বৈশ্বিক তাপমাত্রা ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে কমিয়ে আনা এবং ১০০ বিলিয়ন ডলার অর্থায়নের ব্যাপারে এবারের কপ-২৬ সম্মেলনে ঐক্যমতে পৌঁছানোর আশা প্রকাশ করছে সম্মেলনে অংশ নেয়া বাংলাদেশের প্রতিনিধিদল ও জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা।
শনিবার কপ-২৬ সম্মেলনের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী শাহাব উদ্দিন ইউএনবিকে বলেন, আমি মনে করছি এবারের কপ-২৬ সম্মেলনে কিছুটা হলেও সফলতা অর্জন করতে পারবো।
মন্ত্রী বলেন, উন্নত দেশগুলো বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখা ও প্রতিশ্রুত ১০০ বিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণের অর্থায়নের বিষয়ে মোটামুটি একমত। যদিও দুই একটি দেশ বিষয়টি চাচ্ছে না, তবে আলোচনা পজেটিবলি এগুচ্ছে। আশা করছি শেষ পর্যন্ত এটিও ঠিক হয়ে যাবে।
তিনি আরও বলেন, ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামে (সিভিএফ) এ আমরা আমাদের লক্ষ্য তুলে ধরেছি। আশা করছি আমরা আমাদের কাঙ্ক্ষিত সফলতা অর্জন করতে পারব। আমাদের সাথে আরও ১৩টি দেশ যুক্ত হয়েছে।
মন্ত্রী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় শীর্ষে থাকা বাংলাদেশ। দূষণকারী দেশগুলোর ওপর চাপ প্রয়োগ এবং সিভিএফের নেতৃত্বে থাকায় কপ-২৬ সম্মেলনে কার্বন নিঃসরণ শূণ্যে নামিয়ে আনার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিকভাবে শক্ত অবস্থানে আছে।
আরও পড়ুন:বিশ্বকে ঐক্যবদ্ধ করার লক্ষ্যে কপ-২৬ শুরু
তিনি বলেন, উন্নত দেশগুলোর কাছে বাংলাদেশের জোর দাবি-তাপমাত্রা ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি অথবা ২ ডিগ্রিকে (সর্বোচ্চ) টার্গেট করে এনডিসি হালনাগাদকরণ, উন্নত দেশগুলোর কার্বন নিঃসরণের হার কমানো, সকল দেশের জলবায়ু পরিকল্পনা (এনডিসি, ন্যাপ, দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা) অনুযায়ী গ্রিনহাউজ গ্যাসের নির্গমন কার্যক্রমকে তরান্বিত করা।
শাহাব উদ্দিন বলেন, বাংলাদেশসহ যেসব দেশ জলবায়ু পরিবর্তনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত, তাদের দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টার ফসল প্যারিস চুক্তিতে ‘লস এন্ড ড্যামেজ’ এর স্বতন্ত্র অন্তর্ভুক্তি। উন্নত দেশগুলো যদিও খুব বেশি সদিচ্ছায় লস এন্ড ড্যামেজ নিয়ে আলোচনা করতে আগ্রহী না। কিন্তু বাংলাদেশ ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের নেতৃত্বে থাকায় এই ক্ষেত্রে আমরা জোরদার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
মন্ত্রী বলেন, উন্নত দেশগুলোর পক্ষ থেকে কার্বন নির্গমন কমানোর কাজে ব্যবহারের জন্য বছরে ১০০ বিলিয়ন ডলারের তহবিল তৈরি করার প্রতিশ্রুতি এসেছিল প্যারিস সম্মেলনে। কিন্তু এখনও এটি ফাইনাল হয়নি। ২০২০-২৪ সাল পর্যন্ত ৫০০ বিলিয়ন ডলারের রূপরেখা প্রণয়ন হবে (কোন দেশ কত পরিমাণ টাকা দেবে, কখন, কিভাবে দেবে)।২০২৫ সাল পরবর্তী অর্থায়ন লক্ষ্য নিয়ে আলোচনা ও রূপরেখা প্রণয়ন হবে।
এদিকে শুক্রবার গ্লাসগোর স্থানীয় সময় বিকালে বাংলাদেশ প্যাভিলিয়নে একটি সাইড ইভেন্টে মন্ত্রী বলেন, গত ২৬ আগস্ট বাংলাদেশ আপডেট এনডিসি ইউএনএফসিসিসিতে দাখিল করেছে। উক্ত এনডিসিতে ২০১২ সালকে বেস ইয়ার ধরা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের এনডিসি বাস্তবায়নে ২০৩০ সাল নাগাদ আনকন্ডিশনাল কন্ট্রিবিউশানে ৩২ বিলিয়ন এবং কন্ডিশনাল কন্ট্রিবিউশানের জন্য ১৪৩ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন হবে। একটি বিষয় উল্লেখ করা প্রয়োজন যে,বাংলাদেশ নিজস্ব তহবিল থেকে আনকন্ডিশনাল কন্ট্রিবিউশান এবং উন্নত বিশ্ব থেকে কারিগরি এবং আর্থিক সহায়তা পেলে কন্ডিশনাল কন্ট্রিবিউশান বাস্তবায়ন করা হবে।
আরও পড়ুন:কপ-২৬ এ বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
জলবায়ু সম্মেলন বিষয়ে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের সদস্য ও জলবায়ু বিশেষজ্ঞ ড. আতিকুর রহমান ইউএনবিকে বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশের মতো ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর অন্যতম ইস্যু হলো:ক্ষয় ও ক্ষতি বা লস এন্ড ডেমেজ, ১ দশমিক ৫ ডিগ্রির মধ্যে টেম্পারেচার এবং ১০০ বিলিয়ন অর্থায়ন। এসব বিষয়ে পজেটিভ আলোচনা চলছে। সম্মেলনে শেষ পর্যায়ে এ বিষয়ে অগ্রগতি হবে বলে আশা করছি।
বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধি দলের সদস্য ও এলডিসি গ্রুপের কো-অর্ডিনেটর জিয়াউল হক ইউএনবিকে বলেছেন, উন্নত দেশগুলো ২০২০ সাল থেকে ১০০ বিলিয়ন ডলার মোবিলাইজ এবং ডিস্টিবিউশন করার কথা ছিল। কিন্তু তারা বলছে, গত বছর করোনার জন্য দিতে পারেনি। এ বিষয়ে আলোচনা চলছে। আশা করছি ২০২১ সালের মধ্যেই ১০০ বিলিয়ন টাকা দেয়া শুরু হবে।
২০২০ সাল থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত মোট ৫০০ বিলিয়ন ডলার দেয়ার কথা রয়েছে। ২০২৬ সাল থেকে নতুন করে আরও বেশি ৩০০/৫০০ বিলিয়ন দেয়ার দাবি থাকতে পারে। এ বিষয়ে পরে আলোচনা হবে, আগে বকেয়া ১০০ বিলিয়নের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।
জলবায়ু সম্মেলনে গ্লাসগোতে অবস্থানরত বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার ইউএনবিকে বলেন,ক্ষতিপূরণ পাওয়ার জন্য জলবায়ু সম্মেলনের পরও ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে আন্তঃযোগাযোগের মাধ্যমে দায়ী রাষ্ট্রগুলোর ওপর চাপ প্রয়োগ করে যেতে হবে।