানেজমেন্ট (পিএফএম) সংস্কার প্রক্রিয়া অনুসরণ করছে।
সামগ্রিক জনসেবা প্রদান, বাজেট বরাদ্দের আর্থিক নিয়ন্ত্রণ, বাজেট বাস্তবায়নের রিয়েল-টাইম মনিটরিং এবং পুনরাবৃত্ত ও মূলধন ব্যয়ের সংহতকরণের জন্য পিএফএম অ্যাকশন প্ল্যান (২০১৮-২৩) বাস্তবায়ন চলমান রয়েছে এবং সংশোধিত পিএফএম সংস্কার কর্মপরিকল্পনা (২০২৪-২০২৮) সম্প্রতি প্রণয়ন করা হয়েছে।
পিএফএম সংস্কারের আওতায় পেনশন অটোমেশন এবং ই-চালান অটোমেশন সিস্টেমগুলো আইবিএএস ++ সফ্টওয়্যারের সাহায্যে চালু করা হয়েছে।
এই ব্যবস্থা বাজেট ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়া সহজীকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে। একই সঙ্গে আইবিএএস++ সফটওয়্যারের সাহায্যে গভর্নমেন্ট টু পারসন (জিটুপি) পেমেন্ট সিস্টেমের আওতায় আনা হচ্ছে, যা সরকারি ব্যয় ব্যবস্থাপনায় আরও স্বচ্ছতা আনবে।
এ ছাড়া সরকারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সব প্রতিষ্ঠানের সব সরকারি বরাদ্দ মধ্যমেয়াদে আইবিএএস++ পদ্ধতির মাধ্যমে ট্রেজারি সিঙ্গেল অ্যাকাউন্টের (টিএসএ) আওতায় আনা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির হার কমিয়ে ৬ শতাংশ করেছে আইএমএফ